মুজিবুর রহমান পথিক: কবি তাঁর বইটিতে অত্যন্ত সুন্দরভাবে মানুষের জীবনের সাথে সম্পৃক্ত প্রায় সব কিছু তুলে ধরতে চেষ্টা করেছেন। তিতাস পাড়ের কবি এস এম শাহনূরের স্বর্গছায়া কাব্যগ্রন্থ পাঠে আমি বিমোহিত। কী নেই কবির কবিতায়? তিনি বাল্য, কৈশোর,যৌবনের স্মৃতি; আনন্দ এবং বিদেশের অভিজ্ঞতার কথা বলেছেন। তিনি বলেছেন মা, মাটি এবং দেশের কথা। বইটিতে ফুটে উঠেছে প্রকৃতির কথা, গ্রাম বাংলার নানাবিধ ঘটনার কথা। গুণ গান করেছেন গুণীজন, লেখক, কবি, স্মরণীয় এবং বরণীয় দেশ বরেণ্য ব্যক্তিদের কথা। তিনি বলেছেন সৃষ্টিকর্তার কথা। মানবিক মানুষের কথা। ইহকাল ও পরকালের সফলতার কথা। তিনি বলেছেন নারীদের প্রতি প্রেম প্রীতি-ভালোবাসার কথা। বলেছেন দেশ প্রেমের কথা।
কবিতার কিছু বর্ণনা: আজি হতে শতবর্ষ আগে খোকার জন্ম হল বাঙালির প্রাণে বঙ্গবন্ধু , দুনিয়া বিশ্ববন্ধু বল। (কবিতা-খোকার জন্মদিন)। সুপ্রাচীন কাল থেকে অসাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির তীর্থ ভূমি ব্রাহ্মণবাড়িয়া উপমহাদেশের এক অনন্য সাংস্কৃতিক রাজধানী। (কবিতা-ব্রাহ্মণবাড়িয়া আমার অহংকার)। বৈশাখে মন পড়ে রয় বটতলীর ঐ মেলায় সখা সখি গিয়েছিনু জড়াজড়ি ধরি গলায়। (কবিতা-বটতলীর মেলা)। তুমি ভেজাল হলে আমিও পুরো ভেজাল নির্ভেজালের হিসাব নিকাশ করবে মহাকাল (কবিতা-ভেজাল)। পাপাত্মা নারীর ভুলের বেড়াজাল থেকে নারীর পদতলে জান্নাত খুঁজে মহা পুরুষ। (কবিতা-কিংকরী)। শুদ্ধ আত্মার বৃক্ষ দেয় বিশুদ্ধ বায়ু ফলে বল, ফুলে সুরভী, বাড়ে আয়ু। (কবিতা-এসো বৃক্ষতলে)। বন্যরা বনেই আছে, মানুষ খেকো মনু তিলে তিলে করেছে পৃথিবীর সর্বনাশ। (কবিতা-নাস্তিক)। অনুভবের প্রেম, দেহের সনে নেই কারবার আমার তো তুমি ছাড়া নেই কোনো ইলাহ; ( কবিতা-প্রেম)। কেউ থাকো গাঁ গেরামে কেউবা নগরে অহিংস মনোভাব থাকুক সবার অন্তরে। (কবিতা-নির্বাচনী হাওয়া)। দুনিয়াবি অর্জন দুশ্চিন্তার কারণ মরণ একদিন সব-ই করবে হরণ। (কবিতা-মরণ)। যদি নাহি পাই তব রহমত মাগফিরাত নাজাত বৃথা এ জীবন বৃথা দুনিয়াবি হায়াত। (কবিতা-রমজানুল মোবারক)।
আমার জন্য খোঁড়া হবে সাড়ে তিন হাত কবর পাকা বাড়ির মোহে কিরে ভুলেছি নিজের ঘর। (কবিতা-কবর)। লক্ষ প্রাণের বিনিময়ে এ স্বাধীনতা কেমনে ভুলিব এমন ত্যাগের কথা। (কবিতা-দেশ)। পচা কাদার শুকনো ঠনঠনে মাটির মূর্তি ! ভিতরে স্রষ্টার সত্তা, ষড়রিপুর প্ররোচনা, অধরে রূপের জৌলুস কেমনে থাকে হুঁশ। (কবিতা-মানুষ ও মানব)। কোরআন পুরাণ বাইবেল চষে কী লাভ ? মানুষ হয়ে মানুষেরে ঘৃণা এ যে মহাপাপ। (কবিতা-মহাপাপ)। গাঁয়ের মায়ায় যোগী ভিন দেশে ন‘ যায় ভিক্ষার ঝুলি কাঁধে বারেক ফিরে যায়। (কবিতা-গেঁয়ো যোগী ভিক্ষা পায় না)। সহসা সত্যালোকে টুটে মিথ্যের বাঁধন একান্তে প্রভুর পদতলে আত্মসমর্পণে। (কবিতা-কেউ সত্য খোলে না)। পরিচয় পর্বে আপনাকে জানাবে মোবারকবাদ, বিদায় কালে ভুল হবে না দিতে ধন্যবাদ। (কবিতা-সাগর কন্যা সাইপ্রাস)। আমি তো পড়েছি লেবাননের রাজধানী বৈরূতের প্রেমে, সময় পেলেই চষে বেড়াই অলিগলি আর নিশীথে ঘুমে। (কবিতা-অবাক শহর-সবাক দেশ)। করোনা এসেছে দুনিয়ার হালাল হারাম চেনাতে করোনা এসেছে এক আল্লাহতে ঈমান শেখাতে। (কবিতা-করোনা মুক্ত বিশ্ব চাই)। হারানো সুন্দর পৃথিবীর রূপ ফিরে পেতে চায় মহান আল্লাহর দয়া ও কল্যাণ পেতে চায়। (কবিতা-আত্মসমর্পণ)। মসজিদ মন্দিরগুলো সুশোভিত নজরকাড়া গির্জা প্যাগোডার গায়ে অশ্লীল শিল্পকর্মে ভরা। মসজিদে না যেও মুসলিম, গির্জায় খ্রিস্টান অন্তর দেখেন খোদা, না চাহেন এত প্রতিষ্ঠান। (কবিতা-মসজিদ মন্দির দেখেন না প্রভু)। শেষ কথা: এটি একটি চমৎকার কবিতার বই। কবি যে একজন ধার্মিক এবং মানবিক মানুষ তা এই বই পড়ে উপলব্ধি করা যায়। তিনি একজন গুণী লেখক। তাঁর লেখনী শুধু দেশেই নয়। আন্তর্জাতিক পর্যায়েও সৃষ্টির প্রতিফলন দেখা যায়। তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছি। এমন সুন্দর একটা বই প্রকাশ ও বাংলা সাহিত্যকে উপহার দেওয়ার জন্য। কবির স্বর্গছায়া কাব্যগ্রন্থর নামকরণটি সফল ও সার্থক হয়েছে। কারণ এই গ্রন্থে কবি অত্যন্ত চমৎকারভাবে একজন আদর্শ তথা সফল মানুষের করণীয় এবং বর্জণীয় কী তা বিস্তারিত সুবিন্যাস্ত করেছেন। এই মানবিক মানুষটির সদাচরণ ও সৎকর্ম অবিরত থাকুক। দুজাহানে সফলতা লাভ করুক। তাঁর হাত ধরে বাংলা সাহিত্য নবরূপে আন্তর্জাতিক সাহিত্যাঙ্গণে পরিচিতি লাভ করুক। লেখক: কবি ও সংগঠক।
<p>সম্পাদক ও প্রকাশক: লিটন হোসাইন জিহাদ</p>
© PothikTV Media Center