ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলার তিতাস নদীতে অনুষ্ঠিত হলো ঐতিহ্যবাহী নৌকাবাইচ প্রতিযোগিতা।
মঙ্গলবার (৭ অক্টোবর) বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে উপজেলার নোয়াগাঁও ইউনিয়নের বুড্ডা গ্রামের উদ্যোগে এ প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। প্রতিযোগিতায় অংশ নেয় বিভিন্ন এলাকার মোট ছয়টি দল।
নদীর তীরে হাজারো মানুষের উপস্থিতিতে প্রতিযোগিতা ঘিরে সৃষ্টি হয় উৎসবমুখর পরিবেশ। বৈঠার ছন্দে তিতাসের জলরাশিতে যেন জীবন্ত হয়ে ওঠে বাংলার প্রাচীন জলযাত্রা ঐতিহ্য।
তিন রাউন্ডে অনুষ্ঠিত এ প্রতিযোগিতায় চূড়ান্ত পর্বে বিজয়ী হয় তিনটি দল—
প্রথম স্থান: সরাইলের ক্ষমতাপুর দল, দ্বিতীয় স্থান: বুড্ডা গ্রামের মালেক মিয়ার দল, তৃতীয় স্থান: বিজয়নগর উপজেলার একতারপুর দল
নোয়াগাঁও ইউনিয়নের ইউপি চেয়ারম্যান মনসুর আহাম্মদ এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোশাররফ হোসাইন। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন— উপজেলা বিএনপির সভাপতি আনিসুল ইসলাম ঠাকুর, সাবেক সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন, সদর ইউপি চেয়ারম্যান আবদুল জব্বার, উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক দুলাল মাহমুদ আলী, যুবদলের আহ্বায়ক আবু সুফিয়ান, কৃষক দলের আহ্বায়ক মশিউর রহমান, দপ্তর সম্পাদক এ বি এম সালাউদ্দিন বিপ্লব, এবং নোয়াগাঁও ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি হারুন অর রশিদসহ এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ।প্রতিযোগিতা শেষে অতিথিরা বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন।
উল্লেখ্য যে সরাইলের নৌকাবাইচ কোনো সাম্প্রতিক আয়োজন নয়—এটি এই অঞ্চলের গ্রামীণ সংস্কৃতির এক প্রাচীন ঐতিহ্য।
ঐতিহাসিক তিতাস নদী একসময় ছিল সরাইলের জীবনরেখা। এই নদীর বুকে কৃষক, মাঝি ও জেলেদের জীবনযাত্রার সঙ্গে জড়িয়ে ছিল নৌকা। বর্ষা মৌসুমে নদী ভরাট হলে গ্রামেগঞ্জে আয়োজন হতো নৌকা বাইচ, যা শুধু ক্রীড়া প্রতিযোগিতা নয়—ছিল গ্রামীণ ঐক্য, শক্তি ও আনন্দের প্রতীক।
বয়সীদের মুখে শোনা যায়, পাক–ভারত বিভাজনের আগেও সরাইল, আশুগঞ্জ, বিজয়নগর ও নাসিরনগর অঞ্চলে প্রতি বছর তিতাসের তীরে নৌকা বাইচ হতো। তখন প্রতিযোগিতায় অংশ নিতেন বিশাল দলবল নিয়ে বৈঠার ছন্দে মাতানো মাঝিরা। নৌকার নাম হতো ‘চাঁদনৌকা’, ‘সোনার তরী’ বা ‘তিতাস তরী’।
১৯৮০–৯০ দশক পর্যন্ত এই আয়োজন ছিল সরাইলের অন্যতম সামাজিক উৎসব। আধুনিকতা ও নদীভাঙনের কারণে এক সময় হারিয়ে যেতে বসেছিল এই ঐতিহ্য। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে আবারও স্থানীয় উদ্যোগে ফিরছে সেই আনন্দময় দিনগুলো—
যেখানে নদী, নৌকা আর মানুষের উচ্ছ্বাস একাকার হয়ে যায় উৎসবের স্রোতে।