ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ রয়েছে। আর ডলার সংকটে এলসি সুবিধা স্বাভাবিক না হওয়ায় ভারত ছাড়া অন্যান্য দেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানিও বন্ধ রয়েছে। ফলে গত ১৫ দিন চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর দিয়ে কোনো পেঁয়াজ আমদানি হয়নি। যদিও গত আট মাসে পেঁয়াজ আমদানিকারকরা আড়াই লাখ মেট্রিক টন পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি পেয়েছিলেন। কিন্তু ডলার সংকটের কারণে পর্যাপ্ত পরিমাণ পেঁয়াজ আনতে পারছেন না আমদানিকারকরা। অন্যদিকে এবার দেশীয় পেঁয়াজের ফলন ভালো হওয়ায় বাজারের পেঁয়াজের দাম ১০০ টাকার অধিক।
চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরের উদ্ভিদ সঙ্গনিরোধ স্টেশন সূত্রে জানা যায়, চলতি অর্থবছরে ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি দেয়া হয় দুই লাখ ৭১ হাজার মেট্রিক টন। এছাড়া গত
২২-২৩ অর্থবছরের চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে মোট চার হাজার ৪৪৬ মেট্রিক টন পেঁয়াজ আমদানি হয়েছিল।
গতকাল চট্টগ্রামের বিভিন্ন পাইকারি ও খুচরা বাজার ঘুরে পেঁয়াজের দামের চিত্র দেখা যায়, পাইকারি বাজারে পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৯০ থেকে ৯৫ টাকায়। আবার কোনো কোনো দোকানে ১০০ টাকায়ও বিক্রি করা হচ্ছে। আর খুচরা বাজারে প্রতিকেজি ১১০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এক মাস আগেও দেশীয় পেঁয়াজ ৬৫-৭০ টাকায় বিক্রি হয়েছিল। সর্বশেষ গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে কেজিতে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে ১৫-২০ টাকা। ক্রেতাদের অভিযোগ, ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেটের কারণে বাজারে কেজিপ্রতি পেঁয়াজ প্রায় ১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কিন্তু বিক্রেতাদের অভিযোগ, ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি না হওয়ায় দাম বাড়ছে। চকবাজার এলাকার ক্রেতাদের অভিযোগ, প্রতি বছর পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ ইস্যু নিয়ে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট করে পেঁয়াজের দাম বাড়িয়ে দেন। চকবাজার বাজার এলাকার ক্রেতা মাইদুল ইসলাম বলেন, গত সপ্তাহে ৮০ টাকা ছিল পেঁয়াজের কেজি। মাত্র কয়েক দিনের ব্যবধানে কীভাবে ১১০ টাকা হলো? এগুলো সিন্ডিকেটের কারণে হয়েছে। যেভাবে দাম বাড়ছে, পেঁয়াজ খাওয়াই বন্ধ করে দিতে পারলে ভালো হবে। মূলত রমজান ও ঈদ সামনে রেখে সক্রিয় পেঁয়াজ সিন্ডিকেট চক্র। ফলে বাড়ছে পেঁয়াজের দাম। এতে সীমিত আয়ের মানুষ পড়েছে বিপাকে।
অন্যদিকে খাতুনগঞ্জ বিক্রেতারা বলছেন, ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি না হওয়ায় দাম বাড়ছে। এভাবে চলতে থাকলে ঈদে পেঁয়াজের বাজার নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে। পাইকারি পর্যায়ে দাম কমলে খুচরায়ও কমে যায়। তবে বর্তমানে যেভাবে দাম বাড়ছে, এভাবে চলতে থাকলে ঈদের আগেই পেঁয়াজের দাম ১৫০ টাকা পার হতে পারে। আমদানির মাধ্যমে পেঁয়াজের বাজার নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে।
চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরের উদ্ভিদ সঙ্গনিরোধ স্টেশনের উপ-পরিচালক শাহ আলম শেয়ার বিজকে বলেন, নিয়মিত পেঁয়াজ আমদানির অনুমতিপত্র ইস্যু হচ্ছে। আর চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে পেঁয়াজ আমদানি তুলনামূলকভাবে অনেক কম হয়।
চট্টগ্রামের পেঁয়াজ আমদানিকারক রফিকুল মাওলা বলেন, ভারত পেঁয়াজ বন্ধ রাখায় দেশের কৃষকের উৎপাদিত পেঁয়াজের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত হয়েছে। এটা ভালো দিক। যদিও আমাদের পেঁয়াজের আইপি (ইমপোর্ট পারমিট) অর্থাৎ আমদানি অনুমতি নেয়া আছে। আশা করছি আমদানি সীমিত আকারে আবার চালু হবে, তখন পেঁয়াজের দাম ধীরে-ধীরে কমবে। আর যত দ্রুত পেঁয়াজ আমদানি শুরু হবে, তত দ্রুত পেঁয়াজের দাম কমবে, নয়তো আরও বাড়বে।
উল্লেখ্য, দেশে বছরের পেঁয়াজের চাহিদা ৩৫ থেকে ৩৬ লাখ টন। এর বিপরীতে গত বছর দেশে উৎপাদিত হয়েছে ৩২ লাখ টন। আর পেঁয়াজ আমদানি হয় গড়ে আট-দশ লাখ টন।
ইমি/পথিক নিউজ