মৌলভীবাজারে রিকশা শ্রমিক ইউনিয়নের বিক্ষোভ ও ব্যাটারিচালিত রিকশা-ভ্যান উচ্ছেদ বন্ধসহ রিকশা ৭দফা দাবিতে স্মারকলিপি প্রদান

মোঃ মোয়াজ্জেম হোসেন চৌধুরী, বিশেষ প্রতিনিধি : বাজারদরের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ ন্যায্যভাড়ার তালিকা প্রদান, ব্যাটারিচালিত রিকশা-ভ্যান উচ্ছেদ বন্ধসহ রিকশা শ্রমিকদের উপর নির্যাতন বন্ধ, স্থায়ী স্ট্যান্ড প্রদান ও দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ করে স্বল্পমূল্যে রেশনিং চালুসহ ৭ দফা দাবিতে মৌলভীবাজারের জেলা প্রশাসক বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করেছে মৌলভীবাজার জেলা রিকশা শ্রমিক ইউনিয়ন (রেজিঃ নং চট্টঃ ২৪৫৩)।

বৃহস্পতিবার ৩১ আগষ্ট দুপুরে শহরের চৌমুহনাস্থ কার্যালয়ে শ্রমিক সমবেত হয়ে এক বিক্ষোভ মিছিল বের করে শহরের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে গিয়ে স্মারকলিপি প্রদান করা হয়।

মৌলভীবাজার জেলা রিকশা শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি মোঃ সোহেল মিয়া ও সাধারণ সম্পাদক মোঃ দুলাল মিয়ার নেতৃত্বে এক প্রতিনিধিদল মৌলভীবাজারের জেলা প্রশাসক ড. উর্মি বিনতে সালামের নিকট স্মারকলিপি তুলে দেন।

স্মারকলিপি গ্রহণ করে জেলা প্রশাসক শ্রমিকদের দাবি বাস্তবায়নে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করার আশ্বাস দেন।

এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন রিকশা শ্রমিক ইউনিয়নের সহ-সভাপতি মোঃ গিয়াস উদ্দিন, বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন সংঘ মৌলভীবাজার জেলা কমিটির সদস্য মোঃ শাহজাহান আলী ও সোহেল আহমেদ সুবেল।

রিকশা শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি মোঃ সোহেল মিয়া ও সাধারণ সম্পাদক মোঃ দুলাল মিয়া স্বাক্ষরিত স্মারকলিপির অনুলিপি পৌর মেয়র, পুলিশ সুপার, মৌলভীবাজার সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও মৌলভীবাজার মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বরাবর পেশ করা হয়।

স্মারকলিপিতে উল্লেখ করা হয়, গ্রাম্য জোতদার মহাজনের শোষণে জমি-জমা হাঁরিয়ে শহরে এসে রিকশা-ঠেলা-ভ্যান শ্রমিকরা প্রতিদিন গভীর রাত পর্যন্ত প্রখর রোদ ও ঝড়বৃষ্টির মধ্যে অমানুষিক পরিশ্রম করে দুঃখ কষ্টে জীবন জীবিকা নির্বাহ করেছেন।

বর্তমানে চাল, আটা, ডাল, তেল, লবন, চিনিসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের মূল্যের লাগামহীন অব্যাহত ঊর্ধ্বগতির বাজারে রিকশা-ভ্যান শ্রমিকদের বেঁচে থাকা দায় হয়ে পড়েছে।

এ রকম সময়ে শহরে ব্যাটারি চালিত রিকশা-ভ্যান উচ্ছেদ তৎপরতা শ্রমিকদের আরও দুর্বিষহ পরিস্থিতির মধ্যে ফেলে দিচ্ছে।

অথচ গত ৪ এপ্রিল/২০২২ উচ্চ আদালতের এক রায়ে মহাসড়কে ব্যাটারি চালিত তিন চাকা যানবাহন চলাচলে নিষেধাজ্ঞা প্রদান করা হলেও আঞ্চলিক সড়কে এবং শহরের মধ্যে ব্যাটারি চালিত রিকশা-ভ্যান চলাচলে কোন নিষেধাজ্ঞা প্রদান করা হয়নি।

তারপরও সম্প্রতি পৌরসভার পক্ষ থেকে মাইকিং করে ব্যাপকভাবে ব্যাটারি চালিত রিকশা ও ভ্যান ধরপাকড় চলছে। শ্রমিকরা অবিলম্বে এই তৎপরতা বন্ধ করার দাবি জানায়।

স্মারকলিপিতে আরও উল্লেখ করা হয়, বর্তমান দ্রব্যমূল্যের সাথে সমন্বয় করে যথাযথ ভাড়া নির্ধারণ না করায় যাত্রী সাধারণের সাথে ভাড়া নিয়ে বাকবিতন্ডা লেগেই থাকে এবং কোন কোন ক্ষেত্রে রিকশা শ্রমিকদের শারিরিক লাঞ্চনার শিকার হতে হয়।

তাছাড়া কোন কোন যাত্রী যাত্রাপথে এক মিনিটের কথা বলে রিকশা থামিয়ে সময়ক্ষেপন করলেও সেই অনুপাতে ন্যায্য ভাড়া পরিশোধ করেন না বলে রিকশা শ্রমিকরা অভিযোগ করে।

এই সকল রিকশার অধিকাংশের মালিকই হচ্ছেন রিকশা চালক নিজে, যারা এনজিও ও মহাজনের নিকট হতে উচ্চ সুদে ঋণ করে অথবা নিজের শেষ সহায়-সম্বলটুকু বিক্রি করে ব্যাটারি চালিত রিকশা কিনে জীবন সংগ্রাম চালাচ্ছেন।

মানুষ হয়ে মানুষকে টেনে নেওয়ার বদলে ব্যাটারি চালিত এই রিকশায় শ্রমিকরা যেমন তুলনামূলক সহজে কম পরিশ্রমে যাত্রী পরিবহণ করতে পারছেন তেমনি স্বল্প খরচে আমরাদায়ক পরিবহণ হিসেবে অল্প সময়ের মধ্যে যাত্রী সাধারণের কাছে এই সকল রিকশা অত্যন্ত জনপ্রিয় হয়ে উঠে।

যার কারণে বর্তমানে দেশের অনেক জেলায়, এমন কি মৌলভীবাজার জেলার কোন কোন উপজেলাতেও পা-চালিত রিকশা প্রায় উঠেই গেছে।

কিন্তু নিরিহ, দরিদ্র, অবহেলিত রিকশা শ্রমিকদের রুটি রোজীকে হুমকির মুখে ফেলে দিয়ে রিকশা উচ্ছেদের তৎপরতা চললেও ব্যাটারি চালিত রিকশা বিক্রিতে কোন রকম বাঁধা-নিষেধ নেই।

যার কারণে এখনও অবাধে ব্যাটারি চালিত রিকশা বিক্রি হচ্ছে, মহল বিশেষও এব্যাপারে নিরবতা পালন করছেন।

শ্রমিকদের প্রশ্ন হচ্ছে, এই রিকশাগুলো তো তারা তৈরি করেননি। জীবনের শেষ সম্বলটুকু দিয়ে কিনে জীবিকা নির্বাহ করার চেষ্ঠা করছেন।

অন্যান্য পরিবহণের দূর্ঘটনায় যেরকম প্রাণঘাতি বা ক্ষয়ক্ষতি হয়, সে তুলনায় এই রিকশাগুলোর দূর্ঘটনায় ক্ষয়ক্ষতি হয় না বললেই চলে এবং দূর্ঘটানর হারও তুলনামূলক কম।

তাই দূর্ঘটনারোধে ও যানজট নিরসনে প্রথমেই যেখানে সেখানে সকল ধরণের পরিবহণের অবৈধ পার্কিং বন্ধ করতে হবে এবং রিকশা চলাচলের জন্য পৃথক লেন তৈরি করার দাবি করেন ।

পার্কিংয়ের জন্য শহরে পর্যাপ্ত ব্যবস্থা ও সকল মার্কেটে নিজস্ব পার্কিং ব্যবস্থা করতে হবে। তাই সার্বিক বিষয় বিবেচনা করে ৭ দফা দাবি বাস্তবায়নে জেলা প্রশাসকের আশু ভূমিকা কামনা করেন শ্রমিকরা।

মৌলভীবাজার জেলা রিকশা শ্রমিক ইউনিয়ন (রেজিঃ নং চট্টঃ ২৪৫৩)’র ৭ দফা দাবি হলো-

১. বর্তমান বাজারদরের সাথে তাল মিলিয়ে রিকশা ভাড়া পুণঃনির্ধারণ করতে হবে।
২. উচ্চ আদালতের রায় অনুযায়ী আঞ্চলিক সড়কে ও শহরের ভিতরে ব্যাটারি চালিত রিকশা-ভ্যান চলাচলে বাঁধা দেওয়া যাবে না। শ্রমিকদের হয়রানি বন্ধ করে অবিলম্বে ব্যাটারি চালিত রিকশা-ভ্যান উচ্ছেদ বন্ধ করতে হবে।
৩. যানজট নিরসনে যত্রতত্র অবৈধভাবে গাড়ি পার্কিং বন্ধ করতে হবে। ৪. যাত্রী ও শ্রমিকদের সুবিধার্থে পর্যাপ্ত রিকশা স্ট্যান্ড স্থাপন করতে হবে ।
৫. রিকশা শ্রমিকদের উপর সকল অন্যায় জুলুম-অত্যাচার-নির্যাতন বন্ধ করতে হবে।
৬. রিকশা-ঠেলা-ভ্যান শ্রমিকসহ শ্রমজীবী জনগণের জন্য স্বল্পমূল্যে নিত্যপ্রয়োজনীয় সকল জিনিষপত্রের রেশনিং ব্যবস্থা চালু করতে হবে এবং
৭. শাহমোস্তফা সড়ক ও শ্রীমঙ্গল সড়কের সংযোগস্থলে ট্রাফিক গোল চত্ত্বর নির্মাণ করতে হবে।

এম.চৌ:/পথিক নিউজ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *