সংঘাত এড়াতে ছাড় দেওয়ার মানসিকতা কতটা পরিলক্ষিত ?

লেখক:
প্রকাশ: ৬ মাস আগে

আওরঙ্গজেব কামাল : সংঘাত এড়াতে ছাড় দেওয়ার মানসিকতা সরকার এবং বিরোধী দল উভয়ের মধ্যে কতটা পরিলক্ষিত ? বড় দুটি দল নিজ নিজ অবস্থানে অনড় থাকলে সংশয় ও সংঘাত দূর হবে কি করে। ফলে দেশে যে শঙ্কা ও উৎকণ্ঠা বিরাজ করছে তা থেকে জনগণ স্বস্তি পাবে না।আমি জানি ভোট একটি গণতান্ত্রিক অধিকার । নির্বাচন গণতন্ত্রের স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। যেখানে জনগণের রয়েছে সর্বোচ্চ প্রায়োগিক ক্ষমতা। নিজের ইচ্ছাশক্তিকে ইচ্ছামতো প্রকাশ করার উপায়, যা প্রকাশ ঘটে ভোট প্রয়োগের মাধ্যমে। নির্বাচন একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের

অবিচ্ছেদ্য অংশ। যার দ্বারা গণতান্ত্রিক উপায়ে কোনো দেশের রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষমতা হস্তান্তর হয়। গণতন্ত্র সরকারি ও বিরোধী দলের সমন্বয়নের ফসল।  বিরোধী দল ছাড়া কোনো গণতন্ত্র কার্যকর হতে পারে না’এই উক্তিটি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের। বঙ্গবন্ধু ১৯৫২ সালের মে মাসে তত্কালীন পাকিস্তানি প্রধানমন্ত্রী খাজা নাজিমউদ্দিনের সঙ্গে করাচি শহরে অনুষ্ঠিত এক কথোপকথনে এই দাবি জানিয়েছিলেন। একদলীয় শাসনকে কখনো গণতন্ত্র বলে না। ফলে আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন   গণতান্ত্রিক পন্থায় হওয়া বাঞ্চনীয়। এবিষয়ে রাজনৈতিক সমজোতা হতে পারে যে বিষয় সমাধান খুঁজছেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা।

 

তারা ভাবছেন সর্বদলীয় সরকার’ গঠনের হয়তো রাজনৈতিক সমজোতা হতে পারে। কিছু বিশেষজ্ঞসহ রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা  মত দিয়েছেন সংবিধানের মধ্যে থেকেও নির্বাচনকালীন সরকার গঠন করা যেতে পারে । তাদের মতে জাতীয় সংসদে প্রতিনিধিত্বকারী দলের নেতাদের নিয়ে নির্বাচনকালীন সরকার গঠন করা যায়। সদিচ্ছা ও আন্তরিকতা থাকলে বিএনপিকেও এই সরকারে রাখা সম্ভব। টেকনোক্র্যাট কোটা বা উপনির্বাচনের মাধ্যমে ওই দলের প্রতিনিধিদের বিজয়ী করে আনলেই নির্বাচনকালীন সরকারে রাখা যেতে পারে। তবে এক্ষেত্রে দুই প্রধান রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপিকে নমনীয় হতে হবে। অবশ্যই এ ক্ষেত্রে অনেকে বলেছেন আমরা চায় সুষ্ঠু নির্বাচন, সেই সময় শেখ হাসিনা কিংবা খালেদা জিয়া ক্ষমতায় থাকবেন না। জনগণ তাদের মতামত দেবেন ভোটের মাধ্যমে। সব দলের লোকদের নিয়ে নির্বচনকালীন সরকার হলে তা সবাই গ্রহণ করবে। সংবিধানে নির্বাচনকালীন সরকারের কোনও বাধ্যবাধকতা নেই।

 

এক্ষেত্রে ২০১৩ সালের আদলে ‘সর্বদলীয় সরকার’ গঠনের চিন্তাভাবনা রয়েছে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকারের। সরকারের ঘনিষ্ঠ সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আর মাত্র চার মাসের মতো বাকি। এই সময়ে দেশে নির্বাচনী হাওয়া থাকার কথা থাকলেও পরিস্থিতি সম্পূর্ণ ভিন্ন।ক্ষমতাসীন দল

আওয়ামী লীগ নির্বাচনের প্রস্তুতি নিলেও বিরোধী দলগুলো নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে রাজপথে চূড়ান্ত পর্যায়ের আন্দোলনের দিকে এগোচ্ছে। এই অবস্থায় আন্তর্জাতিক মহল ও দেশীয় রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা সংলাপের ওপর গুরুত্বারোপ করলেও সরকারি দলের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, নিরপেক্ষ সরকারের প্রশ্নে কোনো সংলাপ হবে না।

এভাবে নির্বাচন সামনে রেখে সংলাপ-সমঝোতা প্রশ্নে ক্ষমতাসীন এবং ক্ষমতার বাইরে থাকা দলগুলোর অনড়

অবস্থানে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি বড় ধরনের সংঘাত ও সহিসংতার দিকে এগোচ্ছে বলেই আশঙ্কা করছেন বিশ্লেষকরা। ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ বলছে, সংবিধান অনুযায়ীই নির্বাচন হবে। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল

কাদের বলেছেন, বিএনপি যে পথে চলছে, সেই পথ ভুল পথ। ব্যর্থ আন্দোলন করতে করতে বিএনপি এখন পতনের দিকে যাচ্ছে। বিএনপির উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী কোন দুঃখে পদত্যাগ করবেন? তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা আজিমপুরের গোরস্থানে চিরনিদ্রায় শায়িত, তত্ত্বাবধায়ককে আর ডাকবেন না। অন্য দিকে বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলো বলছে, আওয়ামী লীগের অধীনে অতীতের কোনো নির্বাচনই সুষ্ঠু হয়নি। এবারও সুষ্ঠু হবে না। এজন্য নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনেই নির্বাচন হতে হবে। এমতঅবস্তায়  দ্বাদশ জাতীয় সংসদ

নির্বাচন সামনে রেখে মাঠপর্যায়ে নির্বাচনি সরঞ্জাম পাঠানো শুরু করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এরই অংশ হিসাবে বৃহস্পতিবার থেকে ব্যালট বাক্স পাঠানো শুরু হয়েছে। আগামী সপ্তাহে ব্যাগ ও গালা পাঠানো হবে। ক্রমান্বয়ে অন্যান্য সরঞ্জাম পাঠাবে কমিশন। বৃহস্পতিবার নির্বাচন ভবনে ইসির অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ এ তথ্য জানান। আগামী মাসে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফশিল ঘোষণা এবং জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে ভোটগ্রহণের কথা জানিয়ে আসছে নির্বাচন কমিশন। তাহলে কি ভাবে নির্বাচনে হবে এই প্রশ্ন সর্বসাধারনের মধ্যে বিরাজ করছে। এদিকে বিএনপির মহাসচিবমির্জা ফখরুল বলেন,

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের জন্য আওয়ামী লীগ ১৭৩ দিন হরতাল করেছে। এখন চিৎকার করে বলছেন, ওটা নাকি আজিমপুর কবরস্থানে চলে গেছে। কবর দিয়ে দিয়েছেন। যেটার কবর হয়ে যাবে, সেটা নিয়ে ১৭৩ দিন হরতাল করলেন কেন? আওয়ামী লীগ হরতালের সময় বাসে গান পাউডার দিয়ে মানুষ মেরেছে- এমন অভিযোগ তুলে তিনি বলেন, এতগুলো মানুষকে মারলেন কেন? তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে যেসব নির্বাচন হয়েছে, তা সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য হয়েছে। আজকে আওয়ামী লীগ জানে সুষ্ঠু অবাধ নির্বাচন হলে জনগণ ভোট দিতে পারলে তারা ক্ষমতায় থাকতে পারবে না। সুতরাং তারা ওটাতেই লেগে আছে সংবিধানের মধ্যেই তাকে নির্বাচন করতে হবে।মির্জা ফখরুল বলেন, দুর্ভাগ্যজনকভাবে দেশে এমন সংস্কৃতি হয়েছে যে একটা দল আরেকটা দলকে বিশ্বাস করে না। ৫২ বছর পরও  চিন্তা করতে হয় এই সরকারের অধীন নির্বাচনে ঠিক হয় না। পাকিস্তানও নির্বাচন পদ্ধতি উন্নতি করে ফেলেছে। নেপাল-মালদ্বীপ সুষ্ঠু করে ফেলেছে।

এখন শ্রীলঙ্কাও। তাহলে আমরা কেন পারছি না। আমরা পারছি না একটা রাজনৈতিক দলের কারণে, সেটা হচ্ছে আওয়ামী লীগের কারণে। তিনি সরকারকে হুশিয়ার করে বলেন, এখন সময় আছে, সেফ এক্সিট নিন। পদত্যাগ করে সরে গিয়ে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের হাতে ক্ষমতা দিন। নতুবা জনগণের আন্দোলনে আপনাদের করুন পরিনতি ভোগ করতে হবে। এখন সকলের প্রশ্ন তাহলে কি নির্বাচন এক তরফা হবে না দেশ সংঘাতের দিকে যাবে? এমন অবস্থায় দেশে যে রাজনৈতিক সঙ্কট এবং অস্থিতিশীল অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে, তার সুষ্ঠু, সঠিক সমাধান না হলে ভবিষ্যৎ আরো ভয়াবহ হতে পারে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও বিশিষ্টজনেরা।নৈরাজ্যকর পরিস্থিতির কারণে মানুষের স্বাভাবিক জীবন-জীবিকায় নেমে এসেছে বিপর্যয়। প্রতিটি মুহূর্ত কাটছে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায়। কিন্তু এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণের কোনো সম্ভাবনা এখনো দেখা যাচ্ছে না। মাঝেমধ্যে রাজনৈতিক সমঝোতার ক্ষণিক আভাস মিললেও পরক্ষণেরই তা মিলিয়ে যাচ্ছে। আর এ অবস্থার জন্য প্রধান দুই রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ এবং বিএনপির ক্ষমতাকেন্দ্রিক রাজনীতিকেই দায়ী করা হচ্ছে। দুই দলই ‘এক দফা’র ঘোষণা দিয়েছে।বিএনপি বলেছে, সরকারকে পদত্যাগ করে নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে হবে। আর আওয়ামী লীগ বলেছে, শেখ হাসিনাকে প্রধানমন্ত্রী রেখেই নির্বাচন হবে। তাদের ঘোষণায় রাজনৈতিক সমঝোতার পরিবর্তে যার যার অনড় অবস্থানে থাকারই আঁচ পাওয়া গেল। তবে অমি বলবো , সংঘাত এড়াতে ছাড় দেওয়ার মানসিকতা নিয়ে এগোতে হবে দুই পক্ষকেই।

আওরঙ্গজেব কামাল/ লেখক ও গবেষক