ইসলামের ইতিহাস ও হাদিসে কিয়ামতের বহু নিদর্শনের কথা উল্লেখ করা হয়েছে, যার মধ্যে অন্যতম রহস্যময় স্থান হল কোহে কাহাফ। কেউ একে নিছক একটি পাহাড় বা গুহা মনে করেন, আবার কেউ বলেন, এটি কিয়ামতের মহাসংকেতের এক গোপন কক্ষ, যেখানে লুকিয়ে আছে মানবজাতির ভবিষ্যৎ।
কোরআনের সূরা কাহাফে আল্লাহ সাতজন যুবকের কথা উল্লেখ করেছেন, যারা তাদের ঈমান রক্ষার জন্য একটি গুহায় আশ্রয় নিয়েছিলেন। আল্লাহ তাদেরকে তিন শতাধিক বছর ঘুমিয়ে রাখেন এবং পরে পুনর্জাগরিত করেন। অনেক গবেষক মনে করেন, এই গুহা ছিল বিশেষভাবে সংরক্ষিত এবং কিয়ামতের কিছু নিদর্শন এখানে লুকিয়ে রাখা হয়েছে।
হাদিস অনুসারে, ফেরেশতা ইস্রাফিল (আঃ) কিয়ামতের সিঙ্গা ফুৎকার দেবেন, যা সমগ্র সৃষ্টিকে ধ্বংস করবে। ইবনে কাসির (রহঃ) ও অন্যান্য ইসলামিক গবেষকের মতে, ইস্রাফিল (আঃ) এখনো সেই সিঙ্গা হাতে অপেক্ষা করছেন, এবং তিনি যখন আল্লাহর নির্দেশ পাবেন, তখন সেটি ফুৎকার দেবেন। কেউ কেউ ধারণা করেন, কোহে কাহাফ সেই পবিত্র স্থান, যেখান থেকে ইস্রাফিল (আঃ) কিয়ামতের দিন এই কার্য সম্পাদন করবেন।
হজরত জুলকারনাইন (আঃ)-এর কাহিনির সাথে ইয়াজুজ-মাজুজের বন্দিত্বের প্রসঙ্গ সরাসরি জড়িয়ে আছে। কোরআনের বর্ণনা অনুযায়ী, তিনি তাদের জন্য একটি বিশাল প্রাচীর নির্মাণ করেন, যা আজ পর্যন্ত তাদের আটক রেখেছে। ইসলামিক গবেষকরা বলেন, এই প্রাচীর কোনো পাহাড়ি গুহার পেছনে লুকিয়ে থাকতে পারে, এবং অনেকে মনে করেন, কোহে কাহাফের গভীর অন্ধকারেই এই অবরুদ্ধ জাতি আজও বন্দি রয়েছে। কিয়ামতের কাছাকাছি সময়ে যখন এই প্রাচীর ধসে পড়বে, ইয়াজুজ-মাজুজ বেরিয়ে এসে দুনিয়ায় ভয়ানক বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করবে।
কোহে কাহাফের প্রকৃত অবস্থান নিয়ে মতভেদ রয়েছে। কেউ বলেন, এটি বর্তমান জর্ডান বা সিরিয়ায় অবস্থিত, আবার কেউ ইরানের কোনো পার্বত্য অঞ্চলে এর অস্তিত্ব খোঁজেন। ইসলামিক ইতিহাসবিদগণ একমত যে, আল্লাহ ইচ্ছাকৃতভাবে এই স্থানের সঠিক চিহ্ন গোপন রেখেছেন, যাতে মানবজাতি এটিকে খুঁজে না পায় এবং কিয়ামতের সময় নির্ধারিত হলে এর ঘটনাগুলো নিজেই প্রকাশ পেতে পারে।
কোহে কাহাফ কি সত্যিই কিয়ামতের প্রস্তুতির এক রহস্যময় স্থান? নাকি এটি শুধুই এক কল্পনা? ইসলামিক গবেষণার আলোকে একে নিছক গল্প বলে উড়িয়ে দেওয়া যায় না। কোরআন ও হাদিসের আলোকে এটি এক ভয়ংকর সুন্দর ভবিষ্যতের সংকেত, যা এখনো আমাদের কাছে অজানা, রহস্যময় এবং অতীত ও ভবিষ্যতের এক সংযোগস্থল।