গাজায় ইসরায়েলের ভয়াবহ বিমান হামলায় নিহত ৬২, নারী-শিশুসহ অগণিত আহত

লেখক:
প্রকাশ: ২ সপ্তাহ আগে
GAZA CITY, GAZA - MARCH 24: Palestinians mourn by the bodies of their loved ones, killed in an Israeli attack on Abu Akar household inShejaiya neighborhood, at Al Ahli Baptist Hospital in Gaza City, Gaza on March 24, 2025. Bodies of Palestinians killed in the attack are taken out of the Al Ahli Baptist hospital, wrapped in blankets, for burial. In Gaza City, four Palestinians were killed in two Israeli airstrikes on the eastern Shejaiya neighborhood. (Photo by Dawoud Abo Alkas/Anadolu via Getty Images)

আন্তর্জাতিক ডেস্ক রিপোর্ট: গাজা উপত্যকায় আবারও ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয়। গতকাল (২৭ জুন) রাতে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর চালানো একের পর এক বিমান হামলায় কমপক্ষে ৬২ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে রয়েছে বহু নারী ও শিশু, এমনকি আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থানরত বাস্তুচ্যুত সাধারণ মানুষও এই হামলার শিকার হয়েছেন।

এই হামলাগুলো মূলত গাজার দক্ষিণাঞ্চলের খান ইউনিস, জাবালিয়া এবং গাজা সিটি এলাকায় সংঘটিত হয়। হামলার লক্ষ্য ছিল বেশ কয়েকটি আবাসিক ভবন ও ঘনবসতিপূর্ণ শরণার্থী শিবির, যেগুলোয় বেসামরিক নাগরিকরা আশ্রয় নিয়েছিল। ইসরায়েল দাবি করছে, তারা হামাসের অবকাঠামো লক্ষ্য করেই আঘাত হেনেছে, তবে বাস্তব চিত্র বলছে, অধিকাংশ হতাহতই সাধারণ জনগণ।

গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, নিহতদের মধ্যে রয়েছে অন্তত ১৭ জন শিশু ও ১১ জন নারী। এছাড়া অর্ধশতাধিক মানুষ গুরুতর আহত অবস্থায় বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। অনেককে মাটিচাপা অবস্থায় উদ্ধার করতে হয়েছে, ধ্বংসস্তূপের নিচে এখনও নিখোঁজদের খোঁজে চলছে উদ্ধার অভিযান।

গাজায় চলমান সংঘর্ষের কারণে ইতিমধ্যেই ১০ লক্ষাধিক মানুষ গৃহহীন হয়েছেন। যেসব মানুষ নিজেদের বাড়ি হারিয়ে বিভিন্ন স্কুল ও আশ্রয় কেন্দ্রে অবস্থান করছেন, তাদের একটি বড় অংশই এই হামলায় আক্রান্ত হয়েছেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, হামলার সময় কোনো পূর্ব সতর্কতা ছিল না। ঘুমন্ত মানুষের ওপর বিমান থেকে বোমা বর্ষণ শুরু হয়, যা ছিল নিছক ‘বিপর্যয়’।

এই ভয়াবহ হামলার পর কাতার শান্তি প্রতিষ্ঠায় সক্রিয় ভূমিকা নিতে শুরু করেছে। দেশটি বর্তমানে ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে যুদ্ধবিরতির লক্ষ্যে মধ্যস্থতার কাজ করছে।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ইরান-ইসরায়েল সাম্প্রতিক উত্তেজনা কিছুটা প্রশমিত হওয়ায় এবং আন্তর্জাতিক চাপ বৃদ্ধির ফলে এখন একটি যুদ্ধবিরতির সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।

জাতিসংঘ, ওআইসি ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন এই হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে এবং অবিলম্বে সহিংসতা বন্ধ করে বেসামরিক নাগরিকদের রক্ষা করার আহ্বান জানিয়েছে। মানবাধিকার সংস্থাগুলো বলছে, গাজার বর্তমান পরিস্থিতি একটি “মানবিক বিপর্যয়ে” পরিণত হয়েছে।

খান ইউনিসের এক বাসিন্দা বলেন,

“আমার দুই সন্তান ও স্ত্রী একসাথে ঘুমাচ্ছিল। একটা মুহূর্তে চারদিক আলোয় ভরে যায়, তারপর শুধু ধ্বংস। আমি কাউকে খুঁজে পাইনি, শুধু ধুলো আর রক্ত।”

গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি হামলা নতুন নয়, কিন্তু সাম্প্রতিক এই হামলা তার ভয়াবহতা ও ধ্বংসযজ্ঞের মাত্রায় আগের সবকিছুকে ছাড়িয়ে গেছে বলে দাবি করছেন স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকরা। বর্তমান পরিস্থিতিতে যদি দ্রুত যুদ্ধবিরতি না হয়, তাহলে মৃতের সংখ্যা আরও বাড়বে, আর গাজায় এক ভয়াবহ মানবিক দুর্যোগ আরও গভীর হবে।

উৎস:
The Guardian
🔗 সূত্র লিংক