মোঃ আব্দুল হান্নানঃ-২৯ শে বৈশাখ প্রতি বছরের ন্যায় এবারো ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নাসিরনগর উপজেলার ভাটির রানী নামে খ্যাত গোয়ালনগর ইউনিয়নের নোয়াগাও গ্রামের উত্তরে আল রামপুর গ্রামের পশ্চিমে নদীর পাড়ে খোলা আকাশের নীচে অবস্থিত হাজার বছরের ঐতিহ্য গাবগাছ তলে অনুষ্টিত হয়ে গেছে বাৎসরিক গাবতলীর সিন্নি।
সরেজমিন এলাকা গিয়ে দেখা গেছে নোয়াগাঁও গ্রামের উত্তরে আর রামপুর গ্রামের পশ্চিমে নদীর পাড়ে হাজার বছর বয়সী দুটি গাবগাছ দাড়িয়ে রয়েছে।একটি গাছে প্রতিনিয়তই গাব ধরে যাচ্ছে আর অপরটি তার সঙ্গী হয়ে দাড়িয়ে রয়েছে।স্থানীয়রা জানায় ওই গাছের গাব খুবই সুমিষ্টি আর সুস্বাধু হওয়ায় গ্রামের ছোট ছোট ছেলে মেয়েরা গাবপাকার সাথে সাথে সাথেই গাছ থেকে পেরে নিয়ে খেয়ে ফেলে।প্রচন্ড গরমের সময় পথচারী আর স্থানীয়রা গরম থেকে রক্ষাপেতে গাবতলার নীচে বসে সু শীতল বাতাস উপভোগ করে।মানুষের পাশপাশি মাঠে থাকা গরু গুলো যখন গরম অনুভব করে তখন গরু গুলোও শীতল বাতাসের আশায় গাবতলায় গিয়ে আশ্রয় নেয়।
স্থানীয়দের সাথে কথা বললে তারা জানায়,এই গাব গাছ গুলোর সুনিষ্ট কোন বয়স কেউ বলতে পারছেনা।তারা জানায় আমাদের মুরব্বিদের কাছ থেকে শুনেছি যুগের পর যুগ ধরে এ গাছগুলো এখানে দাড়িয়ে রয়েছে।এখানে অনেক পীর,অলি আর সাধকরা এসে সাধনা করে থাকেন।দুই গ্রাম আর আশপাশের অনেক লোকজন ওই গাছের নীচে মানত করে থাকে।এলাকার অনেক হিন্দুরাও এ গাছের নীচে বিভিন্ন পুঁজা দিয়ে থাকে।
স্থানীয় লোকজন জানায়,এখানে প্রতিবছর বৈশাখ মাসের ২৯ তারিখে হাজার হাজার নারী পুরুষ ও শিশুদের সমম্ময়ে শিন্নি অনুষ্টিত হয়।তারা আরো জানায় রামপুর গ্রামে যার পরিবারে যতজন লোক আছে প্রত্যেকের মাথাপিছু পাঁচ ছটাক করে চাউল তুলে শুধু মানুষ নয় যার যতটি গরু বাছুর,ছাগল মহিষ ভেড়া রয়েছে তাদেরও সমপরিমান চাউল তুলে ওই গাবগাছ তলে গুড় আর চাউল দিয়ে শিন্ন করে বিতরণ করা হয়।
ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা হয় হবিগঞ্জ জেলার সবুজবাগের পীর সৈয়দ নাসির উদ্দিন জুয়েলের সাথে।তিনি জানান,সারা পৃথিবীর কোন দেশে এমন আর একটি গাছ আছে বলে আমার মনে হয় না ।তিনি বলেন আমার দাদার জীবদ্দশায় ওই গাবতলা বসে আরাধনা করতেন।শুধু আমার দাদাপীর নয়,অনেক অলিরাই এখানে ধ্যানে মগ্ন থেকে খোদা সাধন করতেন।তবে গাছের বয়স সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন ওই গাছের সঠিক বয়স কেউই বলতে পারবেন না,তবে অনুমান হাজার বছর বয়সী হবে।আর যুগ যুগ ধরেই এই শিন্নি রেওয়াজ চলে আসছে।
পীর নাসিরউদ্দিন জুয়েল সহ স্থানীয় লোকজন আর গাবতলার ভক্তরা জানায়,দিন দিন গাছগুলোর মাঠি সরে মাঠির উপরে শিখর বেরুতে শুরু করেছে।গাছের গোড়া থেকে মাঠি সরে যাবার কারনে যে কোন সময় গাছ গুলো পড়ে গেলে হাজার বছরের ঐতিহ্য ধ্বংস হয়ে যাবে।তাই হাজার বছরের ঐতিহ্য রক্ষায় গাছের গোড়া মাঠি দেয়া অত্যান্ত জরুরী হয়ে পড়েছে।পীর নাসিরউদ্দিন জুয়েল সহ গাবতলার ভক্তরা গাছগুলোকে রক্ষা করতে গাছের গোড়ায় মাঠির ব্যবস্থা করে দিতে দানশীল ব্যাক্তিবর্গ,নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি ও সরকারী অনুধান কামনা করছেন।