প্রিন্ট এর তারিখঃ সেপ্টেম্বর ১৭, ২০২৪, ১২:৫৮ এ.এম || প্রকাশের তারিখঃ অক্টোবর ১৯, ২০২২, ১০:৫৯ পূর্বাহ্ণ
একটা মহল আমার পেছনে লেগে আমার এই সর্বনাশ করেছে: চিত্রনায়িকা মুনমুন
নব্বই দশকের আলোচিত চিত্রনায়িকা মুনমুন। ১৯৯৬ সালে ঢালিউডে অভিষেক হয় তাঁর। ওই সময় চলচ্চিত্রে অ্যাকশন নায়িকা হিসেবে বেশ পরিচিত পান তিনি। একাধিক লেডি অ্যাকশন ঘরানার সফল ছবি উপহার দিলেও একটা সময় তাঁর ছবিতে ‘অশ্লীলতা’র তকমা লেগে যায়। সেই আলোচনা-সমালোচনার মধ্যে ২০০৩ সালে এসে চলচ্চিত্রে অনিয়মিত হয়ে পড়েন এই নায়িকা। এ পর্যন্ত আশির অধিক ছবিতে অভিনয় করেছেন মুনমুন। অনেক দিন পর ‘রাগী’ নামে তাঁর নতুন একটি ছবি মুক্তি পেয়েছে । ছবিতে প্রথমবারের মতো খলনায়িকা হিসেবে দেখা গেছে তাঁকে। সিনেমাজীবন, ব্যক্তিজীবন—এসব নিয়ে প্রথম আলোর সঙ্গে কথা বলেছেন এই অভিনেত্রী।
প্রথম খলনায়িকার চরিত্রে অভিনয়। দর্শকপ্রতিক্রিয়া কেমন?
ভালো সাড়া পাচ্ছি। আমার ছবি দেখতে এত মানুষ আসবে বুঝিনি, কল্পনাও করিনি। সেই ২০০৩ সাল থেকে নিয়মিত সিনেমা করা ছেড়ে দিয়েছি। অনেক দিন পর দর্শকের সামনে এলাম। তা-ও আবার ভিন্নরূপে। ভেবেছিলাম, মানুষ ভুলে গেছে আমাকে। মধ্যে বিচ্ছিন্নভাবে দু-একটা কাজ করেছি। আমরা কয়েকজন ‘রাগী’ দেখতে মধুমিতা, চিত্রামহল ও নিউ গুলশান সিনেমা হলে গিয়েছিলাম। আমাদের ঘিরে দর্শকের যে আগ্রহ দেখেছি, খুব ভালো লেগেছে। দর্শকেরা আমাকে এখনো পর্দায় দেখতে চান, হলে গিয়ে বুঝতে পারলাম। নায়িকা থেকে খলনায়িক—আমাকে নতুনভাবে দেখেছেন দর্শক। ছবির পরিচালককে ধন্যবাদ জানাই। তিনি এমন একটি চ্যালেঞ্জিং চরিত্রে কাজের সুযোগ দিয়েছেন। প্রথম দিন কয়েকটি হলে গিয়ে দর্শকের চাপে আমরা সবাই অসুস্থ হয়ে পড়েছিলাম।
বলছিলেন, আপনাকে ঘিরে দর্শকের এখনো আগ্রহ আছে। তাহলে এখন থেকে নিয়মিত অভিনয়ে ফিরবেন?
অনেক দিন পর অভিনয় করার মতো, কাজ করার মতো চরিত্র পেয়েছি ‘রাগী’ ছবিতে। চরিত্রটির ওজন আছে। লেডি ভিলেন। ছবিতে আমার এন্ট্রিটাও দারুণ হয়েছে। এ রকমের গল্প বা কাজ করার মতো চরিত্র পেলে অবশ্যই কাজ করব। এখন আমাকে যদি দুই-তিনটা সংলাপ ধরিয়ে দিয়ে কলাগাছের মতো দাঁড় করিয়ে রাখে, নামেই থাকল যে ছবিতে মুনমুন আছে, তাহলে তো সেখানে কোনো কিছুই করার সুযোগ থাকল না। কিন্তু কাজ করার মতো চরিত্র হলে অবশ্যই করব। কারণ, আমি তো শিল্পী। একসময় এটি আমার পেশা ছিল। হয়তোবা মাঝখানে সে রকম ভালো অফার পাইনি। এ জন্য বিরতি দিয়ে কাজ করেছি। তবে নিয়মিত কাজ করতে আরও একটু সময় নিতে চাই। আগে দেখি, ‘রাগী’ ছবির মতো চিত্রনাট্য, চরিত্র আসে কি না।
আমার প্রথম শুটিং করা ছবি ‘মৌমাছি’ হলেও মুক্তি পাওয়া ছবি ‘আজকের সন্ত্রাসী’। এটি ১৯৯৬ সালে মুক্তি পায়। এরপর একের পরপর হিট হতে থাকে আমার ছবি। একজন শিল্পীর একের পর এক ছবি হিট হতে থাকলে পরিচালক ও প্রযোজকেরা তাঁকে নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়বেন, এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু অজান্তে শত্রুও তৈরি হয়। কিছু কিছু পরিচালক ও প্রযোজক ফায়দা লোটার চেষ্টা করেন। লাভের আশায় আমার অভিনীত সিনেমাকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করতে থাকেন। আমি নিজে কোনো অন্যায় করিনি। কিন্তু একশ্রেণির ফায়দাবাজ আমার কাজের মধ্যে অন্যায় জিনিস ঢুকিয়ে দিয়েছেন। তাঁরাই আবার আমার দিকে অন্যায়ের ঢিল ছুড়েছেন। আমি অ্যাকশন নায়িকা হিসেবে যেসব ছবিতে কাজ করতাম, সেসব ছবিতে কাটপিস সংযোজন বেশি হতো। তখন আমি জায়গাটিকে নিরাপদ মনে করিনি। ফলে বাধ্য হয়ে একটা সময় চলচ্চিত্র ছেড়ে চলে আসতে হয়েছিল আমাকে।
কিন্তু ওই সময় আরও কয়েকজন নায়ক-নায়িকাসহ আপনাকেও তো অশ্লীল সিনেমার নায়িকার তকমা দেওয়া হয়েছিল। কী বলবেন?
এ বিষয়ে আর কত বলব? সেই সময় দর্শক আমার নামে সিনেমা হলে আসতেন। কারণ, দর্শক তখন জানতেন, মুনমুন একজন অ্যাকশন নায়িকা, অভিনয়ে ভালো, ফাইটে ভালো, নাচও ভালো পারে। এসব কারণে আমার ছবি দেখার জন্য হলে দর্শক ভিড় করতেন। আর অশ্লীলতার ব্যাপারটা ক্লিয়ার করি। আমি ১৯৯৬ থেকে ২০০৩ সাল পর্যন্ত ছবিতে নায়িকা হিসেবে নিয়মিত কাজ করেছি। ওই সময় কিন্তু সিনেমায় অশ্লীলতা সেভাবে ছিল না। ২০০৬, ২০০৭ সালের দিকে সিনেমায় অশ্লীলতার জোয়ার ছিল। তত দিনে আমি চলচ্চিত্র থেকে সরে আসি। ১৯৯৬ থেকে ২০০৩ সাল পর্যন্ত ওই সময়ের আমার ছবি দেখেন, কোথাও অশ্লীলতা পাবেন না। আমি কি কোনো ধরনের হট পোশাক পরেছি? খোলামেলা পোশাক পরেছি? সেটার প্রমাণ কোথায়?
আমি যে পোশাক পরে অভিনয় করতাম, তখনকার সব নায়িকাই একই ধরনের পোশাক পরে অভিনয় করতেন। তখনকার আমার সিনেমাগুলো দেখলেই বুঝবেন। একটা মহল আমার পেছনে লেগে আমার এই সর্বনাশ করেছে। ইলিয়াস কাঞ্চন, মান্না, শাকিব খান, আমিন খান, নাঈম, রুবেল, বাপ্পারাজসহ দেশের এ গ্রেডের অনেক নায়কের বিপরীতে নায়িকা ছিলাম আমি। এই সময়ে এসেও অশ্লীলতার ব্যাপারটি ধরে আমাকে কেন বারবার প্রশ্ন করা হয়? না জেনে, না বুঝে অনেকেই আমার দিকে এ বিষয়ে আঙুল তোলেন। খুবই কষ্ট লাগে। আমার ইতিহাসটা সবার জানা উচিত। আমি সেই সময় দেলোয়ার জাহান ঝন্টু, কাজী হায়াৎ, মালেক আফসারীদের মতো গুণী নির্মাতাদের সঙ্গে কাজ করেছি। তাঁরা তো অশ্লীল ছবি নির্মাণ করেননি। সেই সময় আমার ছবিগুলো হিট হচ্ছিল। একটা মহল চাচ্ছিল কীভাবে আমাকে অশ্লীলতার মতো এই বাজে তকমা দেওয়া যায়। সেটাই তারা করেছিল।
<p>সম্পাদক ও প্রকাশক: লিটন হোসাইন জিহাদ</p>
© PothikTV Media Center