মদ নিয়ে আসামিদের নাচ-গান, ভারতের এই কারাগার যেন পার্টি সেন্টার
বাইরে সরকারের ধমক, ভেতরে চলছে উৎসব! ভারতের বেঙ্গালুরু শহরের কেন্দ্রীয় কারাগারে যেন পার্টি সেন্টার। বন্দিদের বিশেষ সুবিধা দেওয়ার অভিযোগে সদ্য জেল কর্তৃপক্ষকে তিরস্কারের কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ভাইরাল হয়েছে এমন সব ভিডিও, যা দেখে মনে হয়- এটা কোনো জেল নয়, বরং জমকালো অনুষ্ঠানের জায়গা।
ভাইরাল ভিডিওতে দেখা যায়, টেবিলে সাজানো চারটি ছোট মদের বোতল, প্লাস্টিক গ্লাসে পানীয়, কাটা ফল, ভাজা চিনাবাদাম, সব মিলিয়ে রীতিমতো রঙিন এক আসর বসেছে কারাগারের ভেতর। একদল বন্দি হাঁড়ি-পাতিল বাজিয়ে তাল দিচ্ছেন, অন্যরা নাচছেন। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি অবশ্য জানিয়েছে, তারা ভিডিওগুলোর সত্যতা স্বাধীনভাবে যাচাই করতে পারেনি।
এমন দৃশ্য দেখে অনেকেই ভাবছেন, বাইরে এত কড়া নিরাপত্তা অথচ জেলের ভেতরে এমন পার্টি কীভাবে সম্ভব? এখানেই তো রাখা আছে ভয়ংকর অপরাধীদের। এক আইএস নিয়োগকারী, একাধিক ধর্ষণ ও খুনের আসামি, আর আন্তর্জাতিক স্বর্ণ পাচারচক্রের হোতা, সবাই এখানে বন্দি।
গতকাল প্রকাশিত একটি ভিডিওতে দেখা যায়, আইএস জঙ্গি নিয়োগকারী হিসেবে পরিচিত জুহাইব হামিদ শাকিল মান্না মোবাইলে স্ক্রল করছেন, পাশে বসে চা খাচ্ছেন। পেছনে বাজছে রেডিও বা টেলিভিশনের শব্দ। জাতীয় তদন্ত সংস্থার (এনআইএ) তথ্য অনুযায়ী, মান্না মুসলিম তরুণদের উগ্রপন্থায় উদ্বুদ্ধ করে সিরিয়ায় আইএসে যোগ দিতে পাঠাতেন এবং সংগঠনের জন্য তহবিল জোগাড় করতেন।
আরেক ভিডিওতে দেখা যায়, ১৮টি ধর্ষণ ও খুনের মামলার আসামি উমেশ রেড্ডি দুটি অ্যান্ড্রয়েড ফোন ও একটি কি-প্যাড মোবাইল ব্যবহার করছেন। তার ব্যারাকে টেলিভিশনও রাখা আছে। ২০২২ সালে সুপ্রিম কোর্ট তার সাজা মৃত্যুদণ্ড থেকে কমিয়ে ৩০ বছরের কারাদণ্ড করা হয়। তখন তিনি মানসিক অসুস্থতার দাবি করেছিলেন, তবে পরে চিকিৎসকরা তাকে শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থ ঘোষণা করেন।
এছাড়া আরও এক বন্দি তারুণ রাজুকে দেখা গেছে, তিনি জেলের ভেতর মোবাইল ব্যবহার করছেন ও রান্না করছেন। রাজুকে ধরা হয়েছিল রণ্য রাও স্বর্ণ চোরাচালান মামলায়। পরে তদন্তে জানা যায়, তিনি একটি আন্তর্জাতিক স্বর্ণ পাচারচক্রের মূল হোতা, যিনি দুবাই থেকে এক পুলিশ কর্মকর্তার মেয়ের কাছে স্বর্ণ সরবরাহ করতেন।
এ ঘটনার পর মুখ্যমন্ত্রী সিদ্ধারামাইয়া কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন। একইসঙ্গে রাজ্যের কারা বিভাগও ভিডিওগুলো নিয়ে অভ্যন্তরীণ তদন্ত শুরু করেছে।
বৃহস্পতিবার সকালে কর্ণাটকের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জি. পরমেশ্বর বলেন, আমি এ ধরনের অবহেলা একেবারেই বরদাস্ত করবো না। যথেষ্ট হয়েছে। এ ধরনের ঘটনা আর ঘটতে দেওয়া যাবে না। বলা হচ্ছে, কর্মীসংখ্যা কম। এটা কোনো অজুহাত হতে পারে না। যতজন আছেন, তারা যেন অন্তত ঠিকমতো দায়িত্ব পালন করেন।
সরকারি সতর্কতার পরও জেলের ভেতর এমন পার্টি ও বিলাসবহুল পরিবেশ প্রশাসনের গাফিলতিকে আবারও প্রকাশ্যে এনেছে, যা এখন কর্ণাটকজুড়ে তীব্র আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
সূত্র: এনডিটিভি