বাংলাদেশের বরেণ্য রাজনীতিবিদ, ষাটের দশকের ছাত্র আন্দোলনের কিংবদন্তী নেতা, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে ন্যাপ-কমিউনিষ্ট পার্টি-ছাত্র ইউনিয়নের গেরিলা বাহিনী সংগঠক, ঐক্য ন্যাপ সভাপতি প্রবীন জননেতা পঙ্কজ ভট্টাচার্য আর নেই। স্থানীয় সময় সোমবার প্রথম প্রহরে ( রবিবার দিবাগত রাত ১২.২৮ মিনিট) ঢাকা হেলথ এন্ড হোপ হাসপাতালের ডাক্তাররা তাঁর মৃত্যুর খবর ঘোষণা করেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিলো ৮৩ বছর।১৯৩৯ সালের ৬ আগস্ট চট্টগ্রামের রাউজান থানার নোয়াপাড়া গ্রামে পঙ্কজ ভট্টাচার্য জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ছিলেন সুশিক্ষিত, প্রগতিশীল বর্ণাঢ্য পরিবারের সন্তান। তাঁর পিতা প্রফুল্ল কুমার ভট্টাচার্য ছিলেন উচ্চশিক্ষিত সংস্কারমনা স্কুলশিক্ষক, আর মা মনিকুন্তলা দেবী ছিলেন তৎকালীন সামাজিক অচলায়তন ভাঙা মহীয়ষী নারী। তাঁরা ছিলেন স্বদেশী আন্দোলনের প্রতি ভীষণভাবে অনুরক্ত এবং বিপ্লবীদের নিরাপদ আশ্রয়। পিতামহ রমেশ চন্দ্র ভট্টাচার্য ছিলেন চট্টগ্রামের একজন প্রসিদ্ধ আইনজীবী ও সমাজ সংস্কারক। সুতরাং পারিবারিক পরিমণ্ডলেই পঙ্কজ ভট্টাচার্য প্রগতিশীলতার শপথ নিয়েছেন।পঙ্কজ ভট্টাচার্যের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাজীবনের শুরু চট্টগ্রামের কলিজিয়েট স্কুলে। এরপর পড়েছেন মিউনিসিপ্যাল হাইস্কুল এবং চট্টগ্রাম কলেজে। জাতীয়তাবাদী বিপ্লবীদের ভাবশিষ্য পঙ্কজ ভট্টাচার্য পাকিস্তানী শাসকদের অন্যায্য কার্যক্রমের প্রতিবাদ করতে ছাত্র রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন স্কুলজীবনেই। ১৯৬০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় তখন আইয়ূব খানের সামরিক শাসন এবং বৈরী-বৈষম্যমূলক আচরণের প্রতিবাদে বিস্ফোরন্মুখ। প্রতিদিন ঝাঁঝাঁলো মিছিলে উত্তপ্ত বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস। সেই উত্তাপে পঙ্কজ ভট্টাচার্য জড়িয়ে পড়েন কেন্দ্রীয় ছাত্র রাজনীতির সাথে। ১৯৬২ সালে শিক্ষানীতির বিরুদ্ধে ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্ব দেন তিনি। নেতৃত্বের গুণে তদানিন্তন পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়ন কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি নির্বাচিত হন এবং ১৯৬৩-৬৪ সালে ছাত্র ইউনিয়নের কার্যকরী সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। পঙ্কজ ভট্টাচার্য সামরিক শাসনবিরোধী সংগঠনগুলোকে ঐক্যবদ্ধ করে ‘ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ’ গঠনে বিচক্ষণ নেতৃত্বের পরিচয় দিয়েছেন। ১৯৬৭ সালে স্বৈরশাসক আইয়ূব খান তাঁর বিরুদ্ধে ‘স্বাধীন বাংলা ষড়যন্ত্র মামলা’ দিয়ে তাঁকে কারারুদ্ধ করে। তিনি ১৯৬৭ সালে অন্যান্ন ছাত্র নেতাদের সাথে ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টিতে যোগ দেন এবং ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় অনিবার্য মৃত্যুর মুখোমুখি দাঁড়িয়ে তিনি সংগঠক হিসেবে ন্যাপ-কমিউনিস্ট পার্টি-ছাত্র ইউনিয়নের সমন্বয়ে বিশেষ গেরিলা বাহিনী গঠন করে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। বাংলার স্বাধীনতার স্বর্ণদ্বীপে বিজয়ের পতাকা উত্তোলনে পঙ্কজ ভট্টাচার্যের অবদান অসাধারণ। ১৯৭২ সালে মাত্র ৩৩ বছর বয়সে তিনি দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম রাজনৈতিক দল ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি-ন্যাপ এর সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন এবং ১৯৯৩ সাল পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭৭ থেকে ’৯০ সাল পর্যন্ত তিনি সামরিক স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে গণতান্ত্রিক আন্দোলনের নেতৃত্ব দেন। ১৯৯০ সালে তিন জোটের রূপরেখা তৈরিতে তিনি মুখ্য ভূমিকা পালন করেন। স্বৈরাশাসক এরশাদের পতনের প্রাক্কালে ১৯৯০ সালের শেষ প্রান্তে এসে তাকে আবারো কারারুদ্ধ করা হয়। এরপর ১৯৯৩ সালে দেশের রাজনীতি এবং শাসনতান্ত্রিক ব্যবস্থায় গুণগত পরিবর্তন ঘটিয়ে সত্যিকার অর্থে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন নিয়ে ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে গণফোরাম গড়ে তুলতে অগ্রণী ভূমিকা রাখেন। ২০১০ সালে গণঐক্য গঠন করেন। অতপর গণঐক্য বিলুপ্ত করে ২০১৩ সালে ঐক্য ন্যাপ প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি বর্তমানে ঐক্য ন্যাপের সভাপতি।মঙ্গলবার বিকেলে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে প্রয়াতের শ্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দসহ সর্বস্তরের মানুষ। বর্ষীয়ান রাজনীতিক, গণতান্ত্রিক ও অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ বিনির্মাণের সামনের সারির যোদ্ধা,বীর মুক্তিযোদ্ধা, ঐক্য ন্যাপের সভাপতি জননেতা পংকজ ভট্টাচার্য্যের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করে বিবৃতি দিয়েছেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা ঐক্যন্যাপের সভাপতি প্রবীর কুমার দেব,সহ-সভাপতি কানুলাল মজুনদার, সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম নাঈম, সহ সাধারণ সম্পাদক পরিতোষ রায় সাংগঠনিক সম্পাদক এনামুল হক এনাম,কোষাধ্যক্ষ হাজী তাজুল ইসলাম,সম্পাদক মন্ডলী সদস্য গোপাল চন্দ্র সূত্র ধর মাস্টার,স্বদেশ দেব নাথ মাষ্টার,সরাইল উপজেলা আহবায়ক মোঃ আবির খান, সদস্য সচিব স্বপন দাস, নাসির নগর সভাপতি হর কুমার সরকার,দপ্তর সম্পাদক শিব চরণ বিশ্বাস মহিলা সম্পাদিকা তাপসী রাণী রায় প্রমুখ।
বর্ষীয়ান রাজনীতিক, গণতান্ত্রিক ও অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ বিনির্মাণের সামনের সারির যোদ্ধা,বীর মুক্তিযোদ্ধা, ঐক্য ন্যাপের সভাপতি জননেতা পংকজ ভট্টাচার্য্যের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করে বিবৃতি দিয়েছেন বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদ ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা কমিটির সভাপতি প্রবীর চৌধুরী রিপন,সাধারন সম্পাদক সোহেল সরকার।বিবৃতিতে তারা শোকাহত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।
<p>সম্পাদক ও প্রকাশক: লিটন হোসাইন জিহাদ</p>
© PothikTV Media Center