প্রসবকালীন জটিলতা এড়াতে মায়েদের করনীয়

লেখক:
প্রকাশ: ১ বছর আগে

ঘটা করে বেবি শাওয়ার হয়ে গেল প্রভার। প্রায় ঘনিয়ে এসেছে প্রসবের দিন। তবে হবু মায়ের চিন্তা হচ্ছে, এই ঠান্ডার মধ্যে প্রথম সন্তানের জন্ম দেওয়ার পর সেরে উঠতে কোনো ধকল যাবে না তো?

হেমন্তের এই মাঝামাঝি সময়ে হালকা উত্তরে হাওয়া বইছে। আর কদিন বাদেই শুরু হবে শীত। এ সময় প্রকৃতি অনেকের ভালো লাগলেও প্রয়োজন কিছু বাড়তি যত্নের। আমরা জানি, গর্ভাবস্থা ও প্রসবকালীন নারীর বিশেষ পরিচর্যার দরকার হয়। তার ওপর প্রসবের সময় যদি শীতকালে হয়, তাহলে বাড়তি যত্নের পাশাপাশি প্রয়োজন কিছু সাবধানতা ও সচেতনতা।

শীতে সাধারণত শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণ যেমন—সর্দি-কাশি বা হাঁচি বেশি হয়ে থাকে। যাদের হাঁপানি বা শ্বাসকষ্ট রয়েছে, তাদের ভোগান্তির আশঙ্কা অনেক গুণ বেড়ে যায় শীতে। শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণ ছাড়াও এ সময় নির্দিষ্ট কিছু ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়ার মাধ্যমে পরিপাকতন্ত্র ও লিভারের সংক্রমণ হতে পারে। ফলে ডায়রিয়া ও জন্ডিসের মতো জটিল রোগ দেখা দেয়। সিজারিয়ান সেকশনের মাধ্যমে প্রসব হলে সংক্রমণের ঝুঁকি স্বাভাবিক প্রসবের চেয়ে বেশি থাকে। অপারেশনের ক্ষত সারতেও স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে শীতকালে দেরি হতে পারে।কাজেই এ সময় বাড়তি সচেতনতা প্রয়োজন। তা ছাড়া ঠান্ডার দিনে চর্মরোগের প্রাদুর্ভাবও দেখা দেয়। কেউ কেউ ত্বকের শুষ্কতাজনিত সমস্যায়ও ভুগে থাকেন।

এসব সমস্যার সমাধানে কিছু বিষয়ের প্রতি বিশেষভাবে লক্ষ রাখতে হবে। যেমন

  • সব সময় উষ্ণ থাকার চেষ্টা করতে হবে।
  • প্রয়োজনীয় গরম কাপড় পরতে হবে।
  • স্যাঁতসেঁতে পরিবেশ এড়িয়ে চলতে হবে।
  • ঘরে পর্যাপ্ত আলো-বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা থাকতে হবে।
  • গরম পানিতে গোসল করতে হবে।
  • ত্বকের শুষ্কতা রোধে সাবান তুলনামূলক কম ব্যবহার করা ভালো।
  • ত্বকের আর্দ্রতা ঠিক রাখতে ত্বকে নিয়মিত পেট্রোলিয়াম জেলি লাগাতে হবে।
  • কুয়াশায় বাইরে বের না হওয়াই ভালো।
  • ঠান্ডা পানি, ঠান্ডা খাবার, আইসক্রিম খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।
  • বাইরের খোলা খাবার খাওয়া যাবে না।
  • পানি ভালো করে ফুটিয়ে খেতে হবে।
  • খুব বেশি প্রয়োজন ছাড়া জনসমাগমে না যাওয়াই ভালো।
  • শীতকালে পানি কম পানের কারণে কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে। তাই পর্যাপ্ত পানি পান করতে হবে।
  • শরীরের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়াতে ভিটামিন ‘সি’সমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে।
  • প্রতিদিন ১৫ থেকে ২০ মিনিট গায়ে রোদ লাগালে ভিটামিন ‘ডি’র ঘাটতি পূরণ হওয়ার পাশাপাশি আরামদায়ক উষ্ণতাও নিশ্চিত হবে।
  • শীতকালে ঠান্ডার কারণে অনেকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখেন না। এতে সংক্রমণের আশঙ্কা বেড়ে যায়। সংক্রমণ এড়াতে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কোনো বিকল্প নেই।
  • এ সময় আলসেমি করে অনেকে শরীরচর্চা থেকে বিরত থাকেন। নিয়মিত শরীরচর্চা দেহ ও মনকে রোগমুক্ত ও কর্মক্ষম রাখতে সাহায্য করে।
  • শীতকালে যাদের অ্যালার্জির প্রবণতা আছে, তারা ধুলোবালি থেকে দূরে থাকবেন। যেসব খাবারে অ্যালার্জি হয়, সেগুলো খাবেন না।
  • মশার কামড় থেকে বাঁচতে বাড়ির আশপাশের ঝোপঝাড় পরিষ্কার রাখুন, নিয়মিত মশানাশক স্প্রে ছিটিয়ে দিন এবং ঘুমানোর সময় মশারি ব্যবহার করুন।
  • শীতকালে তাপমাত্রা কম থাকার কারণে কাটা-ছেঁড়াজনিত যেকোনো ক্ষত শুকাতে বিলম্ব হতে পারে। উষ্ণতা বজায় রাখা, সুষম খাবার খাওয়া ও পরিচ্ছন্ন থাকার মাধ্যমে এসব সমস্যা থেকে পরিত্রাণ পাওয়া সম্ভব। শীতের আবহাওয়ার নেতিবাচক প্রভাব যাতে প্রসূতি মা ও নবজাতকের ওপর না পড়ে, তার জন্য আমাদের সবারই যত্নশীল হওয়া প্রয়োজন।
  • প্রসবকালীন জটিলতা এড়াতে মায়েদের করনীয়