যে দিন আমি মারা যাবো

লেখক: লিটন হোসাইন জিহাদ
প্রকাশ: ৪ দিন আগে
যে দিন আমি মারা যাবো

কবি লিটন হোসাইন জিহাদ সমকালীন বাংলা কবিতার এক স্বতন্ত্র উচ্চারণ। তাঁর কবিতায় গ্রামবাংলার মাটি, মানুষের জীবনযাত্রা ও অন্তর্লোকের যে শব্দহীন আর্তি, তা অনন্য ভঙ্গিতে ধরা পড়ে। শব্দ ব্যবহারে তিনি মিতব্যয়ী—তবু তাঁর চিত্রকল্প শক্তিশালী, অনুভূতি গভীর, আর প্রকাশভঙ্গি দার্শনিক ভাবনায় সমৃদ্ধ।

জীবনের ক্ষুদ্রতম প্রান্ত থেকে তিনি তুলে আনেন মহত্তম সত্য, তাই তাঁর কবিতা পাঠকের হৃদয়ে আলোড়ন তোলে নিঃশব্দে, অথচ গভীরভাবে। বাংলা ভাষার প্রতি তাঁর নিষ্ঠা ও কাব্যচর্চার অনুরাগ তাঁকে আলাদা করে চিহ্নিত করে। নিচে কবি লিটন হোসাইন জিহাদের কবিতা দেওয়া হলো

jedin ami mara jabo

যে দিন আমি মারা যাবো—
আকাশ হঠাৎ পিছলে পড়ে যাবে পৃথিবীর কাঁধ থেকে,
চাঁদ তার অ্যালুমিনিয়াম-চোখ খুলে
আমার দিকে এক প্রাচীন হাসি ছুঁড়ে দেবে।
সে দিন পাহাড়ের বুক থেকে ঝরে পড়বে
সহস্রাব্দের জমাট নীরবতা,
ভোরের মোয়াজ্জিনের কন্ঠে ভেসে আসবে
সুমুধুর আজানের সুর।
তখন নদী তার হাড়ে-লেপ্টে থাকা ইতিহাসের দগদগে ক্ষত খুলে দেখাবে
আর সুবহে সাদেকের আকাশ হয়ে উঠবে
এক অর্থহীন শূন্যতা-ঘেরা শোকপত্র।

আমি হাঁটতে হাঁটতে দেখব
পৃথিবীর এক লুকানো সৌন্দর্য—
একটি শিশিরবিন্দু,
একটি শুকনো ঘাস,
একটি পথভোলা আলো,
যাদের এতদিন চিনিইনি।

যে দিন আমি মারা যাবো—
সেই সন্ধ্যাটা একটু ধীরে নামবে,
সূর্য ডুবে যেতে যেতে
হঠাৎ নিভে ওঠা প্রদীপের মতো
জানতে চাইবে—
“এ জীবনের এত তাড়া ছিল কেন?”
কেউ জানবে না,
আমি কত রাত ধরে লুকিয়ে রেখেছিলাম
চোখের ভিতরের আগুন,
আর কত সকাল ভেঙে গিয়েছিল
হৃদয়ের দরজায় কড়া নাড়তে না-পারা স্বপ্নগুলো।

যে দিন আমি মারা যাবো—
নদী একটুখানি ঢেউ তুলে
মৃদু গলায় ফিসফিস করে বলবে,
“তোমার সব কষ্ট আমি দেখেছি।”
মেঘের ভেতর,
কোনো বৃষ্টির গন্ধে,
এক পুরনো মাঠে ভুলে যাওয়া সন্ধ্যার মতো।
সেই দিন আমি বুঝে ফেলব—
মানুষ আসলে মরতে শেখে
বাঁচতে শেখার আগেই।
জীবনের সব উত্তাপ,
সব তীব্র আর্তি,
সব অসমাপ্ত চিঠি,
শেষমেশ বাতাসে মিলিয়ে যাবে
একটি নীরব পাখির মতো।

যে দিন আমি মারা যাবো—
পৃথিবী আমার অনুপস্থিতি টের পাবে না—
কিন্তু কোনো এক শান্ত, নরম সন্ধ্যায়
একটি জানালার শীতল কাঁচে
হঠাৎ জমে ওঠা কুয়াশা
নিঃশব্দে আমার নাম লিখে যাবে-
কোনো কাগজের কোণে দুঃখে-লেখা দু’একটি শব্দ,
কারো বুকে একা নীল কুয়াশার মতো
স্মৃতি হয়ে বাজবে।