W3Schools.com  

কৃষি ব্যাংকের প্রভাবে বেড়েছে খেলাপি ঋণ

লেখক:
প্রকাশ: ৫ মাস আগে

চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের (বিকেবি) প্রায় সাড়ে ৫০০ কোটি টাকার খেলাপি ঋণ বেড়েছে। এর প্রভাব পড়েছে পুরো কৃষি খাতে। অন্য ব্যাংকের ফলাফল ভালো হওয়ার পরও সার্বিক কৃষি খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ বেড়েছে। জানুয়ারিতেই এ খাতে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ৫৫৮ কোটি টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা যায়।

 

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, গত ডিসেম্বর পর্যন্ত কৃষি ব্যাংকের খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ৯৯৩ কোটি টাকা। চলতি বছরের জানুয়ারি শেষে এ অঙ্ক দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৫৪৪ কোটি টাকায়। অর্থাৎ মাসের ব্যবধানে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ৫৫১ কোটি টাকা।

 

এ বিষয়ে কৃষি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. শওকত আলী খান বলেন, ‘কৃষি ব্যাংকের বর্তমান পরিস্থিতি খুব ভালো। পুরোনো যেসব সমস্যা ছিল তা সমাধানের মাধ্যমে আমরা দৃশ্যমান পরিবর্তন আনতে সক্ষম হয়েছি। সাধারণত তিন মাস পরপর শ্রেণিকৃত ঋণের হিসাব চূড়ান্ত হয়। মাসিকভিত্তিতে যে তথ্য তৈরি করা হয়েছে, সেখানে সংখ্যাগত ভুল আছে কি নাÑসেটি পরীক্ষা করে দেখব।’

 

তিনি বলেন, ‘কৃষি ব্যাংকের শ্রেণিকৃত ঋণের হিসাবপদ্ধতি এখনও ম্যানুয়াল হয়, এটাকে অটোমেটেড করার প্রক্রিয়া চলছে। এটি সম্পন্ন হলে কোনো ভুল থাকবে না।’

 

এদিকে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের বিরুদ্ধে কারসাজির মাধ্যমে ৩ হাজার ১১৮ কোটি টাকার খেলাপি ঋণ গোপন করাসহ বেশ কিছু অনিয়মের তথ্য পেয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

 

জানা যায়, কৃষি ব্যাংকের ২০২৩-এর জুনভিত্তিক কেন্দ্রীয় ব্যাংকে মোট খেলাপি ঋণের পরিমাণ দেখিয়েছে ৩ হাজার ৩১৫ কোটি টাকা। কিন্তু পরিদর্শনে দেখা যায়, প্রকৃতপক্ষে তা ৬ হাজার ৫০৩ কোটি টাকা।

 

প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি বছরের জানুয়ারির শেষে কৃষি খাতে বিতরণকৃত ঋণ স্থিতি দাঁড়িয়েছে ৫৫ হাজার ৬৩৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপি ঋণের স্থিতি দাঁড়িয়েছে ৪ হাজার ৩৬৬ কোটি টাকা বা ৭ দশমিক ৭৯ শতাংশ। আর গত ডিসেম্বর শেষে কৃষি খাতে ঋণ স্থিতি ছিল ৫৫ হাজার ৩৯৫ কোটি টাকা। ওই সময়ে খেলাপি ঋণের স্থিতি ছিল ৩ হাজার ৭৭৮ কোটি টাকা। অর্থাৎ এক মাসের ব্যবধানে ঋণ বেড়েছে ২৪০ কোটি টাকা। অন্যদিকে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ৫৫৮ কোটি টাকা।

 

জানা যায়, কৃষি খাতের খেলাপি ঋণের মধ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোয় রয়েছে প্রায় ৩ হাজর ৮০৪ কোটি টাকা, যা মোট ঋণের ১০ দশমিক ২২ শতাংশ। বেসরকারি খাতের ব্যাংকগুলোয় রয়েছে ৫৩২ কোটি বা ২ দশমিক ৮৯ শতাংশ।

 

প্রতিবেদনে দেখা যায়, চলতি অর্থবছরের প্রথম ৭ মাসে (জুলাই-জানুয়ারি) পর্যন্ত ২১ হাজার ১৫৩ কোটি টাকার ঋণ বিতরণ করেছে ব্যাংকগুলো; যা লক্ষ্যমাত্রার ৬০ দশমিক ৪৪ শতাংশ। চলতি অর্থবছরের প্রথম সাত মাসের বিতরণকৃত ঋণ তার আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে ২ হাজার ৪৬৯ কোটি টাকা বেশি। গত অর্থবছরের একই সময়ে বিতরণকৃত ঋণের পরিমাণ ছিল ১৮ হাজার ৬৮৪ কোটি টাকা।

 

 

এদিকে জানুয়ারিতে কৃষিঋণ বিতরণ কমেছে। ২০২৪ সালের জানুয়ারি মাসে খাতটিতে ২ হাজার ৮২৭ কোটি টাকার ঋণ বিতরণ করা হয়েছে। তার আগের মাসে (ডিসেম্বর) ৩ হাজার ৪৬ কোটি টাকা ঋণ বিতরণ করা হয়। অর্থাৎ এক মাসের ব্যবধানে এ খাতে ঋণ বিতরণ কমেছে ২১৮ কোটি টাকা। এর আগে নভেস্বর মাসে বিতরণ হয়েছিল ৩ হাজার ৩১৯ কোটি টাকা। সে হিসেবে ডিসেম্বর এই খাতে ঋণ বিতরণ কমেছিল ২৭৩ কোটি টাকা। পরপর দুই মাস কমল কৃষি ঋণ বিতরণ।

 

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জুলাই-ডিসেম্বর সময়ে ব্যাংকগুলো কৃষি ঋণের ২০ হাজার ৩১০ কোটি টাকা আদায় করেছে। এর আগের অর্থবছরের একই সময়ে আদায়ের পরিমাণ ছিল ১৮ হাজার ৪৪৬ কোটি টাকা। আগের বছরের তুলনায় ঋণ পরিশোধ বেড়েছে ১ হাজার ৮৬৪ কোটি টাকা।

 

চলতি অর্থবছরে বাংলাদেশ ব্যাংকের বার্ষিক কৃষি ও পল্লিঋণ বিতরণের লক্ষ্য ঠিক করেছে ৩৫ হাজার কোটি টাকা, যা গত অর্থবছরের চেয়ে ১৩ দশমিক ৬০ শতাংশ বেশি। গত অর্থবছর কৃষি ঋণের লক্ষ্য ছিল ৩০ হাজার ৮১১ কোটি টাকা।

 

তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের প্রথম ৭ মাসে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে ৭ হাজার ৫৫১ কোটি টাকার কৃষিঋণ বিতরণ হয়েছে। যার পরিমাণ পুরো অর্থবছরের লক্ষ্যমাত্রার ৬২ দশমিক ৭৭ শতাংশ। অন্যদিকে বেসরকারি ব্যাংকের মাধ্যমে ১৩ হাজার ৬০২ কোটি টাকা বিতরণ করা হয়েছে, যা তাদের পুরো অর্থবছরের লক্ষ্যমাত্রার ৫৯ দশমিক ২২ শতাংশ।

 

ফসলের মৌসুমের ভিত্তিতে সারাবছর সমান হারে কৃষিঋণ দেয়ার নির্দেশ রয়েছে। এরপরও

 

কয়েকটি ব্যাংকঋণ বিতরণে পিছিয়ে রয়েছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে ১১টি ব্যাংক লক্ষ্যমাত্রার ৩০ শতাংশ কম ঋণ বিতরণ করেছে।

 

বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা অনুযায়ী ব্যাংকগুলোকে মোট ঋণের মধ্যে ন্যূনতম ২ শতাংশ কৃষি ঋণ বিতরণ করতে হয়। কোনো ব্যাংক লক্ষ্য পূরণে ব্যর্থ হলে ওই ব্যাংককে জরিমানা গুনতে হয়।

 

অপরদিকে কম সুদে কৃষকদের হাতে ঋণ পৌঁছাতে এবার ক্ষুদ্র ঋণদাতা সংস্থার (এমএফআই) ওপর বেসরকারি ব্যাংকের নির্ভরশীলতা আরও কমিয়ে আনা হচ্ছে। আর এজন্য ব্যাংকের নিজস্ব নেটওয়ার্কের মাধ্যমে অন্তত ৫০ শতাংশ কৃষিঋণ বিতরণ বাধ্যতামূলক করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক, যা এতদিন ছিল ৩০ শতাংশ। এ ছাড়া কৃষিঋণের কত অংশ কোন খাতে দিতে হবে, তাও নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে।

 

চলতি অর্থবছরের জন্য প্রণীত কৃ?ষিঋণ নীতিমালায় বলা হয়, ভবনের ছাদে বিভিন্ন কৃষিকাজ করা একটি নতুন ধারণা। বর্তমানে শহরাঞ্চলে যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। মূলত বাড়ির ছাদে বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতিতে ফুল, ফল ও শাকসবজির যে বাগান গড়ে তোলা হয় তা ছাদবাগান হিসেবে পরিচিত।

ইমি/পথিক নিউজ

  • কৃষি ব্যাংকের
  • খেলাপি ঋণ