W3Schools.com  

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়ায় অভিভাবক সমাবেশ শেষে শিক্ষকের ওপর হামলা

লেখক: Md Emon
প্রকাশ: ১১ মাস আগে

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া উপজেলার দেবগ্রাম সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ে অভিভাবক সমাবেশ শেষে এক শিক্ষকের ওপর হামলার ঘটনা ঘটেছে। আখাউড়া পৌরসভার ৮ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর বাবুল মিয়াসহ কয়েকজন অভিভাবক এ হামলায় জড়িত ছিলেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। ওই শিক্ষককে রক্ষায় এগিয়ে গেলে আরও দুই শিক্ষক আহত হন। এ ঘটনায় শিক্ষকদের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে। গত মঙ্গলবার বেলা দুইটার দিকে ওই বিদ্যালয়ে মারধরের এ ঘটনা ঘটে।

বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের অভিযোগ, প্রধান শিক্ষক পরিকল্পনা করে অভিভাবকদের বাইরে বহিরাগত লোকদের অভিভাবক সমাবেশে এনেছেন। তিনিই এসব করিয়েছেন।

মারধরের শিকার ওই শিক্ষকের নাম তানভীর আহমেদ। তিনি আখাউড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে বাসায় ফিরে গেছেন। এ সময় তাঁকে রক্ষা করতে গিয়ে হামলার শিকার দুই শিক্ষক হলেন ফারুক আহমেদ ও গণেশ চন্দ্র দাস। ওই কাউন্সিলর ও অভিভাবকেরা হামলার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এ বছর এসএসসি পরীক্ষায় আখাউড়া উপজেলার বিদ্যালয়গুলোর ফল খারাপ হয়েছে। দেবগ্রাম সরকারি উচ্চবিদ্যালয় থেকে ১৩২ জন পরীক্ষায় অংশ নিয়ে মাত্র ৭২ জন শিক্ষার্থী পাস করেছে। পাসের হার ৫৪ দশমিক ৫৫। শিক্ষার গুণগত মান উন্নয়নে বিদ্যালয়গুলোয় অভিভাবক সমাবেশ করছে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কার্যালয়। আজ দুপুরে দেবগ্রাম সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ে অভিভাবক সমাবেশে অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশে প্রধান অতিথি ছিলেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) অংগ্যজাই মারমা। বিশেষ অতিথি ছিলেন মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. আবুল হোসেন। সমাবেশে পরীক্ষার খারাপ ফলের জন্য শিক্ষকদের দোষারোপ করে বক্তব্য দেন কয়েকজন অভিভাবক। এ সময় প্রধান শিক্ষক ছাড়া বিদ্যালয়ের অন্য শিক্ষকদের সমাবেশে বসার ও কথা বলার সুযোগ দেওয়া হয়নি। সমাবেশ শেষে বিদ্যালয়ের দ্বিতীয় তলার প্রধান শিক্ষকের কক্ষে বিষয়টি নিয়ে কথা বলছিলেন বিদ্যালয়ের ইংরেজি বিষয়ের শিক্ষক তানভীর আহমেদ। এ সময় দেবগ্রাম গ্রামের শেখ সোহেল ও জসিম উদ্দিন দেওয়ান এবং আখাউড়া পৌরসভার ৮ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর বাবুল মিয়া গিয়ে শিক্ষক তানভীরকে কিল–ঘুষিসহ মারধর করেন। শিক্ষক তানভীরকে রক্ষায় এগিয়ে গেলে তাঁরা বিদ্যালয়ের দুই শিক্ষক ফারুক আহমেদ ও গণেশ চন্দ্র দাসকেও মারধর করেন।

সমাবেশ শেষে প্রধান শিক্ষককে বিষয়গুলো বললে শেখ সোহেল আমার ওপর হামলা করেন। আর কাউন্সিলর বাবুল মিয়া লাফ দিয়ে এসে আমার ঘাড়ে কিল-ঘুষি মারেন। এ সময় জসিমও আমাকে মারধর করেন। পরে শিক্ষকেরা এগিয়ে এসে আমাকে উদ্ধার করেন। আমার হাত-পা ভেঙে ফেলবে বলে শেখ সোহেল হুমকি দিয়েছেন।

আহত শিক্ষক তানভীর আহমেদ বলেন, ‘বিদ্যালয়ে দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের সঙ্গে শিক্ষকদের সমাবেশ ছিল। অভিভাবক হিসেবে আসা শেখ সোহেলের মেয়ে নবম শ্রেণিতে পড়ে। কাউন্সিলর বাবুল মিয়া ও জসিমের কোনো ছেলেমেয়ে বিদ্যালয়ে পড়ে না। কাউন্সিলরসহ তাঁরা প্রধান শিক্ষকের নিমন্ত্রণে সমাবেশে আসেন। সমাবেশে এসএসসির ফল খারাপের জন্য শিক্ষকদের দোষারোপ করা হয়। কিন্তু কোনো শিক্ষকককে ইউএনও এবং শিক্ষা কর্মকর্তার সামনে কথা বলতে দেওয়া হয়নি। সমাবেশ শেষে বেলা দুইটার দিকে প্রধান শিক্ষককে বিষয়গুলো বললে শেখ সোহেল আমার ওপর হামলা করেন। আর কাউন্সিলর বাবুল মিয়া লাফ দিয়ে এসে আমার ঘাড়ে কিল-ঘুষি মারেন। এ সময় জসিমও আমাকে মারধর করেন। পরে শিক্ষকেরা এগিয়ে এসে আমাকে উদ্ধার করেন।’ তিনি বলেন, ‘আমার হাত-পা ভেঙে ফেলবে বলে শেখ সোহেল হুমকি দিয়েছেন।’

শিক্ষক ফারুক আহমেদ বলেন, ‘শিক্ষকদের অপমান করার জন্য কিছু লোককে অভিভাবক সাজিয়ে সমাবেশে আনা হয়। তানভীর বিষয়টি নিয়ে আমাদের সঙ্গে কথা বলছিলেন। এ সময় তাঁরা শিক্ষক তানভীরকে মারধর করেন। বাঁচাতে গেলে তাঁরা আমাদের ওপরও হামলা চালান।’

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক শিক্ষক বলেন, ‘প্রধান শিক্ষক ও সহকারী প্রধান শিক্ষক কোনো ক্লাস নেন না। প্রাক্‌-নির্বাচনী পরীক্ষায় উত্তীর্ণ না হওয়া অনেক ছাত্রছাত্রীকে চূড়ান্ত পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়েছে। এ জন্যই ফল খারাপ হয়েছে। সমাবেশে বিষয়গুলো আমাদের বলার সুযোগ দেওয়া হয়নি।’

বিদ্যালয়ের জ্যেষ্ঠ শিক্ষক অলক চক্রবর্তী বলেন, ‘সমাবেশে অভিভাবকদের মধ্য থেকে যাঁরা বক্তব্য দিয়েছেন, তাঁরা বহিরাগত। প্রধান শিক্ষকই তাঁদের সমাবেশে এনেছেন। বিষয়টি নিয়ে তানভীর স্যার প্রধান শিক্ষকের সঙ্গে কথা বলছিলেন। এর মধ্যেই কাউন্সিলর বাবুল মিয়া, শেখ সোহেল ও জসিম উদ্দিন এসে তানভীর স্যারকে মারধর করেন। বিষয়টি ইউএনও স্যার, আখাউড়া পৌরসভার মেয়র তাকজিল খলিফা ও উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে জানিয়ে এসেছি।’

অভিযোগ অস্বীকার করে শেখ সোহেল বলেন, ‘আমি ওই শিক্ষককে মারধর করিনি। উল্টো তিনি আমার সঙ্গে খারাপ আচরণ করেছেন। আর হুমকি দেওয়ার অভিযোগ সত্য নয়।’

আখাউড়া পৌরসভার ৮ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর বাবুল মিয়াও অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

প্রধান শিক্ষক শেখ মাহফুজুর রহমান বলেন, ‘সমাবেশ শেষে ইউএনও স্যার ও শিক্ষা কর্মকর্তাকে বিদায় করি। ঘটনার সময় আমি উপস্থিত ছিলাম না। পরে শুনেছি। তবে ওই শিক্ষক আমাকে কিছু জানাননি।’

একাধিকবার চেষ্টা করেও কল না ধরায় আখাউড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।

পথিক নিউজ/ মো:ইমন