পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে অনিয়ম থেকে নেই। কখনও এইচএস কোড পরিবর্তন। আবার কখনও এইচএস কোড জালিয়াতি। কখনও এক পণ্য ঘোষণা দিয়ে অন্য পণ্য আমদানি। আবার কখনও পণ্যের পরিমাণ কম দেখানো। সুযোগ বুঝে আমদানিকারক ও সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট যোগসাজশ করে এসব অনিয়ম করে আসছে। তবে কোনো কোনো ক্ষেত্রে কাস্টমসের সহায়তায় আমদানিকারক, সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট এসব অনিয়ম করে আসছে। অনিয়ম ও রাজস্ব ফাঁকি রোধে বসে নেই কাস্টমস। জালিয়াতি রোধে বেশিরভাগ পণ্যেই কাস্টমস কায়িক পরীক্ষা করে।
চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসে এক মাসে ১০৪টি চালানের কায়িক পরীক্ষা করা হয়েছে। যাতে অনিয়ম মিলেছে ৬৯টি চালানে। এসব চালানে পণ্যের এইচএস কোড পরিবর্তন, এইচএস কোড জালিয়াতি, ঘোষণার চেয়ে অতিরিক্ত পণ্য আমদানি করা হয়েছে। অনিয়ম পাওয়া এসব চালানে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব ফাঁকি দেয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। অনিয়ম পাওয়া এসব চালানের মধ্যে কিছু চালানে রাজস্ব আদায় করা হয়েছে, কিছু চালানে আদায় কার্যক্রম চলমান রয়েছে। আবার যেসব চালানে অনিয়ম পাওয়া যায়নি তা খালাস করা হচ্ছে। চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের এক প্রতিবেদনে এই তথ্য উঠে এসেছে। এনবিআর সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চলতি বছরের জানুয়ারি চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের এআইআর শাখা অ্যাসাইকুডা ওয়ার্ল্ড সিস্টেমে ৯২টি আমদানি চালান লক করে। জানুয়ারি মাস ও তার আগে লক করা পণ্য চালানের মধ্যে ১০৪টি চালানের কায়িক পরীক্ষা করা হয়েছে। এর মধ্যে ৬৯টি চালানে অনিয়ম পাওয়া গেছে। আর ৬৯টি চালানের মধ্যে ২২টি চালানের বিপরীতে শুল্ককর আদায় করা হয়েছে। ৪৭টি চালানে অনিয়ম পাওয়া গেলেও তা এখনও নিষ্পত্তি হয়নি। শতকরা হিসেবে ১০৪টি চালানের মধ্যে ৬৬ দশমিক ৩৫ শতাংশ চালানে অনিয়ম উদ্ঘাটিত হয়েছে। অনিয়ম করা চালানের বিপরীতে অতিরিক্ত শুল্ককর আদায় হয়েছে প্রায় এক কোটি ৬৯ লাখ টাকা। অনিয়মের বিপরীতে জরিমানা আদায় করা হয়েছে প্রায় তিন কোটি ১৩ লাখ টাকা। জরিমানা ও অতিরিক্ত শুল্ককর আদায় করা হয়েছে প্রায় চার কোটি ৮২ লাখ টাকা।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, শুধু জানুয়ারি লক করা ৯২টি আমদানি চালানের মধ্যে ৫১টি চালানের কায়িক পরীক্ষা করা হয়। বাকি ৪১টি চালানের কায়িক পরীক্ষা প্রক্রিয়াধীন। কায়িক পরীক্ষা করা ৫১টি চালানের মধ্যে ১৯টি চালানের ঘোষণা সঠিক পাওয়া গেছে। বাকি ৩২টি চালানে পাওয়া গেছে অনিয়ম। অনিয়ম উদ্ঘাটিত হওয়া ৩২টি চালানের মধ্যে তিনটি চালানের বিপরীতে শুল্ককর আদায় করা হয়েছে। অনিয়ম উদ্ঘাটিত অবশিষ্ট ২৯টি চালানের বিপরীতে শুল্ককর আদায় কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
প্রতিবেদন অনুযায়ী ২২টি চালানের অনিয়ম উদ্ঘাটিত ও শুল্ককর আদায় করা হয়েছে। আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলো হলোÑকেরানীগঞ্জ এলাকার মরিয়ম ট্রেডার্স, রাজধানীর নিউ ইস্কাটনের টেকনো প্লাস্ট কনসালটেসি, ঢাকার লুবনান ট্রেড কনসোর্টিয়াম লিমিটেড, চট্টগ্রামের ফরিন গ্লাস অ্যান্ড হার্ডওয়্যার, রেডিয়েন্ট হারবাল লিমিটেড, যমুনা ফার্টিলাইজার কোম্পানি লিমিটেড, চট্টগ্রামের টিঅ্যান্ডএন ট্রেডিং, ঢাকার ফেন্সি এন্টারপ্রাইজ, ঢাকার মেসার্স আনাস ট্রেডিং, নারায়ণগঞ্জের ইনকনেট লিমিটেড, ক্রাউন সিমেন্ট, চট্টগ্রামের সিকো বিল্ডার্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ার্স লিমিটেড, মুন্সীগঞ্জের রিমার্ক এইচ বি লিমিটেড, ঢাকার খান ট্রেডিং, ঢাকার নিউ সেভেন ডেকর ফেব্রিক্স, মাইওয়ান ইলেকট্রনিকস ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড, যশোরের এনআর ট্রেড, ঢাকার আমির কনস্ট্রাকশন অ্যান্ড কোং লিমিটেড, চট্টগ্রামের মেসার্স হেলাল এন্টারপ্রাইজ, ঢাকার আলিফ করপোরেশন। এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে বেশিরভাগই এইচএস কোড অনিয়ম ও ঘোষণার অতিরিক্ত পণ্য পাওয়া গেছে।
অপরদিকে, জানুয়ারি মাসের আগে লক করা প্রতিষ্ঠানের কায়িক পরীক্ষায় অনিয়ম পাওয়া ও রাজস্ব আদায় কার্যক্রম চলমান থাকা আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান হলো ১৮টি। প্রতিষ্ঠানগুলো হলোÑঅপসোনিন ফার্মা লিমিটেড, ময়মনসিংহের তানিয়া কটন মিলস লিমিটেড, গুলশানের আহসান মতিনা ফুড, ঢাকার এস বি ট্রেডার্স, ঢাকার ট্রেড লিংক ইন্টারন্যাশনাল, ঢাকার আমানা ইন্টারন্যাশনাল প্রাইভেট লিমিটেড, ঢাকার জরিনা করপোরেশন, ঢাকার গাঙচিল এন্টারপ্রাইজ, গাজীপুরের আমেরিকান অ্যান্ড ফ্রাইড (বাংলাদেশ) লিমিটেড, সাভারের মেরিনা অ্যাকসেসরিজ ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড, ঢাকার নাভিদ ডিস্ট্রিবিউশন লিমিটেড, গাজীপুরের অ্যাডেক্স ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেড, নরসিংদীর আদুরী নিট কম্পোজিট লিমিটেড, পপুলার ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড, ময়মনিসংহের নারিশ ফুডস লিমিটেড, সাভারের এ এস লেদার এক্সপোর্ট লিমিটেড।
অপরদিকে, জানুয়ারি মাসে কায়িক পরীক্ষা করে অনিয়ম পাওয়ায় রাজস্ব আদায় কার্যক্রম চলমান থাকা প্রতিষ্ঠানগুলো হলোÑঢাকার আর কে ইন্টারন্যাশনাল, টেকনো ড্রাগস লিমিটেড, ঢাকার আল-ফালাহ ফুডস অ্যান্ড এগ্রো কোং, যশোরের মাল্টি কম্পিউটার ল্যান্ড, ঢাকার হেজপেজ ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড, ঢাকার ভেঞ্চার বাংলাদেশ, ঢাকার বাংলামার্ক করপোরেশন, ঢাকার খাজা এন্টারপ্রাইজ, ইস্পাহানি ফুডস লিমিটেড, ঢাকার পপুলার, ঢাকার মান্নান অটোস, রাইট ফিট ফুটওয়্যার, আমিন হাইড্রো ফিনোম্যাটিক, নারায়ণগঞ্জের মেসার্স আয়েশা গ্রিন সিগন্যাল, চট্টগ্রামের এইচএস কম্পোজিট টেক্সটাইলস লিমিটেড, কক্সবাজারের এম কে এ হ্যাচারি, ঢাকার অটো মিউজিয়াম লিমিটেড, ঢাকার আইডিয়াম ইম্পোর্টস, দি একমি ল্যাবরেটরিজ লিমিটেড, নরসিংদীর দেবনাথ টেক্সটাইল, ঢাকার হাফসা আজিকা এন্টারপ্রাইজ, চট্টগ্রামের আরিয়াল এন্টারপ্রাইজ, নারায়ণগঞ্জের রিভেন এগ্রো কেমিক্যালস লিমিটেড, রেনাটা লিমিটেড, ঢাকার মেসার্স এল এন সারাহ ট্রেডিং, এসএস ট্রেডিং করপোরেশন হাউস, মেঘনা অটোমোবাইলস লিমিটেড, কেএসআরএম স্টিল প্লান্ট লিমিটেড। এসব প্রতিষ্ঠানের বেশিরভাগ এইচএস কোড অনিয়ম ও ঘোষণার অতিরিক্ত পণ্য পাওয়া গেছে।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, জানুয়ারি মাসের আগে লক করা ও জানুয়ারি মাসে কায়িক পরীক্ষা করে যেসব প্রতিষ্ঠানের অনিয়ম পাওয়া যায়নি সেগুলো হলোÑ প্রাণ ডেইরি লিমিটেড, ডায়িং ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড, ফেয়ার ইউনাইটেড কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড, জিনিয়ান কেমিক্যালস ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড, তানজিন এন্টারপ্রাইজ, টিএমএস ফ্যাশন লিমিটেড, রিমার্ক এইচবি লিমিটেড, মেসার্স আর বি ট্রেডার্স, মেসার্স জনতা টেক্সটাইল, টি এম জেন্স লিমিটেড, এম জি কটন মিলস লিমিটেড, এমএস ভুঁইয়া এন্টারপ্রাইজ, শিকদার ইন্টারন্যাশনাল, এম এম ট্রেডিং, ভারটেক্স পেপার অ্যান্ড বোর্ড মিলস লিমিটেড, মাস্টার করপোরেশন।
অপরদিকে, জানুয়ারি মাসে কায়িক পরীক্ষা করে ঘোষণা অনুযায়ী সঠিক পাওয়া প্রতিষ্ঠানগুলো হলোÑমেসার্স আল-ফালাহ ফুডস অ্যান্ড এগ্রো কোং, নাভিদ ডিস্ট্রিবিউশন লিমিটেড, মেসার্স নাইয়ান করপোরেশন, মানহা ট্রেডিং, লিঙ্কেজ ইন্টারন্যাশনাল প্রাইভেট লিমিটেড, ডায়া এগ্রো কেমিক্যাল, এইচএস কম্পোজিট টেক্সটাইলস লিমিটেড, মনিকো ফার্মা লিমিটেড, রিলায়েন্স ওয়াশিং ইন্ডাস্ট্রি লিমিটেড, সামুদা কেমিক্যাল কমপ্লেক্স লিমিটেড, আবদুল্লাহ ট্রেডার্স, ইস্পাহানি ইসলামিয়া চক্ষু ইনস্টিটিউট অ্যান্ড হসপিটাল, আলিম কেমিক্যাল, মেসার্স এম ডি শহীদুল্লাহ হোসেন, টিএমএসএস সিএনজি রি-ফুয়েলিং স্টেশন, চায়না রেলওয়ে গ্রুপ লিমিটেড, সামিয়া ইন্টারন্যাশনাল ও পাওয়ার সল্যুশন ট্রেডিং কোম্পানি।
ইমি /পথিক নিউজ