বিশ্বে উচ্চ মূল্যস্ফীতির কি অবসান ঘটল, নাকি আবার ফিরে আসছে

লেখক:
প্রকাশ: ২ মাস আগে

উচ্চ মূল্যস্ফীতি কি হারিয়ে গেছে, নাকি আবার তা ফিরে আসছে। বিশ্বের বন্ড বাজারকে আষ্টেপৃষ্ঠে ধরেছে এই প্রশ্ন, সেই সঙ্গে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সম্ভাবনাও নির্ভর করছে এই প্রশ্নের ওপর। চলতি বছরের শুরুতে যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেডারেল রিজার্ভ উচ্চ মূল্যস্ফীতির বিরুদ্ধে বিজয় ঘোষণা করলে বন্ডের সুদহার কমে যায়। বাজারের ধারণা ছিল, এ বছর একাধিকবার নীতি সুদহার কমানো হবে।

 

কিন্তু দ্য ইকোনমিস্ট এখন মনে করছে, সেই বাজি একটু তাড়াতাড়িই ধরা হয়েছিল। গত তিন মাসে যুক্তরাষ্ট্রের খাদ্য ও জ্বালানিবহির্ভূত মূল্যস্ফীতির হার ছিল ৪ শতাংশ; গত জুন থেকে আগস্ট মাসে যে হার ছিল ২ দশমিক ৬। উৎপাদন পর্যায়ে মূল্য বেড়েছে। সেই সঙ্গে ভোক্তারাও মনে করছেন, আগামী বছর মূল্যস্ফীতির হার বাড়বে।

 

এটা ঠিক, ২০২২ সালের জুনে যুক্তরাষ্ট্রের মূল্যস্ফীতির হার নতুন রেকর্ড উচ্চতায় ওঠার পর এখন তা অনেকটাই কম। কিন্তু উচ্চ মূল্যস্ফীতির বিরুদ্ধে ফেডের বিজয় হয়নি। ফলে দেখা যাচ্ছে, ফেডারেল রিজার্ভ নীতি সুদহার বৃদ্ধির ধারা যখন থামল, তখন ট্রেজারি বন্ডের যে সুদহার ছিল, এখনকার সুদহার তার কাছাকাছি। দীর্ঘমেয়াদি বন্ডের সুদহার এখনও বেশি।

 

শুধু যুক্তরাষ্ট্র নয়, বিশ্বের অন্যান্য স্থানেও মূল্যস্ফীতির সূচক যেন মাথা নামাচ্ছে না। জানুয়ারি মাসে ইউরো অঞ্চলে উচ্চ হারে মূল্যস্ফীতি হয়েছে। সুইডেনে বরং জানুয়ারি মাসে মূল্যস্ফীতি বেড়েছে। অন্যদিকে রিজার্ভ ব্যাংক অব অস্ট্রেলিয়ার সতর্কবাণী, মূল্যস্ফীতির হার যথেষ্ট কমে স্থিতিশীল হতে সময় নেবে। যুক্তরাষ্ট্রসহ সবখানেই মূল্যস্ফীতির সূচক আবার ঊর্ধ্বমুখী হতে শুরু করায় নীতি সুদহার হ্রাসের সিদ্ধান্ত নিতে দেরি হচ্ছে।

 

এখন কী ঘটছে, তা বোঝার জন্য চাহিদার ধরনের দিকে দৃষ্টি দিতে হবে। কোভিড-১৯ মহামারির সময় লকডাউনে পৃথিবীর প্রায় সবকিছু বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। তখন মানুষের চাহিদা বাড়াতে যুক্তরাষ্ট্রসহ উন্নত দেশগুলো বড় অঙ্কের প্রণোদনা দিয়েছিল। এতে পণ্যর চাহিদা বেড়ে যায়; কিন্তু সরবরাহব্যবস্থায় বড় ধরনের চাপ পড়ে। ২০২১ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিং মেশিনের দাম ১২ শতাংশ বেড়ে যায়। এরপর রাশিয়া ইউক্রেনে অভিযান চালালে জ্বালানি ও খাদ্যের দাম বেড়ে যায়।

 

 

কিন্তু এখন নানা ধরনের প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও বিশ্ববাজারে পণ্যের দাম কমছে। খাদ্য ও জ্বালানির দাম মাঝারি পর্যায়ে আছে। এখনকার সমস্যার গোড়া হলো, বৈশ্বিক সেবার ব্যয় বেড়ে যাওয়া।

 

সেবার মূল্যবৃদ্ধির সঙ্গে স্থানীয় পরিস্থিতির সম্পর্ক আছে। যুক্তরাষ্ট্রে সেবার মূল্য বাড়ছে। গত তিন মাসে দেশটিতে গড়ে প্রতি মাসে ২ লাখ ৮৯ হাজার মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে। কর্মসংস্থানের টেকসই হার বলতে যা বোঝানো হয়, এটা তার দ্বিগুণ। মজুরি বাড়ছে বার্ষিক ৪ দশমিক ৫ শতাংশের বেশি হারে। ২০২৩ সালের দ্বিতীয় ভাগে জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার ছিল ৪ দশমিক ১। তাৎক্ষণিক তথ্য-উপাত্তে দেখা যাচ্ছে, এই প্রবৃদ্ধির গতিপ্রকৃতি স্বাস্থ্যকর।

 

অন্যান্য দেশে বিষয়টি আরও ভালো অবস্থায় আছে, অর্থাৎ ভারসাম্যপূর্ণ। ইউরোপে বেকারত্বের হার কম এবং সেই সঙ্গে তাদের প্রবৃদ্ধিও অতটা তেজি নয়। ২০২৩ সালের শেষ ভাগে এসে ব্রিটেন মন্দার কবলে পড়েছে। ইউরো অঞ্চলের যে ব্যবসায়িক জরিপ, তাতে পরিস্থিতি খুব একটা ভালো দেখাচ্ছে না। প্রাকৃতিক গ্যাসের দাম কমে যাওয়ায় মূল্যস্ফীতির আশঙ্কা অতটা নেই। অন্যদিকে, চীনের অর্থনীতি ভালো অবস্থায় নেই। সেখানে মূল্যস্ফীতি নয়, বরং মূল্যহ্রাস হচ্ছে। জাপানে নীতি সুদহার এখনও শূন্যের নিচে। দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংক নীতি সুদহার বাড়াতে বাধ্য হবেÑএমন বাস্তবতা থাকলে বা মূল্যস্ফীতির হার অতটা থাকলে, তা বিজয় হিসেবে ঘোষিত হবে।

 

দ্য ইকোনমিস্ট বলছে, উচ্চ মূল্যস্ফীতির দ্বিতীয় ঢেউ যদি কোথাও শুরু হয়, তা হবে যুক্তরাষ্ট্রে। এর অর্থ হলো, অন্যান্য দেশের মুদ্রানীতির সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের মুদ্রানীতি মিলবে না। অন্যান্য দেশ নীতি সুদহার কমালেও যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ নীতি সুদহার বাড়িয়ে রাখবে। এই পরিস্থিতিতে ডলারের বিনিময়মূল্য বাড়বে। যুক্তরাষ্ট্রের অর্থবাজারে স্বল্প ঝুঁকিতে বেশি মুনাফা লাভের সম্ভাবনা থাকলে দরিদ্র দেশগুলো বিনিয়োগ থেকে বঞ্চিত হবে।

 

যুক্তরাষ্ট্রে নীতি সুদহার না কমলে ওয়াল স্ট্রিটে অপ্রীতিকর বিস্ময়ের জš§ হতে পারে। এ বছরও যে মুদ্রানীতি কঠোর থাকবে, স্টক মার্কেট তা এখনও ঠিক বুঝে উঠতে পারেনি। দেশটির ব্যাংক খাতে গত বছর যেভাবে উচ্চনীতি সুদহারের জেরে বিপর্যস্ত হয়েছে, সে

খান থেকে তারা এখনও পুরোপুরি ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি। তবে এক বছর আগে মূল্যস্ফীতির যে পরিস্থিতি ছিল, এখন তা নেই।

ইমি/পথিক নিউজ