আমার বানানো হ্যান্ডওয়াশ ও আম্মার স্মৃতি

আনজুম রুহী: আম্মু, “বেসিনের হ্যান্ড ওয়াশ থেকে ওয়াশরুমের ‘স্টুডিও-এক্স’ ম্যান সাবানের গন্ধ পাচ্ছি, কোম্পানি কি সাবানের পাশাপাশি ম্যান হ্যান্ডওয়াশও বানিয়েছে?”

অবাক হয়ে ছোট ছেলে প্রশ্নগুলো করে যাচ্ছে।

আমিও জানি না, ‘স্টুডিও-এক্স’ ম্যান সাবান কোম্পানি, ম্যান’দের জন্য হ্যান্ডওয়াশ বাজারজাত করেছে কিনা।

না করে থাকলে,ম্যান সাবান-শ্যাম্পুর মতো হ্যান্ডওয়াশও বাজারজাত করা প্রয়োজন।

ম্যান’দের হাত তো ওমেন’দের মতো নরম তুলতুলে না। ওদের শক্তপোক্ত হাত দিয়ে কত ভারী কাজ করতে হয়।

বাজারের ভারী ভারী ব্যাগ বহন করতে হয়, বাসায় ভারী ফার্নিচার নাড়াতে হয়, আচারের বৈয়াম বা সসের বোতলের ঢাকনা আটকে গেলে শক্তি দিয়ে খুলতে হয়।

পুরো পরিবারের হাল শক্ত হাতে ধরে রাখতে হয়। কোন কোন ম্যান’কে তার শক্ত হাত দিয়ে জুড়ে স্ত্রীর গালে থাপ্পড় মারতে হয়..!

সেইজন্য, ম্যান’দের হাতের সুরক্ষার জন্য ম্যান হ্যান্ডওয়াশ বাজারজাত করা অবশ্যই  প্রয়োজন।

এবার আসি আসল কথায়,বেসিনের হ্যান্ড ওয়াশ শেষ হয়ে গেছে। বাজার করতে গেলে আনতে মনেই থাকে না, ছেলেমেয়ে বেসিনে গেলে প্যানপ্যান করে।

যখন হ্যান্ডওয়াশের প্রচলন ছিলো না, আমার বুদ্ধিমতি আম্মাকে দেখতাম, “সাবানের ছোট টুকরো গুলোতে পানি দিয়ে  একটা পাতিলে বসিয়ে জ্বাল দিতেন। কিছুক্ষণ পর টুকরো সাবানগুলো গলে যেতো। ঠান্ডা করে আম্মা বোতলে ভরে ফেলতেন, ঠিক যেনো হ্যান্ডওয়াশ..!”

আম্মার বানানো হ্যান্ডওয়াশ পেয়ে আমরা খুশি হয়ে যেতাম।

আর এখন, বাজার থেকে বোতল কিনে আনো, অথবা রিফিল কিনে কেঁচি দিয়ে প্যাকেটের মুখ কাটো, বোতলে ঢালো, ব্যাস..!

আমিও ছেলের ওয়াশরুম থেকে ছোট টুকরো ‘স্টুডিও-এক্স’ ম্যান সাবান, পানি দিয়ে চুলায় বসিয়ে আম্মার মতো হ্যান্ডওয়াশ বানিয়ে ফেললাম..!

বানালাম ঠিকই কিন্তু জানালাম না, যদি শুনতে হয় ,

“আম্মু, তুমি এতো কৃপণ, সাবান গলিয়ে হ্যান্ডওয়াশ বানিয়েছো..?”

ছেলে ঠিকই তার সাবানের পরিচিত গন্ধ চিনে জিজ্ঞেস করছে।

আমার চুল অনেক লম্বা ছিলো, সেই চুলের যত্নে আম্মা বাজারের শ্যাম্পু ব্যাবহার করতে দিতেন না। তখন ভালো প্রোডাক্ট গুলো এতো হাতের নাগালে ছিলোও না।

আমলকি, রিঠা, হরতকি, মেহেদীপাতা, আরো কি কি দিয়ে ঘরোয়া শ্যাম্পু বানিয়ে আমার চুল ধুতেন, চুলও অনেক সিল্কি হতো। এখন বিভিন্ন অনলাইন গ্রুপে এসব হারবাল প্রোডাক্টের বিজ্ঞাপন দেখি।

আম্মা বাজারের নারিকেল তেল ব্যাবহার করতে দিতেন না। বাজারের ভেজাল তেলে আমার লম্বা-ঘন চুল নষ্ট হবে, তাই গাছের নারিকেল পাড়িয়ে কত কষ্ট করে ঘরোয়া পদ্ধতিতে নারিকেল তেল বানাতেন।

সেই তেল থেকে নারিকেলের নাড়ুর ঘ্রান আসতো। রাতে ঘুমালে ভয়ে থাকতাম, আমার চুলে পিঁপড়ে ধরে কিনা..!

আমাদের আম্মারা কৃপণ ছিলেন না, তারা চেষ্টা করতেন নিজে কষ্ট করে ছোট ছোট ঘরোয়া কাজগুলো দিয়ে, কিভাবে সংসারের একটু আয় করবেন।

কিভাবে সংসারে উপার্জনক্ষম মানুষটার খরচ কমাবেন। কিভাবে পরিবারকে বাজারের কেনা ভেজাল জিনিস থেকে ঘরোয়া খাঁটি জিনিসে অভ্যস্ত রাখবেন।

আম্মার জন্য বুকভরা ভালোবাসা, আম্মাকে আবার ফিরে পেলে বলতাম, “আম্মা, এখন প্রযুক্তি অনেক উন্নত হয়েছে, আপনাকে আর কষ্ট করে আমাদের জন্য হ্যান্ডওয়াশ, শ্যাম্পু, তেল বানাতে হবে না। সবকিছু এখন হাতের নাগালেই প্যাকেটজাত পাওয়া যায়।

 তারপরও আম্মা নিজ হাতে মমতা আর ভালোবাসায়, আমাদের জন্য এসবকিছু বানাতেন আর বলতেন, “তোদের বাজারের ওগুলো আমার হাতে বানানো জিনিসের মতো খাঁটি না..!”

মা’গো আমাদেরকে ভালো রাখতে কতো কঠিন জীবনযাপন করেছেন, আমারা এখন সহজ জীবনযাপনেও হাঁপিয়ে যাই..!”

লাভ ইউ মা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *


Notice: ob_end_flush(): Failed to send buffer of zlib output compression (0) in /home/pothiknews/public_html/wp-includes/functions.php on line 5309