আন্তর্জাতিক ডেস্ক রিপোর্ট: বর্তমান বৈশ্বিক রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে ইউরোপ একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে আছে। ইউক্রেন যুদ্ধ, রাশিয়ার ধারাবাহিক আগ্রাসন, চীনের সাথে রাশিয়ার ঘনিষ্ঠ মিত্রতা, এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক অস্থিরতা—এই চারটি বড় ঘটনা ইউরোপকে এক নতুন ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি করেছে।
এই বাস্তবতায় ইউরোপীয় নেতারা কেবল প্রতিক্রিয়াশীল নীতি থেকে বেরিয়ে এসে এখন নতুন নিরাপত্তা কাঠামো তৈরির ব্যাপারে আলোচনা শুরু করেছেন, যেখানে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ, সামরিক প্রস্তুতি, অর্থনৈতিক স্বয়ংসম্পূর্ণতা এবং প্রযুক্তিগত স্বাধিকার—সবকিছু একসাথে বিবেচনায় আনা হচ্ছে।
বর্তমানে ইউরোপের নিরাপত্তা হুমকি শুধু সীমানার বাইরে নয়—সীমানার ভেতরেও তৈরি হচ্ছে।
ইউক্রেন যুদ্ধ প্রমাণ করে দিয়েছে, একটি স্বাধীন ইউরোপীয় দেশ যেকোনো সময় পরাশক্তির শিকার হতে পারে।
রাশিয়া শুধু সামরিক নয়, সাইবার হামলা, গ্যাস সরবরাহ নিয়ন্ত্রণ এবং ভুয়া তথ্য ছড়িয়ে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করছে।
চীনের সাথে রাশিয়ার কৌশলগত ঘনিষ্ঠতা ইউরোপীয় নীতিনির্ধারকদের চোখে ‘নতুন স্নায়ুযুদ্ধ’-এর ইঙ্গিতবাহী।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ডোনাল্ড ট্রাম্পের পুনরুত্থান এবং আমেরিকার অভ্যন্তরীণ নীতিগত অনিশ্চয়তা ইউরোপকে নিজেদের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে নতুন করে ভাবতে বাধ্য করছে।
সদ্য অনুষ্ঠিত ইউরোপিয়ান কাউন্সিল বৈঠকে, ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল ম্যাক্রোঁ বলেন—
“আমরা আর শুধু আমেরিকার সুরক্ষা ছাতার নিচে থাকতে পারি না। ইউরোপকে নিজস্ব সামরিক প্রস্তুতি, প্রযুক্তি এবং জ্বালানি নিরাপত্তায় স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে হবে।”
জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎসও এই বিষয়ে একমত পোষণ করেছেন। তিনি জোর দিয়েছেন একটি ‘ইউরোপীয় প্রতিরক্ষা ইউনিয়ন’ গঠনের ওপর, যেখানে সদস্য রাষ্ট্রগুলো সমন্বিত বাজেট ও অস্ত্র ব্যবস্থাপনায় কাজ করবে।
একদিকে ইউরোপ চাইছে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে, কিন্তু অন্যদিকে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের ব্যাপারে আপস করতে রাজি নয়।
হাঙ্গেরি ও পোল্যান্ডের মত কিছু দেশে গণতন্ত্রের অবনমন,
রাইট-উইং জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের উত্থান,
এবং অভিবাসন ইস্যু নিয়ে বিভাজন—সবমিলিয়ে ইউরোপ একটি দ্বিধাবিভক্ত অঞ্চলে পরিণত হচ্ছে।
তবুও ইউরোপীয় ইউনিয়নের নেতারা এটিকে “একটি পুনর্জাগরণের সময়” হিসেবে দেখছেন—যেখানে মূল্যবোধ, ঐক্য এবং কৌশলগত পরিকল্পনা একসাথে নতুনভাবে সাজানো হবে।
এই আলোচনার মধ্যেই ইউরোপ জোর দিচ্ছে তিনটি গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রকে ঢেলে সাজাতে:
প্রতিরক্ষা: ন্যাটোর পাশাপাশি ইউরোপের নিজস্ব সামরিক সক্ষমতা বাড়ানো
প্রযুক্তি: চীনের উপর নির্ভরতা কমিয়ে নিজস্ব AI, চিপ ও ক্লাউড প্রযুক্তিতে বিনিয়োগ
অর্থনীতি: শক্তিশালী অভ্যন্তরীণ বাজার, বিকল্প জ্বালানি উৎস এবং উন্নত শিল্পনীতি
বিশ্লেষকরা বলছেন, ইউরোপ যদি সত্যিই একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ ও নীতিনিষ্ঠ অঞ্চল হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে চায়, তাহলে এখনই সময় নিজেদের মধ্যে মতভেদ ভুলে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার।
বিশ্ব রাজনীতির মোড় ঘোরাতে এই মহাদেশের ভূমিকাই ভবিষ্যতের ভারসাম্য নির্ধারণ করবে।
উৎস:
Financial Times
🔗 সূত্র লিংক