নিজস্ব সংবাদদাতা : তথ্যপ্রযুক্তিনির্ভর সমরশক্তির যুগে তুরস্কের তৈরি MAM-C স্মার্ট মাইক্রো মিউনিশন সামরিক জগতে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। এটি একটি হালকা ওজনের, নির্দেশনাযুক্ত ক্ষুদ্র আকারের বোমা, যা মূলত মানববিহীন আকাশযান (UAV) ও হালকা আক্রমণকারী বিমান থেকে নিক্ষেপযোগ্য। স্মার্ট অস্ত্রের ক্রমবর্ধমান চাহিদার প্রেক্ষিতে তুরস্কের প্রতিরক্ষা শিল্প প্রতিষ্ঠান Roketsan এই মিউনিশনটি তৈরি করে।
এই অস্ত্রটির মূল বৈশিষ্ট্য হচ্ছে – নির্ভুলভাবে নির্দিষ্ট লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানা। আধুনিক লেজার ও GPS নির্দেশনা প্রযুক্তির সাহায্যে MAM-C চলমান কিংবা স্থির উভয় ধরনের লক্ষ্যবস্তুকে নিখুঁতভাবে ধ্বংস করতে সক্ষম। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ ধরনের অস্ত্র ব্যবহারে যুদ্ধক্ষেত্রে ‘কোল্যাটারাল ড্যামেজ’ বা অনাকাঙ্ক্ষিত ক্ষয়ক্ষতি অনেক কমে আসে।
প্রায় ৬.৫ কেজি ওজনের এই ক্ষুদ্র বোমাটি প্রায় ১ মিটার দৈর্ঘ্যের হয়ে থাকে। এর ব্যাস ৭০ মিমি, যা UAV বা হালকা বিমান থেকে বহন করা সহজ করে তোলে। সাধারণত এটি ৮ থেকে ১৫ কিলোমিটার দূরত্ব পর্যন্ত লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে পারে।
MAM-C-তে ব্যবহৃত গাইডেন্স সিস্টেম হলো: সেমি–অ্যাকটিভ লেজার গাইডেন্স, এবং GPS/INS ভিত্তিক ন্যাভিগেশন সিস্টেম।
এই স্মার্ট অস্ত্রটি ইতোমধ্যেই Bayraktar TB2, ANKA, এবং Aksungur সহ বিভিন্ন তুর্কি ড্রোনে সাফল্যের সঙ্গে ব্যবহৃত হচ্ছে। এর মাধ্যমে সেনাবাহিনী রাডার সিস্টেম, সাঁজোয়া যান, শত্রুর অস্ত্রাগার ও মজুদঘরকে লক্ষ্য করে অত্যন্ত সুনির্দিষ্টভাবে আঘাত হানতে পারছে।
Roketsan সূত্রে জানা গেছে, এই ক্ষেপণাস্ত্রটির উৎপাদন খরচ কম হওয়ায় এটি সাশ্রয়ী ও কার্যকর সমাধান হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, MAM-C স্মার্ট মিউনিশনের মাধ্যমে যুদ্ধের কৌশলগত দিক এক নতুন ধাপে প্রবেশ করেছে। এটি শুধু ক্ষয়ক্ষতি কমায় না, বরং অপারেশন সফলতার হারও অনেক বাড়িয়ে দেয়। UAV-ভিত্তিক আক্রমণে এর বহুমুখী ব্যবহার ভবিষ্যতের যুদ্ধপ্রবণতার একটি পূর্বাভাস।
আন্তর্জাতিক প্রতিরক্ষা বিশ্লেষকরা বলছেন, স্মার্ট অস্ত্রের বাজারে তুরস্ক যে দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে, তার একটি বড় উদাহরণ হলো MAM-C। এটি বিভিন্ন দেশের সামরিক বাহিনীর নজর কেড়েছে এবং ইতোমধ্যে রপ্তানির দিকেও অগ্রসর হয়েছে।
MAM-C স্মার্ট মাইক্রো মিউনিশন আধুনিক যুদ্ধক্ষেত্রে প্রযুক্তিনির্ভর, কম খরচে অধিক ফলদায়ী অস্ত্র হিসেবে স্থান করে নিয়েছে। UAV ব্যবস্থাকে আরও কার্যকর ও মরণঘাতী করে তুলতে এ ধরনের অস্ত্রের গুরুত্ব ভবিষ্যতে আরও বাড়বে, এমনটাই মনে করছেন সামরিক বিশ্লেষকরা।