প্রেমের টানে সুদূর চীন থেকে বাংলাদেশে ছুটে এসেছেন এক চীনা যুবক। গোপালগঞ্জ জেলা শহরের নিচুপাড়া এলাকার মেয়ে সীমা আক্তারের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠার পর, জীবনের সবকিছু পেছনে ফেলে সীমার হাত ধরে সংসার গড়তে এসেছেন ৩৫ বছর বয়সী চীনা নাগরিক লিউ সিলিয়ান।
দীর্ঘ ছয় মাসের পরিচয় ও প্রেম—শুরু হয়েছিল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে। সেখান থেকে প্রতিদিন কথা, ভিডিও কল, দুই পরিবারের মধ্যে পরিচয়—সব মিলিয়ে সম্পর্ক পৌঁছায় বিয়ের সিদ্ধান্তে। প্রেমিকার ডাকে সাড়া দিয়ে গত শুক্রবার (২৭ জুন) সরাসরি চীন থেকে বাংলাদেশে এসে পৌঁছান লিউ সিলিয়ান। প্রথমে ওঠেন একটি হোটেলে, পরে প্রেমিকা সীমার বাবা মো. আবুল হোসেন হাওলাদার তাকে নিজ বাড়িতে নিয়ে আসেন।
পরিবারের সম্মতিতে ওই দিনই ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন লিউ সিলিয়ান এবং নতুন নাম নেন মো. সাদেকুর রহমান সানি। এরপর রবিবার (২৯ জুন) কোর্ট ম্যারেজের মাধ্যমে সীমা আক্তার ও লিউ সিলিয়ানের বিয়ে সম্পন্ন হয়। পরদিন সোমবার (৩০ জুন) সীমার বাড়িতে ঘরোয়া আয়োজনে পালিত হয় বিবাহোত্তর নানা আনুষ্ঠানিকতা। আত্মীয়স্বজন, পাড়া-প্রতিবেশী সবাই বরণ করে নেন নবদম্পতিকে।
সীমার বাবা আবুল হোসেন হাওলাদার জানান,
“আমার মেয়ে আমাদের জানায় সে একজন চীনা ছেলের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়েছে। আমি বিষয়টি নিয়ে তাকে ভাবতে বলি। পরে ছেলেটি নিজেই বিয়ের প্রস্তাব দেয়। সে দেশে এসে আমার সঙ্গে দেখা করে এবং তার মা-বাবা ও আত্মীয়দের সম্মতিতে ইসলাম গ্রহণ করে আমার মেয়েকে বিয়ে করে। আমি মেয়ের সুখের কথা ভেবে এতে সম্মতি দিই।”
সীমা আক্তার বলেন,
“ছয় মাস আগে ফেসবুকে পরিচয় হয়। ধীরে ধীরে বন্ধুত্ব থেকে প্রেম হয়। একদিন সে হঠাৎ বিয়ের প্রস্তাব দেয়। আমি বলি বাংলাদেশে এলে বিয়ে করব। সে কথা রাখে। এখন আমি খুব খুশি—কারণ আমি ভালোবাসার মানুষকে পেয়েছি। ও খুব ভালো মনের একজন মানুষ এবং আমাকে খুব ভালোবাসে।”
লিউ সিলিয়ান জানান, তিনি চীনের একটি কোম্পানিতে চাকরি করতেন। কিন্তু ছুটি না পাওয়ায় চাকরি ছেড়ে দিয়েই সীমার টানে বাংলাদেশে চলে আসেন। তিনি বলেন,
“আমি সীমাকে অনেক ভালোবাসি। তার পরিবারের মানুষরা অনেক ভালো। আমি নিজে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছি। এখন আমার নাম মো. সাদেকুর রহমান সানি। এক মাসের মধ্যে যাবতীয় কাগজপত্র শেষ করে সীমাকে নিয়ে চীনে ফিরে যাব। আমাদের জন্য সবাই দোয়া করবেন।”
এই ব্যতিক্রমী প্রেম ও বিয়ের ঘটনাটি এখন গোটা এলাকাজুড়ে চাঞ্চল্য ও আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু। সীমার বাড়িতে ভিড় করছেন উৎসুক জনতা। নবদম্পতির জন্য সবাই দোয়া করছেন—তাদের ভালোবাসা যেন চিরস্থায়ী হয় এবং সংসার জীবন সুখের হয়।