বাজারে নজরদারি বৃদ্ধিতে ডিসিদের নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর

লেখক:
প্রকাশ: ২ মাস আগে

বাজার পরিস্থিতি নজরদারি, মজুত ও মূল্যবৃদ্ধি রোধে জেলা প্রশাসকদের কাজ করতে নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। একই সঙ্গে ভেজাল রোধে অভিযান পরিচালনা, বিল্ডিং কোড বজায় রাখা এবং ফসলি জমি রক্ষাসহ কিশোর গ্যাংয়ের উৎপাত বন্ধে কাজ করার আহ্বান জানান তিনি।

 

গতকাল রোববার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের শাপলা হলে ‘জেলা প্রশাসক সম্মেলন ২০২৪’-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন তিনি। খবর: বাসস

 

তিনি বলেন, ‘বাজার পরিস্থিতিরি দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। রমজান এলে কিছু ব্যবসায়ী মজুত করে দাম বাড়িয়ে মুনাফা নিতে চায়। কোথাও যাতে ভোক্তাদের হয়রানিতে পড়তে না হয়, সেদিকে নজর রাখতে হবে। বিদেশনির্ভর না হয়ে নিজেদের উৎপাদনে গুরুত্ব দিতে হবে। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য যেন সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছাতে পারে, সেটি খেয়াল রাখতে হবে। খাদ্যে ভেজাল দেয়ার বিষয়টিও দেখতে হবে। রোজা এলে এটা বেড়ে যায়।’

 

তিনি বলেন, ‘কভিড-১৯ অতিমারি এবং ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের প্রভাব বিশ্ব অর্থনীতিতে পড়েছে। পৃথিবীতে এখন এমন দেশও রয়েছে যেখানে মূল্যস্ফীতি ৪০ শতাংশে উঠে গেছে। বাংলাদেশেও এর থেকে দূরে নয়, যদিও বাংলাদেশে এখনও মূল্যস্ফীতি ১০ ভাগের নিচে রয়েছে। কিন্তু তারপরও সমস্যা রয়ে গেছে। সব সময় লক্ষ রাখতে হবে আমাদের বাজার পরিস্থিতি কেমন রয়েছে।’

 

সরকারপ্রধান বলেন, ‘সামনে রমজান মাস আসছে। এ সময় কিছু কিছু ব্যবসায়ী সবসময় মজুতদারি করে, পণ্যের দাম বাড়িয়ে মুনাফা লুটতে চায়। সেদিকে আমাদের নজর দিতে হবে। কেননা, এটি আমাদের আশু করণীয় কাজ।’

 

তিনি বলেন, ‘কোথাও যেন ভোক্তাদের কোনোরকম হয়রানির শিকার হতে না হয়। আমাদের দেশীয় উৎপাদন বাড়াতে হবে। পরনির্ভরশীলতা কমাতে হবে, আর এটা যে আমরা করতে পারি সেটা কিন্তু আমরা অনেক ক্ষেত্রে প্রমাণ করেছি। সেদিকে একটু নজর দেয়া একান্তভাবে দরকার।

 

শেখ হাসিনা বলেন, ‘আরেকটি বিষয় হচ্ছে সরবরাহ। সেটা নিয়েও সমস্যা সৃষ্টি হয়, অথবা কৃত্রিম সংকট সৃষ্টির চেষ্টা করা হয়। কেউ কেউ মজুতদারি করে। পণ্য পচিয়ে ফেলবে তবু বাজারে ছাড়বে না। সেদিকে বিশেষভাবে দৃষ্টি দিয়ে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা দরকার’।

 

তিনি আরও বলেন, ‘রমজান মাস সামনে রেখেই এ কথাগুলো আমি সবার আগে বললাম। যাতে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য যথাযথভাবে সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছাতে পারে, সে ব্যবস্থা নিশ্চিত করার দিকে সবাইকে নজর দিতে হবে।’

 

 

তিনি খাদ্যে ভেজাল দেয়া প্রতিরোধেও জেলা প্রশাসকদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘রোজা এলেই এই সমস্যাগুলো বেশি দেখা দেয়। এগুলোর দিকেও নজর দেয়া একান্তভাবে দরকার।’

 

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সারাদেশে ভবন নির্মাণে বিল্ডিং কোড বজায় রাখার বিষয়টি নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্টদের, বিশেষ করে মাঠ পর্যায়ের প্রশাসনকে নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘বিল্ডিং কোড অনুসরণ করে সঠিকভাবে ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে কিনা, তা সবাইকে লক্ষ রাখতে হবে। শুধু সিটি করপোরেশন এলাকায় নয়, দেশের অন্যান্য স্থানেও এটি অনুসরণ করতে হবে।’

 

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘স্থাপনা নির্মাণে যেন বিল্ডিং কোড মেনে করা হয়, সেদিকে সবাইকে দৃষ্টি দিতে হবে। শুধু যেখানে সিটি করপোরেশন আছে সেখানেই নয়, সর্বজনীনভাবে প্রত্যেক জায়গায়ই এই বিষয়টা মানতে হবে। অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা, পর্যাপ্ত আলো-বাতাস সরবরাহের ব্যবস্থা, বৃষ্টির পানি সংরক্ষণের ব্যবস্থা এগুলো রেখেই নির্মাণ  করতে হবে।’

 

তিন ফসলি আবাদি জমি বাড়িঘর বা শিল্প-কারখানাসহ অন্য কোনো কাজে ব্যবহার করা যাবে না বলে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণে মাঠ প্রশাসনকে নির্দেশ দিয়ে তিনি বলেন, ‘আমাদের ফসলি জমি রক্ষা করতে হবে।’

 

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সরকার দেশের উন্নয়ন করছে। পাশাপাশি দেশের মানুষের অধিকারও নিশ্চিত করা দরকার।’

 

কিশোর গ্যাংয় নিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘এখন সবেচেয়ে বড় কিছু সমস্যা আছে। এখন কিশোর গ্যাংয়ের উৎপাত দেখি। পড়ালেখা করা ছেলেমেয়েরা কেন এসবে জড়াবে? এটা সবার দেখতে হবে। স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে অভিভাবক ও শিক্ষকসহ সবাইকে নজরদারি বাড়াতে হবে। ছেলেমেয়েরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যায় কি না, নজরদারি বাড়াতে হবে।

 

অভিভাবকদের সচেতন করতে হবে। (কিশোরদের) গ্রেপ্তার করে লাভ নেই। গ্রেপ্তার করলে অপরাধীদের সঙ্গে মিশে আরও খারাপ হয়ে যাবে। গোড়া থেকে সমস্যার সমাধান করতে হবে।’

 

মন্ত্রিপরিষদ সচিব মাহবুব হোসেনের সূচনা বক্তব্যে শুরু হওয়া সম্মেলনে আরও বক্তব্য রাখেন জনপ্রশাসন মন্ত্রী ফরহাদ হোসেন, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব তোফাজ্জল হোসেন মিয়া, ঢাকা বিভাগীয় কমিশনার মো. সাবিরুল ইসলাম, গাইবান্ধার জেলা প্রশাসক কাজী নাহিদ রসুল ও চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান।

ইমি/পথিক নিউজ