সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য, যিনি আমাদের ঈমান দান করেছেন এবং শ্রেষ্ঠ মানব হযরত মুহাম্মদ ﷺ-এর সুন্নাহ অনুসরণের সৌভাগ্য দিয়েছেন।
মুহাররম: বরকতময় একটি মাস –
মুহাররম মাস ইসলামী বর্ষপঞ্জির প্রথম মাস এবং চারটি ‘আশহুরে হুরুম’-এর (সম্মানিত মাস) একটি।
আল্লাহ তাআলা বলেন—
﴿إِنَّ عِدَّةَ الشُّهُورِ عِندَ اللَّهِ اثْنَا عَشَرَ شَهْرًا… مِنْهَا أَرْبَعَةٌ حُرُمٌ﴾
“আল্লাহর কাছে মাসের সংখ্যা বারোটি… এর মধ্যে চারটি সম্মানিত।”
(সূরা আত-তাওবা: ৩৬)
মুহাররম মাসে যুদ্ধ জাহিলি যুগেও নিষিদ্ধ ছিল। ইসলাম এ মাসকে আরও সম্মানিত করেছে, বিশেষ করে ১০ মহররম আশুরা দিনটিকে কেন্দ্র করে।
আশুরার দিনের তাৎপর্য –
রাসূলুল্লাহ ﷺ যখন মদীনায় আগমন করেন, তখন দেখতে পান ইহুদিরা আশুরার দিন রোযা রাখছে। কারণ তারা বিশ্বাস করত, এদিন আল্লাহ মূসা (আ.) ও বনী ইসরাইলকে ফিরআউনের কবল থেকে মুক্তি দিয়েছেন।
রাসূল ﷺ বললেন—
“فَأَنَا أَحَقُّ بِمُوسَى مِنْكُمْ”
“তোমাদের তুলনায় আমি মূসার অনুসরণের অধিক হকদার।”
অতঃপর তিনি নিজে রোযা রাখেন এবং সাহাবীদেরও রাখতে বলেন।
(বুখারী: ২০০৪, মুসলিম: ১১৩০)
আশুরার রোযার ফজিলত –
আবু কাতাদাহ (রাযি.) হতে বর্ণিত:
قال رسول الله ﷺ: “صيام يوم عاشوراء، أحتسب على الله أن يكفّر السنة التي قبله”
“আশুরার রোযা, আমি আল্লাহর কাছে আশা রাখি—এটি পূর্ববর্তী এক বছরের গুনাহ মোচন করবে।”
(সহীহ মুসলিম: ১১৬২)
এটি মহান একটি সুযোগ—তাওবা, আত্মশুদ্ধি ও নতুনভাবে আল্লাহর সঙ্গে সম্পর্ক গড়ার।
রাসূল ﷺ-এর আগ্রহ –
আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাযি.) বলেন:
“ما رأيت النبي ﷺ يتحرى صيام يومٍ يفضّله على غيره إلا يوم عاشوراء”
“আমি রাসূলুল্লাহ ﷺ-কে আশুরার রোযার বিষয়ে অন্য যেকোনো দিনের চেয়ে বেশি আগ্রহী দেখেছি।”
(বুখারী ও মুসলিম)
ফরজ না, বরং সুন্নত ?
রাসূল ﷺ বলেন:
“هذا يوم عاشوراء، ولم يكتب الله عليكم صيامه، وأنا صائم، فمن شاء فليصم، ومن شاء فليفطر”
“এটি আশুরার দিন। আল্লাহ তোমাদের উপর এর রোযা ফরজ করেননি। আমি রোযা রাখছি। তোমাদের কেউ ইচ্ছা করলে রোযা রাখুক, ইচ্ছা না করলে না রাখুক।”
(সহীহ মুসলিম: ১১২৯)
অতএব:
আশুরার রোযা সুন্নত, ফরজ নয়।
এটি রমাযানের আগ পর্যন্ত ফরজ ছিল, পরে তা রহিত হয়।
সাহাবারা শিশুদেরও এ রোযায় অভ্যস্ত করাতেন।
নবী ﷺ বলেছিলেন: “পরবর্তী বছর আমরা ৯ তারিখও রোযা রাখব।” কিন্তু পরবর্তী বছর আসার আগেই তিনি ইন্তেকাল করেন। (মুসলিম: ১১৩৪)
মহররম মাসে রোযার ফজিলত –
আবু হুরায়রা (রাযি.) থেকে বর্ণিত:
“أفضل الصيام بعد رمضان شهر الله المحرم…”
“রমাযানের পর শ্রেষ্ঠ রোযা হলো আল্লাহর মাস মুহাররমের রোযা।”
(সহীহ মুসলিম: ২৬৪৫)
‘আল্লাহর মাস’ বলার মাধ্যমে মুহাররমের বিশেষ মর্যাদা বোঝানো হয়েছে।
আশহুরে হুরুম: চার সম্মানিত মাস –
রাসূল ﷺ বলেন: “বারো মাসে এক বছর। এর মধ্যে চারটি সম্মানিত মাস: যুল-কা’দাহ, যুল-হিজ্জাহ, মুহাররম ও রজব।”
(বুখারী)
এই মাসগুলোতে গুনাহ থেকে বিশেষ সতর্ক থাকা জরুরি।
সতর্কতা ও ভুল ধারণা :–
আশুরার রোযা ছোট গুনাহ মাফের কারণ, বড় গুনাহ নয়।
বিদআত: কপালে দাগ দেওয়া, বিশিষ্ট খাবার তৈরি, মাতম করা, ইত্যাদি।
নূহ (আ.), ইউনুস (আ.)-এর ঘটনা আশুরার সাথে সম্পর্কিত বলে সাহিহ সূত্রে প্রমাণ নেই।
উপসংহার :
আশুরার রোযা আমাদের জন্য:
আত্মশুদ্ধি ও গুনাহ মোচনের বড় সুযোগ,
পূর্ববর্তী নবীদের স্মরণ ও কৃতজ্ঞতার শিক্ষা,
সুন্নাহ পালনের মাধ্যমে রাসূল ﷺ-এর অনুসরণ।
আসুন, মুহাররম মাসের মর্যাদা ও আশুরার রোযার ফজিলত যথাযথভাবে উপলব্ধি করি এবং আল্লাহর সন্তুষ্টির পথে নিজেদের নিবেদিত করি।