হায়রে ভাগ্যঃ সত্য ঘটনা অবলম্বনে ছোট গল্প।

ভাগ্যে নাকি কুকুর হয়ে গেছে——–
মুয়মনসিংহ জেলার মুক্তাগাছা থানার মুজাটি গ্রামে বলাই চাঁদের বসবাস( 2000 )জৌষ্ঠমাস।জমিজমা সম্পদ বলতে কিছুই নাই তার।জনৈক এক মুসলিমের প্রায় পরিত্যাক্ত বাড়িতে মাথাগোঁজার ঠাঁই হিসাবে তাদের বসবাস। বাঁশের
চাটাই,কুলা,চালুন বানিয়ে বিক্রি করে সে জীবিকা নির্বাহ করে।
সংসারে তার অভাব অনটন লেগেই থাকে।বলাই এর চেহারায় অভাবের ছাপ স্পষ্ট,চক্ষু কোটরাগত,চুয়ালের হাড় বর্ধিত।স্ত্রী রাধা রাণী-পরনে বিবর্ণ ছেড়া শাড়ী,ঠিকমত পেট পুরে খাবার না পাওয়ার সাক্ষী দিচ্ছে তার উঁচু হয়ে থাকা দাঁত আর কঙ্কালসার দেহ।অভাবের নির্মম তাণ্ডব সইতে না পেরে সরকারি বন্ধ্যকরণ নীতি অনুসরন করে নামমাত্র সাহায্য (টাকা ও চাল)পাবার আশায়।
তাদের একমাত্র ছেলে ভাগ্য।প্রাণচঞ্চল,দুরন্ত এই ছেলে।দশ বছর বয়সী এই ভাগ্য সবসময় হাসিখুশি আনন্দে মাতিয়ে রাখতো চারদিক।তার মায়াময় হাস্য উজ্জল মুখখানি দেখলে মনে কেমন জানি প্রস্বস্তি অনুভব হয় অনেকটা –গ্রীস্মের দাবদাহে মালবহনকারী ঠেলাওয়ালা -সদ্য বরফ গলা ঠান্ডা পানিতে পাতি লেবুর রসের শরবত খেলে যেমন প্রস্বস্তি অনুভূত করে ঠিক তেমন।
আকস্মিক একদিন শুনতে পেলাম ভাগ্য নাকি কুকুর হয়ে গেছে,নিজের মুখে ঘেউঘেউ আওয়াজ তুলছে—-‘
দৌড়ে গেলাম ওদের বাড়ি—–
উঠানের মাটিতে গড়াগড়ি খাচ্ছে -কাঁদছে -আর ঘেউ ঘেউ আওউয়াজ আসছে ওর মুখ দিয়ে—-
চারকোণ বেষ্টিত চারটি কলসি ওকে ঘিরে রেখেছে
চতুর্দিকে মানুষ ওর ব্যথায় ব্যথিত মর্মাহত হয়ে অশ্রু বিসর্জন করছে—-
কেউ কেউ বলছে কিছুক্ষণের মধ্যেই ও মারা যাবে
তাই ঘটলো–
কয়েকজন মহিলা ওর মাকে সান্তনা দেওয়ার বৃথা চেষ্টায় লিপ্ত-তাঁর আর্ত আহাজারি,বুক ফাটা কান্নায় আকাশ, বাতাস ,গাছপালা,পশুপাখি সবাই যেন সুর মিলাচ্ছে,কাঁদছে।
জানতে পারলাম প্রায় মাস তিনেক আগে ভাগ্যকে নাকি কুকুরে কাঁমড়েছিলো—-
কবিরাজের কাছ থেকে পানি পড়া,গুড় পড়া খাইয়েছিলো ওকে ওর বাপ
কিন্তু কাজ হয়নি—
হায়রে ভাগ্য———
আর কোনদিন ফিরে আসবে না মায়ের কোলে
দারিদ্রের কষাঘাতে জর্জরিত,নিঃষ্পেসিত,বঞ্চিত ,নিপীড়িত এসব দরিদ্র জনগন চিরকাল শুধু কষ্টই ভোগ করে।শোকে পাগল প্রায় ওর মা—
তাকে সান্তনা দেওয়ার ভাষা কারো জানা নাই-
দারিদ্রতার আভিশাপ সন্তান জন্মদানের অধিকার ও তার কাছ থেকে কেড়ে নিয়েছে চিরতরে——-
কারও একটু মহানুভবতায় হয়তো বেচেঁ যেতো প্রস্ফুটিত হবার আগেই ঝড়ে যাওয়া এই নিষ্পাপ প্রাণ —–‘
তবে হয়তো অর্থাভাবে বিনা চিকিতসায় মরতে হতো না শিশু ভাগ্যকে—–
লেখিকাঃ
ফৌজিয়া সুবর্না