লিটন হোসাইন জিহাদ,ব্রাহ্মণবাড়িয়া: অভিভাবকহীন সরাইলে অন্নদা উচ্চ বিদ্যালয়ে, মিলছে না শিক্ষক, ব্যাহত হচ্ছে পাঠদান। এতে শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ার মান নিয়ে শঙ্কিত অভিভাবকরা। এমন নানা সমস্যায় জর্জরিত সরাইলে ঐতিহ্যবাহী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান“সরাইল অন্নদা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়” ।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ১৮৭১ সালে সরাইল অন্নদা সদর এলাকায় প্রায় ৩.৭৩ একর জমির উপর শিক্ষানুরাগী অন্নদা প্রাসাদ রায় তাঁর নিজের নামানুসারে সরাইল অন্নদা উচ্চ বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৮৬ সালে স্কুলটি জাতীয়করণ হয়।অভিযোগ রয়েছে স্কুলটি জাতীয়করণ হওয়ার পর থেকেই শিক্ষক সংকট লেগেই আছে। ৬০০ শত ছাত্রের বিপরীতে আছে মাত্র ৭ জন শিক্ষক। ইংরেজি শিক্ষক না থাকায় ক্লাস নিচ্ছেন গনিত ও ফ্যাসিক্স শিক্ষক। মাধ্যমিক শিক্ষা কারিকুলাম হিসেবে ৫৫ জন ছাত্র করে আলাদা ভাবে ক্লাস নেওয়ার কথা থাকলেও সরাইলে অন্নদা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রতি ক্লাসে ১২০ জন করে ক্লাস নেওয়া হচ্ছে।
এ বিষয়ে কথা বলতে চাইলে সদ্য নিয়োগ প্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক এ কে এম আব্দুল্লাহ সংবাদিকদের জানায়, সব জায়গায় শিক্ষক সংকট রয়েছে তবে আমাদের স্কুলে খুব বেশি। আমি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলেছি,তারা এখনো আমাকে ভরসা দিতে পারেনি। আর স্কুলে কোন ফান্ডও নেই যে আমরা গেস্ট টিচার দিয়ে ক্লাস চালাবো।
এ ব্যাপারে সরাইল অন্নদা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক সেলিনা আক্তার রোজী বলেন, স্কুলের ছাত্র সংখ্যা বর্তমানে ৬০০ জন। শিক্ষক সংখ্যা ১৭ হলেও আছেন মাত্র ৭ জন। অনেক চেষ্টা করেও শিক্ষক সংকট দূর হচ্ছে না।আমরা বাধ্য হয়েই কারিকুলাম অনুযায়ী ক্লাস নিতে পারছি না।
এ বিষয়ে সরাইল উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব মো: রফিক উদ্দিন ঠাকুর জানান, সরাইল অন্নদা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় হলো অভিভাবকহীন একটি প্রতিষ্ঠান। সরকারি স্কুল হিসেবে তার দেখাশেনার দায়িত্বে থাকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকতা সহ সরকারি কর্মকর্তাদের । তারা কিছুদিন পরপর বদলি হয়, স্কুল নিয়ে তাদের কোন চিন্তা নেই। যদি জনপ্রতিনিধের কমিটিতে রাখা হতো, এলাকার সন্তানরা থাকতো তারা নিজেদের স্কুলের প্রতি মায়া থাকতো কাজ করতো। একটি সরকারি স্কুল ভর্তির সময় সেরা ছাত্রদের ভর্তি করায় অথচ ফলাফলের সময় ভালো রেজাল্ট হয়না। এটা আমাদের জন্য বড় লজ্জার বিষয়। তিনি সাংবাদিকদের জানান আমি চেষ্টা করবো এ বিষয়টি নিয়ে কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলতে।
স্কুলের গনিত শিক্ষক মো. হাদিস মিয়া জানান, শুধু এ বছরই তিনবার শিক্ষক চাহিদা দিয়ে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরে আবেদন করা হয়েছে, আমরা কোন উত্তর পাইনি। তাছাড়া প্রধান শিক্ষকগণ নিয়োগের মাস তিনেকের ভিতর বদলি হয়ে অন্য কোথাও চলে যায়। সহকারী শিক্ষকরা আসলেও নিজেদের সুবিধার জন্য জেলা সদর বা অন্য কোথাও বদলি হয়ে যায়।
১৯৯৮ সালে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ছিলেন, আলী আরমান খান জানান আমাদের সময় কোন শিক্ষক সংকট ছিলনা,রেজাল্টও ভালো করতো। এখন শুনতে পাই স্কুলে শিক্ষক সংকট আছে তা আমাদের খুব কষ্ট দেয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষক জানান, আমাদের কোন এমপি মন্ত্রি নেই যে উপরে সুপারিশ করে শিক্ষকের চাহিদা পূরণ করবে। ২০২২ সালে শিক্ষকদের বড় একটি নিয়োগ দিয়েছে সরকার তখন সব উপজেলায় শিক্ষক পেলে আমাদের স্কুলে কোন নিয়োগ হয়নি। ব্রাহ্মণবাড়িয়া সংরক্ষিত আসনের এমপি শিউলি আজাদ একবার এসে আমাদের ভরসা দিয়ে গিয়েছিল কিন্তু ফলাফল পাইনি। এ বিষয়ে এমপি শিউলে আজাদের সাথে যোগাযোগ করতে চাইলেও তা সম্ভব হয়নি। কারন তিনি ফোন রিসিভ করেনি।
সরাইল উপজেলার সাবেক ভাই চেয়ারম্যান, সাবেক উপজেলা যুবলীগ নেতা শের আলম মিয়া জানান,সরাইল অন্নদা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় নিয়ে আমি ফেসবুকে একটি পোষ্ট দিয়েছি,চেষ্টা করছি সবাইকে এ সমস্যাটা জানাতে। আমাদের এ সরাইল জেলা শহরের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপজেলা। অন্নদা স্কুলটি একটি ঐতিহ্যবাজী একটি স্কুল। আমি মনে করি দায়িত্ব অবহেলার কারনেই অন্নদা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগ হচ্ছে না। আমরা যারা রাজনীতির সাথে জড়িত , এমপি এবং অন্যান্য জনপ্রতিনিধি রয়েছেন উনারা যদি আন্তরিক হয় তাহলে আমি মনে করি কিছুদিনের ভিতর এ সমস্যাটি সমাধান হয়ে যাবে।
সরাইল সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুল জাব্বার সাংবাদিকদের জানান, এ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে অনেক ছাত্ররা পাস করে বর্তমানে সরকারের ভালো অবস্থানে চাকুরী করছে, ১৫২ বছরের এ প্রতিষ্ঠানটি এভাবে ধ্বংস হোক আমরা চাইনা। আমি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করবো আমাদের ওখানে শিক্ষক নিয়োগ দেন।
এ বিষয়ে প্রাক্তন ছাত্র ও সমাজকর্মী রৌশন আলী জানান, সরাইলের ঐতিহ্যবাহী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হলো অন্নদা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়, আজ অনেক বছর যাবত সেখানে শিক্ষক সংকট তা পুরণ করা সম্ভব হচ্ছে।
সরাইল আশুগঞ্জ জাতীয় নির্বাচনের মনোনয়ন প্রত্যাশী ইঞ্জিনিয়ার আবু শামীম পিয়ার মুহাম্মদ পলাশ জানান,সরাইলের ঐতিহ্য বহন করে অন্নদা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়। অথচ এখানে শিক্ষক সংকট আমরা শুনতে পারছি দীর্ঘদিন ধরে। জনপ্রতিধিরা যদি বিশেষ ভাবে খুজ খবর রাখতো তাহলে এ সমস্যাটা হতো না। এছাড়া এখানে এসে শিক্ষকরা থাকতে চাইনা এসব কথা শুনতে পাই । কেন তারা থাকতে চাইনা এ বিষয়টাও সমাধান করা দরকার।
এ ব্যাপারে সরাইল উপজেলা নির্বাহী অফিসার মুহাম্মদ সরওয়ার উদ্দীন সাংবাদিকদের বলেন, সরকারি এ স্কুলের শিক্ষক সংকটের বিষয়টি আমাদের সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।তবে সরকার শিক্ষক নিয়োগ দিলে এ স্কুলের শিক্ষক সংকট সমস্যা সমাধান হবে।
সরাইলের ঐতিহ্যবাহী অন্নদা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগের বিষয়টি নিয়ে সরব রয়েছে সরাইলে জনগণ। ফেসবুক পোষ্ট দিয়ে ক্ষোভ ঢালছে অনেকেই। সরাইলের ঐতিহ্যবাহী এই স্কুলটি খুব শিগ্রই সমাধান হবে বলে আশা করছেন সচেতন মহল।