চাইলেই জাফরউল্লাহ চৌধূরী হতে পারতেন শীর্ষ পর্যায়ের একজন ধনী ব্যাক্তি, কিন্ত তা না হয়ে তিনি হয়ে উঠেছেন গরিবের বন্ধু।
সাধারণ মানুষের বন্ধ, গরিবের ফেরিওয়ালা জাফরউল্লাহ চৌধূরী আর আমাদের মাঝে নেই। মঙ্গলবার রাত সোয়া এগারোটায় ঢাকার গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতালে তিনি শেষ নি:শ্বাস ত্যাগ করেন।
তিনি দীর্ঘদিন ধরে কিডনি সমস্যায় ভুগছিলেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮১ বছর।
তিনি ছিলেন একাধারে একজন চিকিৎসক, জনস্বাস্থ্য সক্রিয়তাবাদী রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব এবং মুক্তিযোদ্ধা। তিনি গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র নামক স্বাস্থ্য বিষয়ক এনজিওর প্রতিষ্ঠাতা।[৫] ১৯৮২ সালে প্রবর্তিত বাংলাদেশের ‘জাতীয় ঔষধ নীতি’ প্রণয়ন ও ঘোষণার ক্ষেত্রে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।
উনিশশো একচল্লিশ সালের ২৭শে ডিসেম্বর চট্টগ্রামের রাউজানে জন্মগ্রহণ করা জাফরুল্লাহ চৌধুরী ছিলেন পরিবারে দশ ভাই-বোনের মধ্যে সবার বড়।
চাইলেই জাফরউল্লাহ চৌধূরী হতে পারতেন শীর্ষ পর্যায়ের একজন ধনী ব্যাক্তি, কিন্ত তা না হয়ে তিনি হয়ে উঠেছেন গরিবের বন্ধ
বিলেতের রয়্যাল কলেজ অব সার্জনস-এ এফআরসিএস পড়াকালীন বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরু হলে তিনি চূড়ান্ত পর্ব শেষ না-করে লন্ডন থেকে ভারতে ফিরে এসে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেয়ার নিমিত্তে আগরতলার মেলাঘরে প্রশিক্ষণ কেন্দ্র থেকে গেরিলা প্রশিক্ষণ নেন এবং এরপরে ডা. এম এ মবিনের সাথে মিলে সেখানেই ৪৮০ শয্যাবিশিষ্ট “বাংলাদেশ ফিল্ড হাসপাতাল” প্রতিষ্ঠা ও পরিচালনা করেন।[২][৭] তিনি সেই স্বল্প সময়ের মধ্যে অনেক নারীকে প্রাথমিক স্বাস্থ্য জ্ঞান দান করেন যা দিয়ে তারা রোগীদের সেবা করতেন এবং তার এই অভূতপূর্ব সেবাপদ্ধতি পরে বিশ্ববিখ্যাত জার্নাল পেপার “ল্যানসেট”-এ
সামরিক শাসকদের সময়েই স্বাস্থ্য নীতি, ঔষধ নীতি ও নারী শিক্ষা, এমনকি সে সময়ে সহজে দেশের মানুষের জন্য পাসপোর্টের ব্যবস্থা করতে সরকারকে রাজী করানো এবং প্রশাসনের বিকেন্দ্রীকরণে সরকারকে প্রভাবিত করতে তার ভূমিকা আলোচনায় এসেছে সবসময়।
তার দীর্ঘদিনের ঘনিষ্ঠ ও পারিবারিক বন্ধু ড: শাহদীন মালিক বলছে, জাফরুল্লাহ চৌধুরী ছিলেন একজন বিরল ধরণের নির্মোহ মানুষ।
"এক অর্থে অদ্ভূত মানুষ। ঢিলেঢালা শার্ট প্যান্ট। পুরোনা বাসায় আসবাবপত্র পুরনো। গাড়িটাও পুরনো। সব মিলিয়ে নির্মোহ একজন মানুষ। পাওয়ার কথা চিন্তা করেননি। নিজের জন্য কিছু চাননি।
"কিন্তু শেষ বিচারে তিনি জীবনে মানুষের শ্রদ্ধা ভালোবাসা সব পেয়েছেন। দেশ ও জাতির জন্য তার অবদান বলে শেষ করা যাবেনা"।
পঁচাত্তর সালে বাকশালের বিরোধিতা করেছেন আবার পরবর্তী কালে জেনারেল ওসমানী রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে দাঁড়ালে তিনি তার হয়ে কাজ করেছেন। পরে ঘনিষ্ঠ ছিলেন বিএনপি ও এর চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার সাথেও।
তবে বিতর্ক সমালোচনা যাই হোক জাফরুল্লাহ চৌধুরী স্বাস্থ্যখাত নিয়ে চিন্তা ও কর্মের পাশাপাশি বাংলাদেশের প্রধান দুই রাজনৈতিক দলের মধ্যে বিরোধ কমিয়ে এনে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার চেষ্টার জন্য প্রশংসিত হয়েছেন।
<p>সম্পাদক ও প্রকাশক: লিটন হোসাইন জিহাদ</p>
© PothikTV Media Center