একজন সুস্থ, সুশিক্ষিত ও নৈতিকভাবে দৃঢ় শিশু গড়ে তোলার দায়িত্ব প্রথমত পড়ে বাবা-মায়ের উপর। সন্তানকে কেবল বড় করে তোলাই নয়, তাকে একজন “মানুষ” হিসেবে গড়ে তোলাই আসল কাজ। একটি পরিবার, সমাজ এবং একটি জাতি গঠনের মূল ভিত্তি হচ্ছে সঠিক মানুষ তৈরি। তাই সন্তানের ভিতর সততা, সহানুভূতি, আত্মনিয়ন্ত্রণ ও দায়িত্ববোধ গড়ে তোলার চেষ্টাই হওয়া উচিত প্রতিটি পিতামাতার প্রধান লক্ষ্য।
মানবিক গুণাবলি যেমন: সত্যবাদিতা, পরোপকার, সহানুভূতি, ভদ্রতা, দায়িত্ববোধ ইত্যাদি ছোটবেলা থেকেই শেখাতে হবে। শিশুরা যেহেতু দেখেই বেশি শেখে, তাই বাবা-মাকে নিজেই হতে হবে তার আদর্শ। আপনি যদি ঘরে ছোটদের সম্মান করেন, সত্য বলুন, নিয়ম মেনে চলেন—শিশুও তা অনুকরণ করবে।
শিশুদের শুধু খাওয়ানো বা পোশাক পরানোই যথেষ্ট নয়। তাদের সাথে সময় কাটাতে হবে। শিশুর কথা মনোযোগ দিয়ে শুনুন, তার ভাবনা জানুন এবং যৌক্তিক আলোচনা করুন। এতে তার আত্মবিশ্বাস বাড়বে এবং সঠিক-ভুল বাছাই করার ক্ষমতা তৈরি হবে।
শুধু শাসন বা শুধু ভালোবাসা নয়, দুটোই হতে হবে সঠিক মাত্রায়। ভুল করলে শাস্তি নয়, বরং বুঝিয়ে বলুন কেন ভুলটা ভুল। আবার ভালো কিছু করলে উৎসাহ দিন, প্রশংসা করুন। এতে শিশু বুঝবে কোন আচরণ সমাজের গ্রহণযোগ্য।
শুধু পাঠ্যবই নয়, শিশু যেন প্রকৃতি, সমাজ ও বাস্তব জীবনের শিক্ষা পায়, সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। বই পড়ার অভ্যাস, প্রশ্ন করার স্বাধীনতা, তথ্যভিত্তিক আলোচনার পরিবেশ শিশুর চিন্তাশক্তি বাড়িয়ে তোলে। তাকে সবসময় শেখার জন্য উৎসাহিত করুন।
আজকের শিশুরা প্রযুক্তির মাঝে বড় হচ্ছে। মোবাইল-ইন্টারনেট তাদের জীবনের অঙ্গ হয়ে উঠেছে। কিন্তু এর অপব্যবহার থেকে দূরে রাখতে হলে বাবা-মাকে সচেতন হতে হবে। সময়সীমা নির্ধারণ করে দেওয়া, বিকল্প সৃজনশীল কাজের সুযোগ তৈরি করাও জরুরি।
সন্তানকে সমাজের বাস্তবতা ও দায়িত্বের সাথে পরিচিত করা দরকার। বৃদ্ধদের সম্মান, প্রতিবেশীর প্রতি সহানুভূতি, অসহায়ের পাশে দাঁড়ানো—এসব মানবিক দিকগুলো ধর্মীয় ও সামাজিক কার্যক্রমের মধ্য দিয়েই গড়ে তোলা সম্ভব।
সন্তান মানুষ বলেই ভুল করবে, ব্যর্থতাও আসবে। সেসময় তাকে বকা না দিয়ে পাশে দাঁড়ান, তাকে বোঝান, ভুল থেকে শেখার সুযোগ দিন। এতে সন্তান ভরসা করতে শিখবে, জীবনে বারবার ঘুরে দাঁড়াতে পারবে।
সবশেষে বলা যায়, সন্তান মানুষ করাটা কোনো একদিনের কাজ নয়। এটি ধৈর্য, বোঝাপড়া এবং ধারাবাহিকতার একটি দীর্ঘ পথ। একজন প্রকৃত মানুষ গড়ে তোলার জন্য প্রয়োজন ভালোবাসা, সময়, সদিচ্ছা এবং সঠিক দিকনির্দেশনা। সন্তান আপনার আয়না, আপনি যেমন হবেন, ভবিষ্যতে সেও অনেকটা তেমনই হবে। তাই আগে নিজেকে মানুষ করে তুলুন, তবেই আপনি আপনার সন্তানকে মানুষ বানাতে পারবেন।