স্টাফ রিপোর্টার, ঈদুল আজহার টানা ১০ দিনের ছুটি আজ বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হয়েছে। গতকাল বুধবার শেষ কর্মদিবস ছিল সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ অনেকের। ফলে সকাল থেকে বাস, ট্রেন ও লঞ্চে ঘরমুখী মানুষের ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো। অনেকে নাড়ির টানে বাড়ির উদ্দেশে রওনা হওয়ায় বিকালের পর থেকে স্টেশনগুলোতে যাত্রীদের চাপ বেড়ে যায়।
ঈদের বিশেষ বাস, ট্রেন ও লঞ্চ সেবা শুরু হওয়ায় খুব একটা ঝক্কিঝামেলায় পড়তে হচ্ছে না যাত্রীদের। সড়ক-মহাসড়কেও দীর্ঘ যানজট নেই। ট্রেনের টিকিট নিয়েও হাহাকার দেখা যায়নি। নেই অন্যবারের মতো শিডিউল বিপর্যয়। ফলে স্বস্তিতে প্রিয়জনদের কাছে যেতে পারছে বিপুলসংখ্যক মানুষ। এর আগে টানা ১০ দিনের এমন দীর্ঘ ঈদের ছুটি দেখা যায়নি। ফলে এবার এই ছুটিতে প্রিয়জনদের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে অনেকেই গ্রামের বাড়ি যাচ্ছেন।
গতকাল শেষ কর্মদিবসে ঘুরমুখী মানুষের স্রোত তৈরি হয় ঢাকা থেকে বের হওয়ার প্রতিটি পথে। ট্রেন, বাস ও লঞ্চের পাশাপাশি অনেকে ব্যক্তিগত গাড়ি, আবার কেউ কেউ ট্রাকে করেও ঢাকা ছাড়েন। বিকাল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত যাত্রীদের চাপ ছিল সবচেয়ে বেশি। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ঈদের আগপর্যন্ত যাত্রীদের এই চাপ অব্যাহত থাকবে। তবে স্বস্তিও মিলবে।
ঈদযাত্রায় ট্রেনের টিকিট অনলাইনে বিক্রি শুরু হয় গত ২৫ মে। ওইদিন বিক্রি হয় ৪ জুনের টিকিট। পশ্চিমাঞ্চলের আন্তঃনগর ট্রেনগুলোর টিকিট সকাল ৮টা থেকে বিক্রি শুরু হয়। তবে প্রথম ৩০ মিনিটে দুই কোটি ৭৬ লাখ হিট হয় টিকিটের জন্য। রেলওয়ে কর্মকর্তারা জানান, এবারের ঈদযাত্রায় যাত্রীর সবচেয়ে বেশি চাপ হয়েছে গতকাল বুধবার। নির্ধারিত সব ট্রেনে বিকাল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত যাত্রীবোঝাই ছিল। অনেকে স্ট্যান্ডিং টিকিট নিয়ে বগিতে দাঁড়িয়ে গেছেন। উপচেপড়া এই ভিড় আজ বৃহস্পতিবারও অব্যাহত থাকবে।
কমলাপুর রেলস্টেশনে প্ল্যাটফরমগুলোতে যাত্রীদের ভিড়। নির্ধারিত সময়ে একের পর এক ট্রেন ছেড়ে যাচ্ছে। অনেকে জানিয়েছেন, যানজটের শঙ্কায় আগেভাগে বেরিয়েছেন। কিন্তু রাস্তায় সেভাবে জটলা লাগেনি। ফলে নির্ধারিত সময়ের আগেই স্টেশনে পৌঁছে গেছেন। তবে ট্রেন সময়মতো ছাড়ায় স্বস্তি মিলেছে। এবার টিকিটের জন্যও হাহাকার ছিল না। এখন কেবল বাড়ি ফেরার অপেক্ষা।
ঈদযাত্রার ১০টি বিশেষ ট্রেন চালাচল গতকাল থেকে শুরু হয়েছে, যা ঈদের আগে-পরে ৯ দিন অব্যাহত থাকবে। এ সময় নিয়মিত আন্তঃনগর ট্রেনগুলো আগের মতোই চলবে। কয়েকজন যাত্রী জানান, বিশেষ ট্রেনে যারা আসন পেয়েছেন, তারা মহাখুশি। আর যারা আসনের টিকিট পাননি, তারা দাঁড়িয়ে যাচ্ছেন। ট্রেনে যাত্রীসংখ্যা অনেক থাকায় যে যেখানে পারছেন, সেখানে অবস্থান করছেন।
এ ছাড়া বিনা টিকিটে যাত্রী প্রবেশ ঠেকাতে বড় রেলস্টেশনগুলোতে কড়া প্রহরার ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। নাশকতা প্রতিরোধে চলন্ত ট্রেন, স্টেশন ও রেললাইনে তৎপরতা জোরদার করা হয়েছে। র্যাব, বিজিবি, স্থানীয় পুলিশ ও অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহযোগিতায় সন্দেহভাজনদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
এদিকে গতকাল রাজধানীর সায়েদাবাদ, মহাখালী, গাবতলী, গুলিস্তানসহ বিভিন্ন স্থান থেকে দূরপাল্লার বাস যাত্রীবোঝাই করে ছেড়েছে। পরিবহন সংশ্লিষ্টরা জানান, বিকাল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত বাসগুলোতে যাত্রীর চাপ সবচেয়ে বেশি ছিল। আজ বৃহস্পতিবারও এ অবস্থা অব্যাহত থাকবে।
সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনাল থেকে যাত্রীবোঝাই করে যথাসময়ে একের পর এক লঞ্চ ছেড়ে যাচ্ছে বিভিন্ন গন্তব্যে। হাঁকডাক দিয়ে যাত্রী টানছেন লঞ্চকর্মীরা। তারা বলছেন, এবার বাস-ট্রেনে যেভাবে যাত্রীর চাপ, সেভাবে লঞ্চে ভিড় নেই। তবে অন্যদিন থেকে গতকাল যাত্রীর চাপ ছিল সবচেয়ে বেশি। এই ধারা আজ বৃহস্পতিবারও অব্যাহত থাকবে।
ট্রেনের টিকিট অনলাইনে বিক্রি হওয়ায় অতিরিক্ত টাকা নেওয়ার অভিযোগ পাওয়া যায়নি। তবে বাস ও লঞ্চে নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে অতিরিক্ত টাকা নেওয়ার অভিযোগ মিলেছে। বিশেষ করে নন-ব্রান্ডের বাসে আর লঞ্চের কেবিনে ভাড়া বেশি নেওয়ার অভিযোগ সবচেয়ে বেশি পাওয়া গেছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রতিবারই ঈদের সময় স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে ভাড়া একটু বেশি নেওয়া হয়।
এদিকে গতকাল বিআরটিসি মতিঝিল আন্তর্জাতিক বাস ডিপোতে ঈদ স্পেশাল সার্ভিসের উদ্বোধন করেন সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সিনিয়র সচিব এহছানুল হক। ৬৩০টি বাস ঈদ স্পেশাল সার্ভিসে সংযোজন করা হয়েছে জানিয়ে এ সময় বিআরটিসি চেয়ারম্যান আব্দুল লতিফ মোল্লা বলেন, ঢাকাসহ সারা দেশের ২৬টি স্থান থেকে এই সার্ভিস পরিচালিত হবে। বিশেষ করে ঢাকা শহরের পোশাকশ্রমিক থেকে শুরু করে অন্য শ্রমজীবী মানুষের সহজে, স্বল্প খরচে ও নিরাপদে বাড়ি পৌঁছানো এবং বাড়ি থেকে আসার ব্যবস্থা করি আমরা।
ঈদের দিন মেট্রোরেল বন্ধ
পবিত্র ঈদুল আজহার দিন শনিবার মেট্রোরেল চলাচল বন্ধ থাকবে। গতকাল বুধবার ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের পরিচালক (প্রশাসক) একেএম খায়রুল আমিনের সই করা এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। এতে বলা হয়েছে, ঈদের পর দিন সকাল ৮টা থেকে ৩০ মিনিট হেডওয়ে অনুযায়ী মেট্রোরেল চলাচল করবে। ৯ জুন থেকে সরকারি ছুটির দিনের সময়সূচি অনুযায়ী মেট্রোরেল যথারীতি চলাচল করবে।
ছুটিতে খোলা থাকবে ফিলিং স্টেশন
ঈদের ছুটিতে ফিলিং স্টেশনগুলো সার্বক্ষণিক খোলা থাকবে বলে জানিয়েছে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়। এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ঈদের দিনসহ পরের পাঁচদিন সার্বক্ষণিক খোলা থাকবে সিএনজি-ফিলিং স্টেশনগুলো।
গত ৬ মে উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে নির্বাহী আদেশে ১১ ও ১২ জুন (বুধ ও বৃহস্পতিবার) ছুটির সিদ্ধান্ত হয়। গত ৭ মে ঈদুল আজহা উপলক্ষে আগামী ১১ ও ১২ জুন নির্বাহী আদেশে ছুটি ঘোষণা করে প্রজ্ঞাপন জারি করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। একই সঙ্গে ১৭ ও ২৪ মে সাপ্তাহিক ছুটির দিনে অফিস খোলা থাকবে বলেও প্রজ্ঞাপনে জানানো হয়। সে অনুযায়ী দুই শনিবার অফিস খোলা ছিল। আগামী ৫ জুন থেকে বন্ধ থাকছে সরকারি অফিস। ছুটি শেষে আগামী ১৫ জুন আবারও চালু হবে এসব অফিস।
এর আগে ঈদুল ফিতরেও ২৮ মার্চ থেকে ৫ এপ্রিল পর্যন্ত টানা ৯ দিন ছুটি ছিল। তবে কোরবানির ঈদে ছুটি আরো একদিন বেড়েছে।