ঢাকায় ডিসি সম্মেলনে উত্তরাঞ্চলের ৬ জেলার জেলা প্রশাসক (ডিসি) চীনের অর্থায়নে তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করার প্রস্তাব করেছেন। আর সরকার ডিসিদের প্রস্তাব গুরুত্বসহকারে নিয়েছে। এর জবাবে পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী ও নৌ প্রতিমন্ত্রী বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যেহেতু তিস্তা প্রকল্প বাস্তবায়নের কথা বলেছেন তার মানে অবশ্যই তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হবে। তিস্তা নিয়ে সমীক্ষা শেষ পর্যায়ে। এটার বাস্তবায়ন দেখতে অপেক্ষা করতে হবে।
উল্লেখ, চীনের অর্থায়নে তিস্তা প্রকল্প বাস্তবায়নের লক্ষ্যে সরকার পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিল। কিন্তু ভারতের চাপে এবং দিল্লিপন্থী কিছু আমলার অনিহায় সে প্রকল্পের ফাইল লালফিতায় আটকে যায়।
সম্মেলনে সারাদেশে বাঁধ নির্মাণের কাজ করার বিষয়েও ডিসিদের সমন্বয়ের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। জেলা-উপজেলা পর্যায়ে নদী রক্ষা কমিটিগুলোর বৈঠক করার ওপর জোর দিয়েছে। পাশাপাশি মাঠ পর্যায়ে প্রকল্প বাস্তবায়নে ত্রুটি বিচ্যুতি থাকলে চিহ্নিত করে জানানোরও ডিসিদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এছাড়া মজুতবিরোধী অভিযান সফল করতে ডিসিদের সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে। নির্দেশনা দিয়েছি বস্তার গায়ে জাতের নাম লেখা নিয়ে যে পরিবর্তন এসেছে, সেটা বাস্তবায়নে ডিসিরা যেন সার্বিক সহযোগিতা করে। দেশের জেলা- উপজেলা থেকে ইউনিয়ন পর্যায়ে সকল অফিস দুর্নীতিমুক্ত রাখেতে ডিসিদের সহযোগিতা চেয়েছেন দুর্নীতি দমন কমিশন। গতকাল সোমবার রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে ডিসি সম্মেলনের দ্বিতীয় দিনের ষষ্ঠ কার্য-অধিবেশন শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক বলেন, তিস্তা নিয়ে সমীক্ষা শেষ পর্যায়ে। এটা বাস্তবায়ন হবে। এজন্য আপনাদের অপেক্ষা করতে হবে। এসময় জেলা প্রশাসকদের সমন্বয়ে বাঁধ নির্মাণের কাজ করা হবে। এ পরে অন্যান্য মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীরা বক্তব্য রাখেন।
পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক বলেন, আজকের সম্মেলনে জেলা প্রশাসকরা ২০টি প্রস্তাবনা দিয়েছেন। এর মধ্যে চীনের অর্থায়নে তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে ৬ জেলার ডিসিরা প্রস্তাব দিয়েছেন। তিস্তা মহা পরিকল্পনার সমীক্ষা প্রায় শেষ পর্যায়ে। আপনাদের অপেক্ষা করতে হবে। তবে প্রস্তাবনা পাঠালেই তা নিয়ে কাজ করা যায় না। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ হলো ৫০ কোটি টাকার ওপরে কোনো প্রকল্প এলে তার সমীক্ষা করা লাগে। এরপর আমরা এলাকাবাসীর দাবি ও নদীভাঙনসহ প্রাসঙ্গিক বিষয়গুলো বিবেচনায় নিয়ে প্রকল্প গ্রহণ করি। নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যেহেতু বলেছেন তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হবে তার মানে এটা বাস্তবায়ন হবে। তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হবে। এটা যেহেতু প্রধানমন্ত্রী রংপুর গিয়ে ২০২৩ সালের ২ আগস্ট প্রায় ১০ লাখ মানুষের সামনে তিনি বলেছেন, তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন হবে, তার মানে এটা বাস্তবায়ন হবে।
নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় থেকে আমরা বেশি গুরুত্ব দিয়েছি নদীর রক্ষার জন্য। আমাদের জেলা-উপজেলা পর্যায়ে কমিটি আছে, এই কমিটিগুলো গঠন করে বছরে যেন দুটি না হলেও একটি সভা যেন করা হয়। এ কমিটিগুলোতে বিভিন্ন শ্রেণি- পেশার মানুষ যুক্ত এবং নদীগুলো রক্ষার সঙ্গে কিন্তু আমাদের জলবায়ু-পরিবেশ সবকিছু একটা বিষয় চলে আসে। কাজেই এই নদী রক্ষার বিষয়টি আমরা গুরুত্ব দিয়েছি। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী গতকাল একটি নির্দেশনা দিয়েছেন। মন্ত্রণালয়ের যে প্রকল্পগুলো আছে সে প্রকল্পগুলোর প্রকল্প পরিচালক থাকে; সে প্রকল্প পরিচালকের বাইরেও জেলা প্রশাসন এবং বিভাগীয় প্রশাসন, তারা যেন এটা দেখাশুনা করে। এমন একটি নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। আমরা আজকের অধিবেশনে সেটা ডিসিদের স্মরণ করিয়ে দিয়েছি। প্রকল্প নেওয়ার ক্ষেত্রে আমরা প্রকল্প নিয়ে নেই। কিন্তু প্রকল্প বাস্তবায়নে অনেক সময় স্থানীয়ভাবে প্রশাসন সেখানে সমস্যার মধ্যে পড়ে। এটার যেন সমন্বয় হয় এটি একটি বিষয় ছিলো।
প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে গিয়ে ডিসিরাও সমস্যায় পড়ে সাংবাদিকের এমন এক প্রশ্নের জবাবে নৌ প্রতিমন্ত্রী বলেন, প্রকল্প বাস্তবায়ন তো ডিসিরা করেন না। বাস্তবায়ন সঠিকভাবে হচ্ছে কিনা জেলাপ্রশাসককে সেটি দেখভাল করার দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। ডিসিরা স্থানীয় পর্যায়ে অনেকগুলো কাজ করেন। বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের প্রকল্পগুলোতে বিশেষ নজরদারি রাখবেন তারা।
দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মঈনউদ্দীন আবদুল্লাহ বলেন, আমি জেলা প্রশাসকদের বলেছি, আপনি নিজে দুর্নীতিমুক্ত কি না, আপনার অফিস দুর্নীতিমুক্ত কি না আগে নিজের কাছে প্রশ্ন করেন। আগে নিজের ঘরকে দুর্নীতিমুক্ত করতে জেলা প্রশাসকদের (ডিসি) হবে। জেলা প্রশাসক সম্মেলনে দুদকের অধিবেশন শেষে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান দুদক চেয়ারম্যান। তিনি বলেন, আমি তাদের ডিসিদের বলেছি, যদি আপনার অফিস দুর্নীতিমুক্ত না হয়, নিজের অফিসকে দুর্নীতিমুক্ত করেন। জেলা-উপজেলা, ইউনিয়ন পর্যায়ে আপনার অধীনে যেসব অফিস আছে সেখানে দুর্নীতিমুক্ত করার চেষ্টা করেন। নিজের ঘর দুর্নীতিমুক্ত করেন, তারপর অন্যান্য দুর্নীতির খোঁজখবর রাখেন। তিনি বলেন, অনুসন্ধান তদন্ত করে মামলার মাধ্যমে আদালতে সোপর্দ করি, এটা প্রতিকার। জেলা প্রশাসকের সাহায্য ছাড়া প্রতিরোধ আমরা সুচারুভাবে করতে পারি না। দুর্নীতি যেন না হয় সেজন্য প্রচার করা ও আমাদের সাহায্য করতে তাদের (ডিসি) আহ্বান জানিয়েছি। জেলা ও বিভাগীয় অফিসে তারা যেন সার্বিক সহায়তা করেন। জেলা পর্যায়ে আমাদের লোকবল যথেষ্ট না, এজন্য প্রতিরোধমূলক কার্যক্রমে তাদের সহায়তা চেয়েছি।
ডিসিদের কাছে হালনাগাদ তথ্য আছে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার বলেন, ডিসি ও মিল মালিকদের সঙ্গে মিটিং শুরু হয়েছে। ধান ও চালের জাতের যে নমুনা, সেটা তাদেরও সরবরাহ করা হচ্ছে। ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট সে জাতগুলো দিয়েছে, আউশ, আমন ও বোরোতে কোন কোন জাত, কোনটা মোটা, মাঝারি ও সরু সেই জাত দিয়েছে, সেটা নিয়ে তাদের সঙ্গে কাজ করছি। সরকারের খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির আওতায় আসন্ন রমজান উপলক্ষে আগামী ১০ মার্চের মধ্যে ৫০ লাখ পরিবারের মাঝে দেড় লাখ টন চাল বিতরণ করা হবে।
বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, রোজার পর পরিবেশ সুরক্ষায় প্লাস্টিক বিরোধী অভিযান জোরদার করা হবে। তবে এর আগেই পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোকে নিয়ে সভা করে প্লাস্টিক ব্যাগ ব্যবহারকারীদের নিরুৎসাহিকরণ কার্যক্রম গ্রহণ করা হবে। প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন। এসময় শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী নজরুল ইসলাম চৌধুরী, বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের সচিব আব্দুর রউফসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন। জেলা প্রশাকসকদের কাছে কী প্রত্যাশা করেছেন সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, পণ্যে পাটজাত মোড়কের বাধ্যতামূলক ব্যবহার আইন, ২০১০’ বাস্তবায়ন জোরদারকরণে মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তাদের হস্তক্ষেপ প্রত্যাশা করছি। মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্যের কারণে কৃষকরা যেন পাটের ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত না হয় তা রোধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের অনুরোধ করছি।
ইমি /পথিক নিউজ