থাইরয়েড হরমোনের প্রধান উৎস।

লেখক:
প্রকাশ: ২ মাস আগে

থাইরয়েড হরমোনের প্রধান উৎস থাইরয়েড গ্রন্থি যা মানবদেহের গলার সামনের দিকে অবস্থিত। এ হরমোন মানবদেহের প্রতিটি কোষ, টিস্যু ও অন্যান্য অঙ্গের ক্রিয়াকলাপের উপর যথেষ্ট প্রভাব ফেলে। পেশি ও হাড়ের গঠন, হৃৎপিন্ডের ক্রিয়াক্ষমতা, বিপাকের হার, খাদ্য হজমে সহায়তায় থাইরয়েড হরমোনের ভূমিকা অগ্রগণ্য। এজন্যই এ হরমোনের কোনো সমস্যা হলে মানবদেহে নানাবিধ সমস্যা দেখা দেয়।

 

 

প্রকার

থাইরয়েড নি:সরণের মাত্রার উপর হরমোনটি দুই প্রকার। যথা: হরমোনের নিঃসরণ স্বল্প হলে একে হাইপোথাইরয়ডিজম এবং বেশী নিঃসরণ হলে হাইপারথাইরয়ডিজম। এছাড়াও থাইরয়েড গ্রন্থির ফোলা, হাশিমোটো থাইরয়েডাইটিস, থাইরয়েড গ্রন্থিতে টিউমার ও থাইরয়েড ক্যান্সার প্রভূতির সমস্যাও দেখা দিতে পারে।

 

 

 

কারণ

থাইরয়েড হরমোন উৎপাদনে আয়োডিনের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। আয়োডিনের ঘাটতি হলে থাইরয়েড ফুলে যাবে। এ ফুলে যাওয়াকে গলগন্ড বলে।

জন্মগতভাবে থাইরয়েড সমস্যা হতে পারে। কোনো মায়ের থাইরয়েড সমস্যা থাকলে তার সন্তানদের এ সমস্যা হতে পারে।

 

মানবদেহের অ্যান্টিবডি তৈরির কারণে থাইরয়েড সমস্যা হতে পারে।

মানবদেহের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থার ত্রুটির কারণে থাইরয়েড সমস্যা হতে পারে।

প্রসবোত্তর অবস্থায় এ সমস্যা হতে পারে। এটি সাধারণত একটি অস্থায়ী অবস্থা।

গ্রেভস ডিজিজ, অতিরিক্ত নোডুলস এর কারণে হাইপারথাইরয়েডিজম হতে পারে।

 

 

 

লক্ষণ

 

একজন থাইরয়েড রোগির মধ্যে বিভিন্ন লক্ষণ দেখা যেতে পারে। দূর্ভাগ্যজনিত ব্যাপার হলো থাইরয়েড রোগের লক্ষণগুলির, প্রায়ই অন্যান্য চিকিৎসাধীন এবং জীবনের পর্যায়ের লক্ষণগুলির সাথে মিল থাকায় কোন লক্ষণকে বোঝা যায় না যে সেটা থাইরয়েড সমস্যা কিনা। থাইরয়েড রোগের লক্ষণগুলোকে দুটি গ্রুপে ভাগ করা যেতে পারে। লক্ষণগুলো নি¤œরুপ-

হাইপারথাইরয়েডিজম এর লক্ষণগুলো

১. থাইরয়েড গ্রন্থির ফুলে যাওয়া বা গলগন্ড।

২. উদ্বেগ, বিরক্তি, ঘুমের সমস্যা।

৩. ¯œায়ুর দূর্বলতা, পেশির দূর্বলতা এবং শরীর কম্পন অনুভুত হওয়া।

৪. ওজন কমে যাওয়া।

৫. চোখে জ¦ালা অনুভব এবং দৃষ্টির সমস্যা।

৬. তাপের প্রতি সংবেদনশীলতা বোধ করা।

৭. মহিলাদের ক্ষেত্রে অনিয়মিত ঋতুচক্র বা ঋতুচক্র বন্ধ হয়ে যাওয়া।

হাইপোথাইরয়েডিজমের লক্ষণগুলি

১) অতিরিক্ত ক্লান্তিবোধ

২) বিস্মৃতি অনুভব করা

৩) ওজন বৃদ্ধি হওয়া

৪) মোটা ও শুস্ক চুল থাকা

৫) কর্কশ কন্ঠস্বর

৬) ঠান্ডা তাপমাত্রায় অসহিষ্ণুতা অনুভব করা

৭) মহিলাদের ক্ষেত্রে ঘন ঘন এবং বেশী পরিমাণে ঋতু¯্রাব দেখা দেওয়া

৮) প্রজননক্ষম নারীদের হাইপোথাইরয়েডিজমের হার পুরুষদের তুলনায় প্রায় দশ গুণ বেশি, সাথে জটিলতাও বেশি।

মনে রাখা দরকার, থাইরয়েডে সমস্যার কারণে মাংসপেশিতে ক্ষয় বেড়ে যায়, মাংসপেশির সক্ষমতা কমে যায়। চোখ বড় হয়ে যেতে পারে।

 

 

কারা ঝুঁকিতে ?

থাইরয়েড রোগ শিশু, কিশোর, নারী-পুরুষ এবং বয়স্ক, যেকোন ব্যক্তিকে প্রভাবিত করতে পারে। এটি জন্মগতভাবে (হাইপোথাইরয়েডিজম) এবং বয়সের সাথে সাথে বিকাশ হতে পারে (নারীদের মেনোপজের পারে)।

 

থাইরয়েড রোগটি খুবই সাধারণ। গবেষণায় জানা যায়, নারীরা পুরুষদের তুলনায় প্রায় পাঁচ থেকে আট গুণ বেশি আক্রান্ত হয়।

আবার যেকোন একটি মেডিকেল অবস্থা যেমন: রক্ত শুণ্যতা, টাইপ-১-ডায়াবেটিস, লুপাস, রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস, অ্যাড্রিনাল স্বল্পতা, টার্ণার সিন্ড্রোম, সজোগ্রেনের সিন্ড্রোম ইত্যাদি থাকলে ও রোগটি হতে পারে।

 

রোগ নির্ণয়

রক্তের ফ্রি থাইরক্সিন এবং টিএসএইচ পরীক্ষা।

থাইরয়েডের অ্যান্টিবডি পরীক্ষা, রেডিও আয়োডিন আপটেক পরীক্ষা।

গলার আল্ট্রাসনোগ্রাফি।

বায়োপসি ইত্যাদি।

 

চিকিৎসা

থাইরয়েড রোগের চিকিৎসা প্রায়শই সফল হয়। বারবার পরীক্ষা করে ঔষুধের মাত্রা ঠিক করা প্রয়োজন। তবে কিছু ক্ষেত্রে অস্ত্রোপচার প্রয়োজন হয়।

 

প্রতিরোধ

প্রক্রিয়াজাত খাবারের অনেক রাসায়নিক থাইরয়েড হরমোন তৈরীতে প্রভাবিত করতে পারে। তাই প্রক্রিয়াজাত খাবার এড়িয়ে চলতে হবে।

সয়াবিন, সয়ার দুধ, টফুর মতো খাবার এড়িয়ে চলতে হবে।

ফুলকপি, বাঁধাকপি, ব্রুকলি এবং পালংশাক একেবারেই এড়িয়ে চলতে হবে।

ধুমপানের সময় নির্গত টক্সিন থাইরয়েড গ্রন্থিকে বেশি সংবেদনশীল করে তুলতে পারে তাই ধুমপান একেবারেই এড়িয়ে চলতে হবে।

মানসিক চাপ কম করতে হবে।

নিজে সক্রিয় হতে হবে। নিয়মিত ব্যায়াম বিশ্রাম ও ঘুম নিশ্চিত করতে হবে।

ইমি/পথিক নিউজ

  • থাইরয়েড
  • প্রধান উৎস
  • হরমোনের