মোশারফ করিম ; চেহারাটাই এক কারসাজি

দেখতে হ্যান্ডসাম বা  গুড লুকিং হওয়া  ছাড়া ও অভিনয় জগতে বাজিমাত সম্ভব  তা অবিশ্বাস্য ভাবে দেখিয়ে দিয়েছেন বাংলাদেশের নাট্যজগতের কয়েকজন অভিনয় শিল্পী।  তার মধ্যা মোশাররফ করিম অনন্যসাধারণ।

   মোশাররফ করিম, দুর্দান্ত অভিনয় দিয়ে মন জয় করেনি এমন দর্শক কমই রয়েছে। মোশাররফ করিম,  দেখতে আহামরি সুন্দর নয়, প্রথম দেখায় মনে ধরার মতো সুদর্শন নয়। কিন্তু মোশাররফ করিমের অভিনয় দেখার পর তার অভিনয় সত্তার প্রেমে যে কেউ পড়বে। যে কোনো চরিত্রকে তিনি এতোটা জীবন্তভাবে ফুটিয়ে তুলেন যে এক মুহূর্তের জন্য ও মনে হয় না তিনি অভিনয় করছেন।  আর সব চেয়ে মজার বিষয় হচ্ছে তিনি যে চরিত্রেই অভিনয় করোক না কেন সেই চরিত্রেই তাকে সেরা অভিনেতা বলে মনে হয়। যেমন তিনি গ্রামের ছেলে হিসেবে অভিনয় করলে তার ভাষা, চেহারার অভিব্যক্তি সব কিছু মিলিয়ে তাকে একেবারে গেয়ো বলেই মনে হয়। দর্শকের তখন মনে হবে তার চেহারা শুধু এই চরিত্রের জন্য ই পারফেক্ট।  অথচ, তাজ্জব বিষয় হচ্ছে যে চাকুরীজীবী স্বামী, স্মার্ট বিজনেসম্যান এমন কি প্রেমিক পুরুষ হিসেবে ও  তিনি যে কোনো হ্যান্ডসাম,  ড্যাসিং হিরোর চেয়ে কোনো অংশে কম নন।

কাবুলিয়াতনামা ধারাবাহিক নাটকে তিনি একাধারে স্বামী এবং প্রেমিক দুইটি চরিত্রকে এমন আত্মবিশ্বাস এবং সাহসের সাথে পালন করেছেন, প্রতিটি মুহূর্তেই ছিলো উত্তেজনা। ডাবল গেইম খেলতে গিয়ে তার বিভিন্ন কৌশল,  স্ত্রী এবং প্রেমিকা দুজনজেই হাতে রাখার যে মহা প্রয়াসই, প্রতিটি ক্ষেত্রেই মনে হয়েছে, এই চরিত্র শুধু  মোশাররফ করিমের জন্য ই প্রযোজ্য।  সবচেয়ে মজার বিষয় হচ্ছে যে, মোশাররফ করিমের চেহারার অভিব্যক্তিই তার চরিত্রের অনেকাংশ কাভার করে দেয়।

মোশাররফ করিম ১৯৯৯ সালে এক পর্বের নাটক অতিথি-এ অভিনয়ের মাধ্যমে ছোট পর্দায় আগমন করেন।এই নাটকটি ফেরদৌস হাসান পরিচালনা করেন এবং এটি চ্যানেল আই-এ প্রচারিত হয়।

নাটকে তার সত্যিকার পথচলা শুরু হয় ২০০৪ সাল থেকে। ২০০৪ সালে তিনি দুটি নাটকে অভিনয় করেন, যা অভিনয়জগতে তাকে এক অধ্যবসায়ী চরিত্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে। তিনি বিখ্যাত টেলিফিল্ম ক্যারাম-এ তিশার বিপরীতে অভিনয় করেন। এরপর থেকেই তিনি বিভিন্ন নাটক এবং মেগা-ধারাবাহিকে অভিনয় শুরু করেন। ২০০৮ সালে তিনি দেয়াল আলমারি নাটকে অভিনয় করেন। এই নাটকের জন্য তিনি মেরিল-প্রথম আলো পুরস্কার-এ সমালোচক শাখায় সেরা টিভি অভিনয়শিল্পী (পুরুষ) বিভাগে পুরস্কৃত হন। তিনি তার প্রথম মেগা-ধারাবাহিক ৪২০-এ অভিনয় করেন। এই নাটকটি চ্যানেল আই-এ প্রচারিত হয়। এরপর তিনি জনপ্রিয় ধারাবাহিক ভবের হাট, ঘর-কুটুম-এ অভিনয় করেন। এছাড়াও তিনি জিম্মি, দুই রুস্তম, অন্তনগর, ফ্লেক্সিলোড, কিংকর্তব্যবিমূঢ়, আউট অফ নেটওয়ার্ক, সাদা গোলাপ, ৪২০, জুয়া, সুখের অসুখ, সিরিয়াস কথার পরের কথা, সন্ধান চাই, ঠুয়া, লস, সিটি লাইফ, বিহাইন্ড দ্যা সিন, তালা, শূন্য পিক পকেট, ফাউল, জাঁতাকল নাটক ও টেলিফিল্মে অভিনয় করেন। ২০০৯ সালে হাউজফুল নাটকে অভিনয়ের জন্য তারকা জরিপে শ্রেষ্ঠ পুরুষ টিভি অভিনয়শিল্পী বিভাগে মেরিল-প্রথম আলো পুরস্কার অর্জন করেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *