নারী জাগরণের অগ্রদূত মহীয়সী নারী বেগম রোকেয়া। তার চেষ্টার ফলে বর্তমানে পুরুষের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এগিয়ে যাচ্ছেন নারীরা। সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক উন্নয়নে সমান অংশীদারের কৃতিত্ব নারীর। তবুও কিছু কিছু জায়গায় নারীরা আজও অবহেলিত। ভুগছেন নিরাপত্তাহীনতায়, বাড়ছে সহিংসতা। তাই নারীরা আজও নিরাপত্তার আশ্রয় খুঁজে বেড়ায়, বলতে চায় তাদের ইচ্ছার কথা। সম্প্রতি আন্তর্জাতিক নারী দিবস নিয়ে জাগো নিউজের সঙ্গে কথা বলেছেন তিতুমীর কলেজের কয়েকজন নারী শিক্ষার্থী। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন মামুনূর রহমান হৃদয়।
নারীদের জন্য প্রতিটি দিনই সমান
শারমিন সুলতানা, সমাজবিজ্ঞান বিভাগ
বিজ্ঞাপন
ঘর থেকে শুরু করে কর্মক্ষেত্র কোথায় নেই নারী! কখনো মা হয়ে, কখনো বোন হয়ে, আবার কখনোবা স্ত্রী। পুরুষের জীবনে প্রতিটি মুহূর্তে নারীর ভূমিকা অপরিসীম। ৮ মার্চ নারী দিবস, এটি আমাদের কাছে অনেক আনন্দের একটি দিন।আমরা নারীরা কখনো বিশেষ অধিকার চাই না, চাই শুধু মানুষ হিসেবে মানুষের হাত ধরে নিজের পরিবার, সমাজ ও দেশের জন্য কাজ করতে। নারীদের জন্য প্রতিটি দিনই সমান ঠিক যেমনটি একজন পুরুষের। কারণ দিনশেষে নারী পুরুষ সবাই মানুষ। মাথা উঁচু করে বাঁচার অধিকার আছে সবার। আমরা নারীরা একদিনের জন্য বিশেষ হতে চাই না ,আমরা সারা বছর মাথা উঁচু করে বাঁচতে চাই। রাষ্ট্র ও সমাজের কাছে এটাই প্রত্যাশা।
নারী দিবস বিশ্বব্যাপী পালিত উল্লেখযোগ্য একটি দিন। এছাড়াও নারীদের সম্মান এবং অধিকার সংরক্ষণের জন্য এই দিনটি মৌলিক প্ল্যাটফর্ম হিসেবে পরিচিত। এই দিনে বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নানা কর্মসূচি পালিত হয়। আমি মনে করি, নারীকে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার জন্য শিক্ষা ও কর্মসংস্থান উভয়ই গুরুত্বপূর্ণ। শিক্ষা তার বুদ্ধিজীবীতা, জ্ঞান, ও আত্মবিশ্বাস উন্নত করে, যা তাকে স্বাধীনতা এবং স্বাধীন নির্ধারণে সাহায্য করে। অন্যদিকে নিরাপদ কর্মসংস্থান নারীদের বহুদূর পথ চলতে সাহায্য করে। তাই নারীদের গুরুত্ব এবং অধিকার বাড়াতে সচেতনার পাশাপাশি শিক্ষা ও নিরাপদ কর্মসংস্থান বাড়ানো প্রয়োজন। এতে নারীরা সামনে এগিয়ে চলবে। পাশাপাশি সরকার এবং সামাজিক সংগঠনগুলোর নারীদের ক্ষমতা এবং অধিকারের জন্য কাজ করতে হবে।
বিজ্ঞাপন
‘নারী দিবস’ সমাজের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে অফিস এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে। কারণ কিছু মানুষ কর্মজীবী মেয়েদের কিছুটা ভিন্ন চোখে দেখেন। যেমনটা তারা নিজের পরিবারের মেয়েদের দেখেন না। তাদের মানসিকতার পরিবর্তনে নারী দিবস উদযাপন ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে। এছাড়াও অনেক সময় দেখা যায় কিছু তরুণদের মধ্যেও নারী বিদ্বেষের উপস্থিতি। তাই ‘নারীবাদী’ শব্দটা আজকাল ফেসবুকে ট্রোলে রূপ নিয়েছে। তাই নারী দিবসে কর্পোরেট ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে নারী বিষয়ক অনুষ্ঠান সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টাতে সাহায্য করবে।
বিজ্ঞাপন
নারী এই শব্দটার মধ্যে লুকিয়ে আছে কোমলতা, মমতা, ভালোবাসা। নারী কখনো মা, কখনো বোন, কখনো স্ত্রী, কখনো কন্যা রূপে পুরুষের পাশে থাকে। একজন নারী সকাল থেকে রাত পর্যন্ত সংসারের প্রতি তার দায়িত্ব পালন করে যায়। কিন্তু অনেক নারীই দিনশেষে পরিবারের কাছে হয় অবহেলিত। দিনশেষে তাকে শুনতে হয় সারাদিন কী করে সে? নারী এই অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসার একমাত্র উপায় নারীর অর্থনৈতিক সাবলম্বী হওয়া। তাই প্রতিটি নারীকে হতে হবে সচেতন। যদিও বর্তমানে নারীরা আগের তুলনায় অনেক এগিয়ে এসেছে। পুরুষের পাশাপাশি সমান তালে কাজ করে পরিবারে আর্থিক সহযোগিতা করছে তবুও অনেক নারী এখনো পিছিয়ে আছে। তাদের জন্য পরিবার, সমাজ এবং সরকারের আরও সচেতন হতে হবে। প্রত্যেক নারী যেন সাবলম্বী হতে পারে তার ব্যবস্থা করতে হবে সরকারকে। তাহলেই নারীরা সমাজে যথাযথ মর্যাদা পাবে। শুধু নারী দিবস একটা দিনই নারীর জন্য সম্মান নয় প্রতিদিনই নারীদের সম্মান করতে হবে। পুরুষের পাশাপাশি নারীকে সব ক্ষেত্রে সমান তালে এগিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে তাহলেই দেশ ও জাতির উন্নতি সম্ভব।
ইমি/ পথিক নিউজ