কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) : উন্নয়নের সোপান না ধ্বংসের আশঙ্কা ?

লেখক: দেলোয়ার হোসাইন মাহদী
প্রকাশ: ৪ সপ্তাহ আগে

বর্তমান বিশ্বে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (Artificial Intelligence – AI) এক নতুন প্রযুক্তিগত বিপ্লব ও সম্ভাবনার নাম। প্রযুক্তির এই অভূতপূর্ব অগ্রগতি একদিকে যেমন মানুষের জীবনযাত্রাকে করেছে সহজ, গতিময় ও দক্ষ, অন্যদিকে তেমনি সৃষ্টি করছে নানা প্রশ্ন, সংশয় ও শঙ্কা। তাহলে কি AI আমাদের ভবিষ্যৎকে অনিশ্চয়তার দিকে ঠেলে দিচ্ছে ? নাকি এটি উন্নয়নের এক নতুন দুয়ার খুলে দিচ্ছে ?

 

AI-এর সম্ভাবনা : বদলে যাচ্ছে জীবনযাত্রা –

 

আমরা দেখতে পাচ্ছি আজকের বিশ্বে AI-এর প্রভাব সর্বত্র ছড়িয়ে পড়েছে। চিকিৎসা, শিক্ষা, কৃষি, নিরাপত্তা, শিল্পকলা—প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রে AI আনছে যুগান্তকারী পরিবর্তন।

 

চিকিৎসা খাতে : ডাক্তাররা জটিল রোগ নির্ণয়ে AI নির্ভর অ্যালগরিদম ব্যবহার করছেন, যা দ্রুত ও নিখুঁত বিশ্লেষণে সক্ষম।

 

কৃষিতে : কৃষকরা আবহাওয়া ও মাটির তথ্য বিশ্লেষণ করে নির্ভুলভাবে সঠিক সময় ও পদ্ধতিতে ফসল উৎপাদন করতে পারছেন।

 

শিক্ষায় : শিক্ষার্থীরা পাচ্ছেন ব্যক্তিকেন্দ্রিক, বুদ্ধিবৃত্তিক সহায়তাপূর্ণ ও প্রযুক্তিনির্ভর পাঠদান।

 

সৃজনশীলতায় : সাহিত্য, চিত্রকলা, সঙ্গীতসহ নানা শিল্পক্ষেত্রেও AI রাখছে অভাবনীয় অবদান।

 

আশার পাশাপাশি আশঙ্কাও :

 

তবে প্রতিটি প্রযুক্তিগত উন্নয়নের সঙ্গেই চলে আসে কিছু নেতিবাচক দিক ও ঝুঁকি, যা সমাজের গভীরে প্রভাব ফেলে।

 

কর্মসংস্থান : অনেক পুনরাবৃত্তিমূলক কাজ ইতোমধ্যেই মানুষের বদলে রোবট ও অ্যালগরিদম দ্বারা প্রতিস্থাপিত হচ্ছে, যা কর্মসংস্থানের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।

 

গোপনীয়তা লঙ্ঘন : নজরদারি প্রযুক্তির অপব্যবহার বাড়ছে, যা ব্যক্তিগত স্বাধীনতা ও গোপনীয়তা হ্রাসের আশঙ্কা সৃষ্টি করছে।

 

ভুল তথ্যের বিস্তার : AI-এর মাধ্যমে তৈরি ভুয়া ছবি, ভিডিও ও তথ্য সমাজে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করছে, যা গণমানুষ ও সত্যের প্রতি আস্থা নষ্ট করছে।

 

প্রতিটি জিনিসের দায়িত্বশীল ব্যবহার ভবিষ্যতের চাবিকাঠি :

 

এই দ্বিধাপূর্ণ বাস্তবতায় আমাদের ভাবার সময় এসেছে—আমাদের করণীয় কী?

উত্তর হলো : (ক) AI-এর মানবিক, নৈতিক ও দায়িত্বশীল ব্যবহার নিশ্চিত করা।

 

(খ) প্রয়োজন সঠিক ও বাস্তবভিত্তিক নীতিমালা, যা প্রযুক্তির সীমা ও সম্ভাবনা উভয়কেই সঠিকভাবে নিয়ন্ত্রণ করবে।

 

(গ) প্রযুক্তির ব্যবহারে থাকতে হবে স্বচ্ছতা, নৈতিকতা ও মানবকল্যাণের অঙ্গীকার।

 

(ঘ) শিক্ষা ও সচেতনতায় গুরুত্ব দিয়ে ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে প্রস্তুত করতে হবে একটি প্রযুক্তি-সচেতন সমাজ গড়ার লক্ষ্যে।

 

উপসংহার : আমরা কেমনভাবে দেখছি AI-কে ?

 

AI নিজে কোনো সিদ্ধান্ত নেয় না। সিদ্ধান্ত নেয় মানুষ। তাই এই প্রযুক্তি আমাদের জন্য আশীর্বাদ হবে নাকি অভিশাপ, তা নির্ভর করছে আমাদের ব্যবহারের ওপর।

 

সঠিক দিকনির্দেশনা, নৈতিক ব্যবহার ও মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি থাকলে AI আমাদের ভবিষ্যৎকে করে তুলতে পারে আলোকিত ও সমৃদ্ধ।

অতএব আসুন, আমরা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে নিজেদের অগ্রগতির মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করি—ইসলাম, দেশ ও জাতির কল্যাণে অবদান রাখি।

 

কারণ প্রযুক্তি কখনোই পক্ষপাতদুষ্ট নয়। আমরা যেভাবে তা ব্যবহার করব, প্রযুক্তিও ঠিক সেভাবেই আমাদের সমাজ গড়বে, কিংবা ভাঙবে।

 

দেলোয়ার হোসাইন মাহদী (আলেম সাংবাদিক)

📧islamicreports@gmail.com