বিশ্ববাজারে কমেছে জ্বালানি তেলের দাম

লেখক:
প্রকাশ: ২ মাস আগে

বিশ্ববাজারে গতকাল সোমবার জ্বালানি তেলের দাম কমেছে। গত সপ্তাহে তেলের দাম দুই থেকে তিন শতাংশ কমেছিল, চলতি সপ্তাহও দাম কমার মধ্য দিয়ে শুরু হলো। খবর: রয়টার্স।

 

মূলত ডলারের দাম বেড়ে যাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে বাজারসংশ্লিষ্টরা ধারণা করছেন, অপ্রত্যাশিত মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে যুক্তরাষ্ট্রের নীতি সুদহার শিগগির কমানো হচ্ছে না। এমন খবর প্রকাশের জেরে বিশ্ববাজারে তেলের দাম কমেছে।

 

সোমবার সকালে এশিয়ার বাজারে ব্রেন্ট ক্রুড তেলের দাম ব্যারেলপ্রতি ১৪ সেন্ট বা শূন্য দশমিক ২ শতাংশ কমে ৮১ ডলার ৪৮ সেন্টে নেমে এসেছে। ইউএস টেক্সাস ইন্টারমিডিয়েট বা ডব্লিউটিআই ক্রুডের দাম শূন্য দশমিক ৩ শতাংশ বা ৩৩ সেন্ট কমে ব্যারেলপ্রতি ৭৬ ডলার ২৭ সেন্ট হয়েছে। শক্তিশালী ডলারের কারণে তেলের দাম কমেছে বলে রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। তবে ডলারের দর বৃদ্ধির কারণে অন্য দেশগুলোয় তেলের দাম আরও বৃদ্ধি পেতে পারে।

 

মূলত গত সপ্তাহে তেলের দাম হ্রাসের ধারাবাহিকতায় গতকাল তেলের দাম কমেছে। যুক্তরাষ্ট্রে মূল্যস্ফীতির হার এখনও লক্ষ্যমাত্রার মধ্যে না আসায় নীতি সুদহার কমানোর সিদ্ধান্ত আরও দু-তিন মাস পিছিয়ে যাবেÑএমন খবর প্রকাশের কারণে গত সপ্তাহে ব্রেন্ট ক্রুডের দাম দুই শতাংশ এবং ডব্লিউটিআইয়ের দর তিন শতাংশ কমে যায়।

 

অকল্যান্ডভিত্তিক স্বাধীন বিশ্লেষক টিনা টেং বলেন, গত সপ্তাহে বাজারে এনভিডিয়ার একচেটিয়া উত্থানের কারণে ডলারের দাম বেড়েছে, চাপ পড়েছে পণ্যের দামে। গত বছরের নভেম্বর থেকে তেলের দাম ৭০ থেকে ৯০ ডলারের মধ্যে ওঠানামা করছে। যুক্তরাষ্ট্রে তেলের চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় এবং চীনের কমে যাওয়ার প্রভাব পড়ছে তেলের দামে। তবে ভালো জ্বালানি চাহিদা থাকা এবং বাজারে সরবরাহ নিয়ে উদ্বেগ বিরাজ করায় ভবিষ্যতে দাম বাড়তে পারে।

 

 

আর্থিক প্রতিষ্ঠান এএনজেডের বিশ্লেষকরা এক নোটে লিখেছেন, তেলের দাম বাড়তে পারে, এমন কোনো নতুন বাস্তবতা তৈরি হয়নি। একদিকে ওপেক ও সহযোগী সদস্যদেশগুলো তেলের উৎপাদন হ্রাস করছে, অন্যদিকে চীনের মতো দেশে চাহিদা কমে গেছে। বাস্তবতা হচ্ছে, তেলের বাজার এই দুই বিপরীতমুখী প্রবণতার মধ্যে আটকা পড়েছে।

 

ইরান-সমর্থিত হুতি বিদ্রোহীরা লোহিত সাগরে চলাচলকারী বাণিজ্যিক জাহাজে হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। সেই সঙ্গে ইসরায়েল-হামাস সংকট চলছে। কিন্তু এই দুটি বড় ঘটনা তেলের সরবরাহে বিশেষ প্রভাব ফেলতে পারেনি।

 

যুক্তরাষ্ট্রের হোয়াইট হাউসের জাতীয় নিরাপত্তা বিশ্লেষক জেক সালিভান বলেন, যুক্তরাষ্ট্র, মিসর, কাতার ও ইসরায়েলের প্রতিনিধিরা বন্দি বিনিময় চুক্তি নিয়ে আলোচনা করছেন। যদিও ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, এ ধরনের চুক্তি আদৌ হবে কি না, তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে।

 

এএনজেডের বিশ্লেষকরা বলেছেন, আগামী সপ্তাহে তেলের মজুত কমার সম্ভাবনা রয়েছে, তখন তেলের দাম কিছুটা বাড়তে পারে।

 

যুক্তরাষ্ট্রের এনার্জি ইনফরমেশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশন গত সপ্তাহে বলেছে, গত ১৬ ফেব্রুয়ারি শেষ হওয়া সপ্তাহে জ্বালানি তেলের মজুত ৩৫ লাখ ব্যারেল বৃদ্ধি পেয়ে ৪৪ কোটি ২৯ লাখ ব্যারেলে উন্নীত হয়েছে। রয়টার্স বিশ্লেষকদের নিয়ে যে জরিপ করেছিল, এই মজুত বৃদ্ধি তার সঙ্গে সংগতিপূর্ণ।

 

গত বছরের জুলাই থেকে নীতি সুদহার ৫ দশমিক ২৫ শতাংশ থেকে ৫ দশমিক ৫ শতাংশে স্থির রেখেছে যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেডারেল রিজার্ভ বা ফেড। ফেড গভর্নর ক্রিস্টোফার ওয়ালার জানান, যুক্তরাষ্ট্রের সুদের হার কমাতে অন্তত আরও কয়েক মাস অপেক্ষা করা উচিত ফেডারেল রিজার্ভ নীতিনির্ধারকদের। এমন হলে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি গতি মন্থর হতে পারে এবং তেলের চাহিদা কমতে পারে।

ইমি/পথিক নিউজ