আজ শ্রম অধিকারের দিন

ড. এস এম শাহনূর

পরিশ্রমে ধন আনে,পুণ্য আনে সুখ”।‘পরিশ্রমই সৌভাগ্যের প্রসূতি’। কাজেই পরিশ্রম কোন ছোট কাজ নয়।সমাজ সংসার ও পার্থিব জগতে কোনো উন্নতি শ্রম ব্যতিরেকে সম্ভব হয়নি।

হজরত আদম (আ:) থেকে শুরু করে সর্বশেষ মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সঃ) পর্যন্ত সকল নবী-রাসূল নিজ হাতে কাজ করতেন। স্বহস্তে কাজ সম্পাদন করা অতিশয় উত্তম। রসূলুল্লাহ (সঃ) শ্রমের প্রতি অত্যধিক গুরুত্ব আরোপ ও শ্রমিকের দায়িত্ব-কর্তব্য সম্পর্কে বাণী প্রদান করে বলেছেন, ‘উত্তম উপার্জন হলো (পেশাজীবী) কর্মীর হাতের (শ্রমের) উপার্জন, যখন সে আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করে।’
নবী করিম (সঃ) নিজে শ্রম ব্যয় করে জীবিকা অর্জন করতেন। একদা তিনি তাঁর ফোস্কা পড়া পবিত্র হাত দেখিয়ে সাহাবায়ে কেরামের উদ্দেশ্যে বলেছিলেন, ‘এটি এমন একটি হাত, যা আল্লাহ ও তাঁর রাসূল পছন্দ করেন।’ তিনি আরো বলেছেন, ‘নিজের হাতের কাজ ও শ্রম দ্বারা উপার্জিত খাদ্য খাওয়া অপেক্ষা উত্তম খাদ্য কেউ খেতে পারে না। হজরত দাউদ (আঃ) নিজের হাতের শ্রমের উপার্জিত খাবার খেতেন’ (বুখারী)।
মানুষের জীবিকা অর্জনের প্রধান উপায় হচ্ছে শ্রম। এ সম্পর্কে পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন, ‘আর এই যে মানুষ তা-ই পায় যা সে করে। আর তার কর্ম অচিরেই দেখানো হবে; অতঃপর তাকে দেয়া হবে পূর্ণ প্রতিদান’ (সূরা নাজম: ৩৯-৪১)।
ইসলামী বিধানে শ্রমিক, চাষি এবং অন্যান্য শ্রমজীবীকে কেউ বিনা পারিশ্রমিকে খাটাতে পারবে না। তাদের ন্যায়সঙ্গত যথার্থ পারিশ্রমিক তাদের দিতেই হবে।
পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা ঘোষণা করেছেন, ‘প্রত্যেকের মর্যাদা তার কাজ অনুযায়ী, এটা এজন্য যে, আল্লাহ প্রত্যেকের কর্মেও পূর্ণ প্রতিফল দিবেন এবং তাদের প্রতি অবিচার করা হবে না।’ (সূরা আহ্কাফ: ১৯)।
মানুষের শ্রম করার অধিকার অত্যন্ত পবিত্র ঈমানী দায়িত্ব।পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা ঘোষণা করেছেন, ‘কেউ অণু পরিমাণ সৎকর্ম করলে তা দেখবে এবং কেউ অণু পরিমাণ অসৎকর্ম করলে তাও দেখবে’ (সূরা যিলযাল:৭-৮)।
ইসলাম প্রতিটি মানুষের শ্রমের ফলভোগ করার অধিকার স্বীকার করে। মহান অাল্লাহ ঘোষণা করেছেন, ‘সৎকর্মশীলদের পুরস্কার কতই না উত্তম! ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ মুমিনদের শ্রমফল নষ্ট করেন না’ (সূরা আল ইমরান: ১৩৬ ও ১৭১)।
রসূলুল্লাহ (স) শ্রমিককে মজুরি দান করার পরও তাকে লাভের অংশ দেয়ার জন্য উপদেশ দিয়ে বলেছেন, ‘কর্মচারীদের তাদের কাজের লভ্যাংশ দাও। কেননা আল্লাহর শ্রমিকদের বঞ্চিত করা যায় না।’ (মুসনাদে আহমদ)
নবী করিম (স) শ্রমিকদের প্রতি মালিকের কর্তব্য ও শ্রমজীবীদের যেসব অধিকার নির্ধারণ করেছেন তন্মধ্যে গুত্বপূর্ণ অধিকার এই যে, তাকে শুধু পরিপূর্ণ মজুরি প্রদান করা যথেষ্ট নয়, বরং যতটা সম্ভব ত্বরিত মজুরি পরিশোধের কথাও বলা হয়েছে। মহানবী (স) বাণী প্রদান করেছেন, ‘শ্রমিককে শ্রমজনিত ঘাম শুকানোর আগেই অবিলম্বে তার মজুরি দাও’ (মুসনাদে আহমাদ)।
মজুরি না দেয়া বা কাজ অনুপাতে মজুরি কম দেয়াও ইসলামে নিষিদ্ধ।
রসূলুল্লাহ (স) ইরশাদ করেছেন, ‘তিন ব্যক্তির ওপর আল্লাহ কিয়ামতের দিন অসন্তুষ্ট হবেন। তাদের একজন হচ্ছে যে ব্যক্তি কোনো শ্রমিক নিযুক্ত করে তার দ্বারা পূর্ণ কাজ করিয়ে নেয়ার পর তার মজুরি দেয়নি’ (বুখারী)।
ইসলামী বিধান মতে, অন্যত্র নবী করিম (স) নির্দেশ প্রদান করেছেন যে, ‘কাজের পারিতোষিক নির্ধারণ ব্যতিরেকে কোনো শ্রমিককে কাজে নিয়োগ করবে না’ (বায়হাকী)।
ইসলামী বিধান অনুযায়ী মালিক স্বকীয় শক্তিবলে শ্রমিকের ওপর অতিরিক্ত কাজের বোঝা চাপাতে পারবে না। শ্রম করার অধিকারের পাশাপাশি শ্রমিকের কাজে অবকাশ বা ছুটি তথা বিশ্রাম পাওয়ার অধিকার আছে। কেননা আল্লাহ রাব্বুল আলামীন মানুষের সাধ্যাতীত কোনো কাজ করার দায়িত্ব চাপিয়ে দেননি। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘নিশ্চয়ই কষ্টের সাথেই স্বস্তি আছে।’ (সূরা ইনশিরাহ: ৫)
আল্লাহ পাক মালিক ও শ্রমিক সকলকে হিদায়াতের পথে পরিচালিত করুন।আমিন।

লেখক: ড. এস এম শাহনূর
কবি ও আঞ্চলিক ইতিহাস গবেষক।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *


Notice: ob_end_flush(): Failed to send buffer of zlib output compression (0) in /home/pothiknews/public_html/wp-includes/functions.php on line 5309