ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফরের বিরুদ্ধে ২০২১ সালের ২৬-২৮ মার্চ ব্যাপক আন্দোলন ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। মোদির নেতৃত্বাধীন বিজেপি সরকারের মুসলিমবিদ্বেষী নীতির বিরুদ্ধে এই আন্দোলন শুরু হয়, যা বিশেষ করে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ভয়াবহ আকার ধারণ করে।
২৬ মার্চ, বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে নরেন্দ্র মোদির ঢাকা সফরের প্রতিবাদে রাজধানী ঢাকার বায়তুল মোকাররম এলাকায় প্রথম সংঘর্ষ শুরু হয়। পুলিশের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়, যার ফলে হতাহতের ঘটনা ঘটে। একই দিনে চট্টগ্রামেও পুলিশি হামলায় চারজন আন্দোলনকারী প্রাণ হারান।
চট্টগ্রামে নিহতরা: ১. রবিউল ইসলাম ২. মেরাজুল ইসলাম ৩. নাসরুল্লাহ ৪. ওহিদুল ইসলাম
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় মোদিবিরোধী আন্দোলনের সূত্রপাত হয় এই ঘটনার প্রতিবাদে। ২৬ মার্চ ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ব্যাপক বিক্ষোভ ও পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ হয়, যার ফলে মো. আশিক মিয়া নিহত হন।
হেফাজতে ইসলাম ২৭ মার্চ দেশব্যাপী হরতালের ডাক দেয়। ব্রাহ্মণবাড়িয়াসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে এই হরতাল পালিত হয়। কিন্তু ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় আন্দোলন দমন করতে সরকার ও সরকারি দল ব্যাপক দমন-পীড়ন চালায়। পুলিশ, ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতাকর্মীরা একযোগে আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা চালায়। বিশেষ করে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ‘জামিয়া ইসলামিয়া ইউনুসিয়া’ মাদ্রাসায় হামলা চালানো হয়।
এদিন ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় প্রাণ হারান: ১. মাওলানা হোসাইন আহমদ ২. মুহাম্মদ কাউসার ৩. বাদল মিয়া ৪. হাফেজ জুবায়ের আহমদ ৫. মুশাহিদ মিয়া ৬. হাফেজ কাউসার ৭. মুহাম্মদ ফয়সল ৮. জহিরুল ইসলাম
এছাড়াও, ঢাকার বিভিন্ন জায়গায়, গাজীপুর ও নারায়ণগঞ্জেও ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। সরকার আন্দোলন দমনে সারাদেশে বিজিবি মোতায়েন করে।
২৮ মার্চ হেফাজতে ইসলাম পুনরায় হরতাল ঘোষণা করে। ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় আরও ৫ জনকে গুলি করে হত্যা করা হয়।
নিহতরা: ১. কামাল উদ্দিন (২৯ মার্চ মারা যান) ২. মু. রাফিন মিয়া (৩০ মার্চ মারা যান)
২০২৪ সালে বিতর্কিত নির্বাচনের মাধ্যমে শেখ হাসিনার সরকার পুনরায় ক্ষমতায় আসে এবং এই গণহত্যায় ভূমিকার জন্য উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরীকে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রী করা হয়।
এই আন্দোলন বাংলাদেশের ইতিহাসে অন্যতম বড় ইসলামপন্থী বিক্ষোভ এবং সরকারি দমন-পীড়নের একটি নির্মম উদাহরণ হয়ে থাকবে।