সুবর্ণ আইজাক বারি, সে শুধু একজন মেধাবী শিশু নয়, বরং এক অনুপ্রেরণা—বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে থাকা অসংখ্য শিশুর স্বপ্নের ঠিকানা।
নিউ ইয়র্ক শহরের ব্যস্ত রাস্তায় প্রতিদিন হাজারো মানুষ হাঁটে। কিন্তু এই শহরের বুকেই জন্ম নিয়েছে এমন এক বিস্ময়, যাঁর মেধার দীপ্তি ছড়িয়ে পড়েছে বিশ্বের আকাশে—Suborno Isaac Bari। মাত্র ১২ বছর বয়সে হাই স্কুল গ্র্যাজুয়েট হয়ে নিউ ইয়র্ক ইউনিভার্সিটিতে গণিত ও পদার্থবিজ্ঞানের ছাত্র হিসেবে যাত্রা শুরু করেছেন এই বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত বালক।
পৃথিবীর ইতিহাসে এমন অনেক শিশুবিজ্ঞানীর নাম শোনা যায়—আর্কিমিডিস থেকে নিউটন পর্যন্ত। আজকের দিনে আমরা যে নামটি অনায়াসে উচ্চারণ করতে পারি, তা হলো—সুবর্ণ আইজাক বারি।
সে শুধু একজন মেধাবী শিশু নয়, বরং এক অনুপ্রেরণা—বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে থাকা অসংখ্য শিশুর স্বপ্নের ঠিকানা।
সুবর্ণ খুব ছোট বয়সেই পড়াশোনার প্রতি অসাধারণ আগ্রহ দেখাতে শুরু করে। মাত্র দুই বছর বয়সে সে মৌল তালিকা মুখস্থ করে ফেলেছিল। এরপর ক্রমেই তার আগ্রহ ও দক্ষতা বাড়তে থাকে। চার বছর বয়সেই জটিল গণিতের সমাধান করা শুরু করে। সে সময় থেকে পরিবারের সবাই বুঝে যান, সুবর্ণ সাধারণ শিশুদের মতো নয়।
অনেকেই যখন ক্লাস ফোর বা ফাইভে পড়ে, সুবর্ণ তখন হাই স্কুল শেষ করছে। যুক্তরাষ্ট্রের Malverne High School থেকে মাত্র কয়েক বছরেই সে হাই স্কুলের সব ক্লাস সম্পন্ন করে নেয়। এরপর New York University–এর গণিত বিভাগে তার যাত্রা শুরু হয়। পাশাপাশি Stony Brook University–তেও পদার্থবিজ্ঞান বিষয়ে উচ্চতর ক্লাসে অংশ নেয় সে।
সুবর্ণের এই মেধা ও অগ্রগতির পেছনে বড় অবদান রয়েছে তার বাবা-মায়ের। বাবা রশিদুল বারি একজন শিক্ষক ও গবেষক। মা সুমাইয়া বারিও শিক্ষার সঙ্গে যুক্ত। তাঁরা সন্তানকে সঠিকভাবে গড়ে তুলেছেন, সবসময় পাশে থেকেছেন। প্রতিদিন দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে বাবাই সুবর্ণকে বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়ে যান।
সুবর্ণ শুধু বিজ্ঞান চর্চায় সীমাবদ্ধ নয়, বরং মানুষের কল্যাণ নিয়েও ভাবেন। ছোট বয়স থেকেই সে শান্তি, সহমর্মিতা ও ভালোবাসার কথা বলে এসেছে। সে বিভিন্ন স্কুল ও মঞ্চে বক্তব্য দিয়েছে, যেখানে সবাইকে একতাবদ্ধ হয়ে থাকার আহ্বান জানিয়েছে।
সুবর্ণ শুধু পড়াশোনা বা বক্তৃতাতেই নয়, লেখালেখিতেও পারদর্শী। সে “The Love” নামে একটি বই লিখেছে, যেখানে ভালোবাসা, সহানুভূতি এবং ঘৃণার বিপরীতে মানবিকতা ছড়িয়ে দেওয়ার গল্প বলা হয়েছে।
সুবর্ণের লক্ষ্য খুবই স্পষ্ট—সে বিজ্ঞানী হতে চায়, আর একদিন শিক্ষক হয়ে শিশুদের শেখাতে চায়। তার স্বপ্ন এমন একটি পৃথিবী, যেখানে মেধা ও মননের বিকাশের সঙ্গে সঙ্গে মানবিক মূল্যবোধও গড়ে উঠবে।
Suborno Isaac Bari আমাদের চোখে এক বিস্ময়কর প্রতিভা। তার জীবন আমাদের শেখায়—ছোট বয়সেও বড় কিছু করা সম্ভব, যদি ইচ্ছা আর প্রচেষ্টা থাকে। বাংলাদেশের গর্ব এই ছেলেটি আজ সারা দুনিয়ার শিশুদের জন্য এক অনুপ্রেরণা।