বিশেষ প্রতিনিধি: ময়মনসিংহের হালিমা খাতুনের (৬৫) স্বামী মারা গেছেন প্রায় ২০ বছর আগে। স্বামীর রেখে যাওয়া বাড়িতে চার ছেলে ও এক মেয়ে নিয়ে বসবাস করে আসছিলেন। ছেলেরা বিয়ে করে আলাদা হয়ে যান। সম্প্রতি হালিমা জানতে পারেন তাঁর ভিটে বাড়ি বিক্রি করে দিয়েছেন এক ছেলে।
মানসিক প্রতিবন্ধী মেয়েকে নিয়ে এখন বেকায়দায় পড়েছেন হালিমা। তাঁর বাড়ি জেলার ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার রাজিবপুর ইউনিয়নের খুলিয়াচর গ্রামে। গত শুক্রবার বিকেলে বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, নিজের ঘর ছেড়ে পাশের বাড়ির এক বসতঘরের কাছে বসে কাঁদছেন হালিমা। কারণ জানতে চাইলে বলেন, ‘ঘরে কিবায় যাইয়াম।
এই ঘর বলে বেইচ্যালছে। ছেড়ার বউ দাউ লইয়া ডর দেহায়। ঘরে আইলে বলে কোবায়বো। আর ছেড়ায় কয় যেহানো মনে লয় যাইতামগা।
আমি অহন এই পাগলি ছেড়িডারে লইয়া কই যাইয়াম? আমার জমি ঘর ফিরাইয়া দেইন।’
প্রতিবেশীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রায় পাঁচ মাস আগে বাড়ির জায়গাসহ ভিটে প্রতিবেশী একজনের কাছে বিক্রি করে দিয়েছেন হালিমার ছোট ছেলে রিপন মিয়া (৩৫)। হালিমা ভিটে ছাড়তে না চাইলে ছেলে ও ছেলের বউ টেনেহিঁচড়ে ঘর থেকে বের করে দেন কয়েকবার। এখন ওই বৃদ্ধা নিরাপত্তাহীনতায় আছেন।
প্রতিবেশীরা জানান, চার ছেলে ও দুই মেয়ের মধ্যে হালিমার এক ছেলে ও মানসিক প্রতিবন্ধী মেয়ে বাড়িতে থাকেন।
তিন ছেলে দীর্ঘদিন ধরে ঢাকার বিভিন্ন জায়গায় বসবাস করে কাজ করছেন। ছোট ছেলে রিপন বাড়িতে থাকেন। গত মে মাসে হালিমার বড় ছেলে সাইফুল ইসলাম জানতে পারেন তাঁর মায়ের নামে থাকা বাড়ি ও বসতভিটার প্রায় ৬৫ শতক জমি ছোট ভাই রিপন একাই লিখে নিয়েছেন। বিষয়টি নিশ্চিত হতে স্থানীয় সাব-রেজিস্ট্রি অফিস থেকে নকল তুলে সত্যতা পান। গত ২১ মে ময়মনসিংহ সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট চার নম্বর আমলি আদালতে গিয়ে ছেলে রিপন মিয়া ও দলিল লেখক আবু বক্কর ছিদ্দিকের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন হালিমা।
মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে, হালিমাকে ঈশ্বরগঞ্জ নিয়ে জমির দাগ সংশোধনের কথা বলে রিপন বিভিন্ন স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর নেন। এর প্রায় সাত বছর পর জানা যায়, প্রতারণা করে হালিমার কাছে থেকে জমি ও ভিটে লিখে নেওয়া হয়েছে।
মামলার দুইদিন পরই রিপন মিয়া প্রায় ২৮ লাখ টাকায় ৬৫ শতক জমি প্রতিবেশী রনির কাছে বিক্রি করে দেন। এ বিষয়ে জানতে গেলে রিপন মিয়াকে বাড়িতে পাওয়া যায়নি। তাঁর স্ত্রী পপি আক্তার বলেন, ‘শাশুড়ি স্বেচ্ছায় আমার স্বামীকে জমি ও ভিটে লিখে দিয়েছেন।’ এ কথা শুনে পাশে থাকা হালিমা খাতুন প্রতিবাদ করেন। বলেন, ‘আজগোয়াও (আজ) আমারে মারছে। আমার চুলাডি ভাইঙ্গা দিছে।’
ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) হাফিজা জেসমিন বলেন, ‘বিষয়টি জানা ছিল না। সহকারী কমিশনারকে (ভূমি) ঘটনা খতিয়ে দেখতে বলবেন।’
সুত্র:কালেরকন্ঠ
<p>সম্পাদক ও প্রকাশক: লিটন হোসাইন জিহাদ</p>
© PothikTV Media Center