আর্ন্তজাতিক ডেস্ক: এলিয়াস স্টাডিয়াটিস যখন সাগরের বেগুনি-নীল পানির নীচে ডুব দিলেন, তখন তিনি ভাবছিলেন ডুবুরি হিসেবে হয়তো তাকে আরেকটি গড়পড়তা দিনের মতোই নানা কিছু খুঁজে ফিরতে হবে। তার পরনে ভারী ডাইভিং স্যুট, নিঃশ্বাস নেয়ার জন্য মুখে লাগানো রাবারের নল। সংবাদ বিবিসি
সাগরের তলায় এসে পৌঁছানোর পর চোখ মিট মিট করে তিনি যা দেখলেন, তাতে ভয়ে আঁতকে উঠলেন: তার চারপাশে মনে হচ্ছে ছড়িয়ে আছে বহু খন্ড-বিখন্ড মানবদেহ, পানির নীচে সেসবের ঝাপসা আকার বেশ বোঝা যাচ্ছে। এলিয়াস যখন বুদ্বুদ ছড়িয়ে পানির উপরে ভেসে উঠলেন, হন্তদন্ত হয়ে জাহাজের ক্যাপ্টেনকে জানালেন, সাগরের নীচে তিনি লাশের স্তূপ খুঁজে পেয়েছেন।
এটা ১৯০০ সালের বসন্তকালের ঘটনা। এলিয়াস আসলে সেদিন ঘটনাচক্রে আনটিকিথেরা জাহাজডুবির সন্ধান পেয়েছিলেন। এই মালবাহী রোমান জাহাজটি সাগরে ডুবে গিয়েছিল দুহাজার বছরেরও বেশি আগে। তবে শীঘ্রই এটা বোঝা গেল এই জাহাজটির ধ্বংসাবশেষে এলিয়াস মৃতদেহের স্তূপ বলে ভেবেছিলেন যেগুলিকে, সেগুলি আসলে শিল্পকর্ম। মার্বেল পাথর এবং ব্রোঞ্জের ভাস্কর্য, কিন্তু হাজার বছর ধরে সাগর তলে শ্যাওলা আর নানা সামুদ্রিক প্রাণীর মাঝখানে সেগুলোর ওপর এক অদ্ভুত প্রলেপ পড়েছে।
এজিয়ান সাগরে গ্রীসের একটি দ্বীপের উপকূলে আনিটিকিথেরা থেকে উদ্ধার করা সেসব ভাস্কর্য একশো বছরেরও বেশি সময় পরে এখনো মানুষকে মুগ্ধ করে চলেছে। কিন্তু সাগরতলে এরকম বহু জাহাজে আরও অনেক বিস্ময়কর নিদর্শন এখনো আবিষ্কারের অপেক্ষায় পড়ে আছে।
ইউনেস্কোর একটি সাম্প্রতিক অভিযানের কথা ধরা যাক। এটি চালানো হয় স্কার্কি ব্যাংক বলে একটি জায়গায়। পূর্ব এবং পশ্চিম ভূমধ্যসাগরকে যুক্ত করেছে সাগরের এই অগভীর অংশটি, যেটি জাহাজ চলাচলের জন্য খুবই বিপদজনক, কারণ সেখানে পানির নীচে অনেক প্রবাল পাথর। হাজার হাজার বছর ধরে এই পথে বহু জাহাজ ডুবি হয়েছে।
শব্দতরঙ্গ ব্যবহার করে এবং পানির নীচে রোবট পাঠিয়ে এই এলাকার সাগরতলের একটি মানচিত্র তৈরির কাজ করেছিলেন আটটি দেশের একদল বিজ্ঞানী । এ সপ্তাহে তারা ঘোষণা করলেন, সেখানে তিনটি ডুবে যাওয়া জাহাজের সন্ধান পাওয়া গেছে। এর মধ্যে একটি হচ্ছে খ্রিষ্টপূর্ব প্রথম শতাব্দীর, একটি দ্বিতীয় শতাব্দীর, আর শেষেরটি হয়তো উনিশ বা বিশ শতকের।
ইউনেস্কোর ধারণা, বিশ্বের সাগরগুলোর ঢেউয়ের নীচে হয়তো আর বহু ডুবে যাওয়া জাহাজ আবিষ্কার হওয়া বাকী।